বেগুনের সেই কদর নেই

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রোজা শুরুর আগের দিন গতকাল শুক্রবার ঢাকার বাজারে সেরা মানের লম্বা বেগুনের দাম প্রতি কেজি ৬০ টাকা। গত বছরের রোজার দামের তুলনায় একেবারে অর্ধেক। শসা, কাঁচা মরিচ ও লেবুর দামও ক্রেতার নাগালের ভেতরেই।

অন্যান্য বছর রোজার সময় সবজির বাজারে যা হয়নি, তা এবার হচ্ছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যে দোকানপাট বন্ধ। বসবে না ইফতারির পসরাও। সাধারণ মানুষের আয় কমে গেছে, তাই বাসাবাড়ির ইফতারেও থাকবে না জাঁকজমক আয়োজন। এতে ইফতারির বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কমবে। আর চাহিদা কম থাকলে দাম বাড়বে কী করে!

বাজারে সবজির দাম কিছুটা কম বলে কি সাধারণ মানুষ খুব স্বস্তিতে আছে? উত্তর হলো, মোটেও না। কারণ, এ বছর চাল, ডাল, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন ও আদার মতো প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর দাম গত বছরের চেয়ে অনেকটাই বেশি। দাম বাড়লে এক কেজি বেগুন কিনতে মানুষের খরচ যতটুকু বাড়ত, তার চেয়ে অনেক বেশি খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে চাল-ডাল।

ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে গতকাল ক্রেতাদের বেশ ভিড় দেখা গেছে। রোজা শুরুর আগে গতকাল অনেক মানুষ ঘরের প্রয়োজনীয় কাঁচাবাজার সেরে ফেলেছেন। যদিও বাজারগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো বালাই দেখা যায়নি।

ঢাকার মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের কাঁচাবাজারে মানুষের গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে কেনাকাটা করা এড়াতে সবজির দোকান রাস্তায় বসানো হয়েছে। কিন্তু দুপুর ১২টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দোকানেই মানুষের ভিড় বেশি। যদিও কাজীপাড়া থেকে মিরপুর ৬ নম্বর সেকশন পর্যন্ত যেতে রাস্তায় তেমন কোনো মানুষ দেখা যায়নি। তবে কাজীপাড়া, ১০ নম্বর সেকশনের ফুটপাতসহ কয়েকটি স্থানে যেখানে সবজি-মাছ বিক্রি হচ্ছিল, সেখানে বেশ ভিড় চোখে পড়েছে।

মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বাজারে সবচেয়ে ভালো মানের তাজা লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছিল ৬০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া সাধারণ মানের বেগুন ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও পীরেরবাগের কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেগুন ৪০ থেকে ৬০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা এবং লেবু আকারভেদে ২৫ থেকে ৪০ টাকা হালি দরে বিক্রি হয়েছে।

৬ নম্বর বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, সবজির দাম কিছুটা বাড়তি। কিছুদিন আগে ক্রেতা ছিল না। রোজার কারণে এখন ক্রেতা কিছুটা বেড়েছে। তাই সবজির দামও কিছুটা বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগে বেগুনের কেজি ৪০ টাকা ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বিগত কয়েক বছরের বাজার চিত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, রোজার বাজারে ছোলা ও চিনির দাম একটু বেশি বাড়ে। আর বেগুন, শসা ও কাঁচা মরিচের দাম প্রথম কয়েক দিন বেশি থাকে। এরপর কমে যায়। এবার কিন্তু চাল, ডাল ও মসলাজাতীয় পণ্যের দামই বেশি।

দেশে ২০১৯ সালে রোজা শুরু হয় ৭ মে। ওই দিনের সঙ্গে গতকালের বাজার দর তুলনা করে দেখা যায়, এবার মোটা চালের দাম ৩০, মোটা দানার মসুর ডাল ৫০, খোলা সয়াবিন ১৫, চিনি ২৬, পেঁয়াজ ৯২, রসুন ৫৫, আদা ১০৮ ও গরুর মাংসের দাম গতবারের চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি।

সব মিলিয়ে বাজার খরচ অনেকটাই বেশি হচ্ছে বলে জানান কামরুল ইসলাম, যিনি মিরপুরের পীরেরবাগ বাজার থেকে কেনাকাটা করছিলেন। তিনি বলেন, বেগুনের দাম বাড়লে সেটা না কিনেও চলা যায়। চাল, ডাল না কিনলে কি আর সংসার চলবে?

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি শুরু হয়। এর পরপরই বাজারে সবজি, ডিম ও মুরগির দাম ব্যাপকভাবে কমে যায়। উল্টো দিকে বাড়তে থাকে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, রসুনের দাম। চাল-ডাল অবশ্য আগে থেকেই বাড়তি ছিল। এদিকে সরকার ছুটি আগামী ৫ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে। যদিও কিছুটা শিথিলতা আসায় পণ্যবাহী যান চলাচল বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবজি, মাছ ও অন্যান্য পণ্যের সরবরাহ আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে।

বিপরীতে বাজারে চাহিদাও বেড়েছে। একে তো রোজা শুরু, অন্যদিকে মানুষ ঘরে যে পণ্যসামগ্রী কিনে রেখেছিল, তা শেষের পথে। ফলে এখন আবার বাজারমুখী হতে হচ্ছে। এটাই বাড়তি ভিড়ের কারণ। আবার সীমিত সময় দোকান খোলা থাকায় একসঙ্গে বেশি মানুষের ভিড় হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।