এইচএসসি - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ২য় পত্র | অধ্যায় ৩ : সৃজনশীল প্রশ্ন

অধ্যায় ৩

সৃজনশীল প্রশ্ন

মি. সাব্বির একজন চা রপ্তানিকারক। ‘ন্যাচার টি’ নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি চা রপ্তানি করেন। বিদেশে আমাদের দেশের উৎপাদিত চায়ের প্রচুর চাহিদা থাকায় চা রপ্তানিতে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য তিনি বহিবিশ্বে বাজার সম্প্রসারণের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও চা রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী তিনি তাঁর কোম্পানির বিভিন্ন দেশের বিক্রয় ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং ৩০% বিক্রয় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সময় একটু বেশি লাগলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

প্রশ্ন

ক. বাজেট কী?

খ. পরিকল্পনা আঙিনা বলতে কী বোঝায়?

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত মি. সাব্বির প্রকৃতির ভিত্তিতে কোন ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন? বর্ণনা করো।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত মি. সাব্বির তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য বাজার সম্প্রসারণ ও সময়ের ওপর যে গুরুত্ব দিয়েছেন, তার যথার্থতা মূল্যায়ন করো।

উত্তর

ক. পরিকল্পনার সংখ্যাত্মক প্রকাশকে বাজেট বলে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ে একটি প্রতিষ্ঠানের সম্ভাবনা আয়–ব্যয় বা প্রাপ্তি প্রদানের আর্থিক পরিকল্পনাকে বাজেট বলে।

খ. ভবিষ্যৎ যেসব অবস্থার মধ্য দিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে পারে—তার সম্পর্কে পূর্বানুমান করাকে পরিকল্পনা আঙিনা বলে।

পরিকল্পনার সফলতা কতগুলো প্রাকৃতিক ও পারিপাশ্বিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে। পরিকল্পনাকে প্রভাবিত করতে পারে এমন সব অবস্থা ও উপাদান বিবেচনা করে ক্ষেত্র নির্ধারণ করাই হলো পরিকল্পনা আঙিনা।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বাজারে একটি নতুন পণ্য ছাড়া হবে, এ জন্য পণ্যটির চাহিদা, ক্রেতাদের রুচি, প্রতিযোগীর অবস্থা, ক্রয়ক্ষমতা যাচাই ইত্যাদি এর আওতাভুক্ত কাজ। পরিকল্পনা আঙিনা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা গেলে প্রতিষ্ঠান সহজেই লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। এ জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই পরিকল্পনার আঙিনা নির্ধারণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে বিবেচিত হয়।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত মি. সাব্বির প্রকৃতির ভিত্তিতে লক্ষ্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।

লক্ষ্য হলো কোনো পরিকল্পনার মূল অভিপ্রায় বা কাঙ্ক্ষিত ফল। অর্থাৎ কোনো প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা যে নির্ধারিত বা প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জনের উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়, তাকে লক্ষ্য বলে। লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে সমগ্র পরিকল্পনা প্রক্রিয়া আবর্তিত হয়। যেমন কোনো প্রতিষ্ঠানের ২০% বিক্রয় বৃদ্ধি করার পরিকল্পনাকে লক্ষ্য বলে অভিহিত করা যায়।

উদ্দীপকে বর্ণিত মি. সাব্বির ন্যাচার টি নামক একটি প্রতিষ্ঠানের চা রপ্তানিকারক। আমাদের দেশের উৎপাদিত চায়ের বিদেশে প্রচুর চাহিদা থাকায় চা রপ্তানিতে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য বহির্বিশ্বে বাজার সম্প্রসারণের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও চা রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী তিনি তাঁর কোম্পানির বিভিন্ন দেশের বিক্রয় ব্যবস্থাপকের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং ৩০% বিক্রয় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তাই বলা যায়, মি. সাব্বিরের কাজটি প্রকৃতির ভিত্তিতে লক্ষ্য পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মি. সাব্বির তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য বাজার সম্প্রসারণ ও সময়ের ওপর যে গুরুত্ব দিয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে যথার্থ।

প্রতিষ্ঠানের কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য ভবিষ্যতে কোন কাজ কে করবে, কী করবে, কখন করবে, কতটুকু সময়ের মধ্যে করা হবে ইত্যাদি নির্ধারণ করার অগ্রিম কর্মসূচি বা নকশা প্রণয়নের কাজকে পরিকল্পনা বলে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজগুলো কীভাবে করতে হবে, সেগুলো নির্দিষ্ট করাকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ বলে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়া উদ্দেশ্য অর্জন করা কঠিন। প্রতিষ্ঠানের যেকোনো উদ্দেশ্য অর্জন করতে হলে প্রথমেই সে সম্পর্কে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় বিধায় পরিকল্পনা হলো উদ্দেশ্য অর্জনের হাতিয়ারস্বরূপ।

উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য অনেকগুলো বিকল্প পন্থা নির্ধারণ করা হয়। পরিকল্পনার সম্ভাব্য উপায়গুলো থেকে সর্বোত্তম বিকল্প নির্বাচন করতে সহায়তা করে, যা উদ্দেশ্য অর্জনের পথকে সুগম করে। উদ্দীপকে মি. সাব্বির বাজার সম্প্রসারণ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার পেছনে অবশ্যই একটি পরিকল্পনা রয়েছে এবং সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। যেকোনো কাজের সাফল্য নিশ্চিত হয় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের মাধ্যমে, কেউ যদি তাঁর লক্ষ্য নির্ধারণে ব্যর্থ হয়, তবে সে কোনোভাবেই কার্যফল অর্জনে সক্ষম হবে না।

মি. সাব্বির চায়ের বাজার সম্প্রসারণের কথা ভাবছেন। এখন যদি তিনি কাঠামোগত একটি পরিকল্পনা ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে না যান, তাহলে তাঁর পক্ষে গৃহীত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন অসম্ভব। মি. সাব্বির দেখলেন তাঁর উৎপাদিত চায়ের বর্তমানে ব্যাপক চাহিদা। তাই তিনি বর্তমান সময়টাকে মূল্যায়ন করছেন এবং বাজার সম্প্রসারণের কথা ভাবছেন।

সুতরাং বলা যায়, মি. সাব্বির তাঁর উৎপাদিত চায়ের বাজার সম্প্রসারণের যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা যথার্থ বলে আমি মনে করি।

মো. মাজেদুল হক খান, সহকারী অধ্যাপক, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ঢাকা

গতকালের প্রকাশিত অধ্যায় ২ এর সৃজনশীল প্রশ্ন

পরবর্তী দিনের প্রকাশিত হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্র