* সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ বিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যায়-১৪ থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তরের নমুনা দেওয়া হলো।
ফারজানা গ্রীষ্মের ছুটিতে বাবা-মায়ের সঙ্গে খুলনায় নানার বাড়ি বেড়াতে গেল। নানার বাড়ি থেকে একদিন তারা সুন্দরবন বেড়াতে যায়। এই ভ্রমণে জায়গায় জায়গায় অকাতরে গাছ নিধনের চিহ্ন দেখে তার মন খারাপ হলেও সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সে মুগ্ধ হয়। সে এখানে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ, নানা প্রজাতির পাখি ও রংবেরঙের কীটপতঙ্গ দেখতে পেল। সে বাঘ দেখতে না পেলেও বাঘের গর্জন শুনেছিল এবং হরিণও দেখেছিল। এসব কিছু দেখে তার বাস্তুসংস্থানের কথা মনে পড়ল।
ক. খাদ্যশৃঙ্খল কাকে বলে?
খ. বিয়োজক বলতে কী বোঝায়?
গ. বাস্তুসংস্থানে বর্ণিত প্রাণী দুটির ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ফারজানার পর্যবেক্ষণকৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীগুলো কীভাবে বাস্তুসংস্থানে সম্পৃক্ত? বিশ্লেষণ করো।
উত্তর-ক
খাদ্যের উত্পাদক থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ খাদক পর্যন্ত শৃঙ্খল আকারে খাদ্য ও খাদকের যে সরল ধারাবাহিকতা থাকে তাকে খাদ্যশৃঙ্খল বলে।
উত্তর-খ
পরিবেশে যেসব অণুজীব, বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক যারা মৃত উদ্ভিদ ও মৃত প্রাণীর দেহের ওপর ক্রিয়া করে তাদের বিয়োজক বলে। বিয়োজকের ক্রিয়ার ফলে মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। ফলে মৃতদেহ ক্রমেই বিয়োজিত হয়ে নানা রকম জৈব ও অজৈব দ্রব্যাদিতে রূপান্তরিত হয়।
উত্তর-গ
বাস্তুসংস্থানে বর্ণিত প্রাণী দুটি হলো বাঘ ও হরিণ। হরিণ প্রথম শ্রেণির খাদক এবং বাঘ দ্বিতীয় শ্রেণির খাদক। হরিণ বনের ঘাস ও ছোট গাছপালা খায় এবং বাঘ হরিণকে খেয়ে বেঁচে থাকে। এখন যদি ওই বাস্তুসংস্থানে বাঘ না থাকত তবে সেখানে হরিণের সংখ্যা অনেক বেড়ে যেত। ফলে সেখানে ঘাস জাতীয় উদ্ভিদের অভাব দেখা দিত। আবার যদি হরিণ না থাকত তবে বাঘও খাবারের অভাবে মারা যেত। কিন্তু ঘাস জাতীয় উদ্ভিদের সংখ্যা ও পরিমাণ বেড়ে যেত। সুতরাং বাস্তুসংস্থানে সব উপাদানের ভারসাম্য রক্ষায় প্রাণী দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
উত্তর-ঘ
কোনো নির্দিষ্ট পরিবেশে জীব ও জড় বস্তুর মধ্যে গড়ে ওঠা নিবিড় আত্মসম্পর্ককেই বাস্তুসংস্থান বলে।
বাস্তুসংস্থানকে জড় ও জীব দুটি উপাদানে ভাগ করা যায়। জড় উপাদানের মধ্যে আছে অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, সূর্যের আলো ইত্যাদি। আবার জীব উপাদানকে উত্পাদক, খাদক ও বিয়োজক তিনটি অংশে ভাগ করা যায়। যেসব উদ্ভিদ নিজের খাদ্য নিজেরা তৈরি করতে পারে তাদের বলা হয় উত্পাদক। উত্পাদককে যারা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে তাদের বলা হয় প্রথম স্তরের খাদক। প্রথম স্তরের খাদককে যারা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে তারা দ্বিতীয় স্তরের খাদক। ফারজানার পর্যবেক্ষণকৃত বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ উত্পাদক, বানর, পোকামাকড়, হরিণ প্রথম স্তরের খাদক এবং বিভিন্ন পাখি, বাঘ দ্বিতীয় স্তরের খাদক হিসেবে কাজ করে থাকে। মৃতজীবী ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া বিয়োজক হিসেবে কাজ করে থাকে। এভাবে জীব ও জড় উপাদানের আত্মসম্পর্কের কারণে ওই স্থানে বসবাসের উপযোগী পরিবেশ গড়ে ওঠে। সুতরাং ফারজানার পর্যবেক্ষণকৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীগুলো বাস্তুসংস্থানে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত।
প্রভাষক
রূপনগর মডেল স্কুল ও কলেজ, ঢাকা