শিক্ষকের অভিমত-২
কিশোর-শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশে জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষার গুরুত্ব অনেক
জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা আবার শুরু হতে যাচ্ছে। অবশ্য এ উদ্যোগ ঘিরে বিভক্ত মত রয়েছে শিক্ষাবিদদের মধ্যে। এই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকদের অভিমত ছাপা হচ্ছে শিক্ষায়
জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক মূল্যায়ন, যা প্রাথমিক শিক্ষা শেষে কিশোর বয়সের শিক্ষার্থীদের প্রতিভা, কঠোর পরিশ্রম এবং সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি প্রদান করে। তাদের আরও বেশি লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করতে অনুপ্রাণিত করে থাকে।
এই পরীক্ষাটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের মধ্যে একটি সেতু হিসেবে কাজ করে প্রাতিষ্ঠানিক উত্কর্ষতাকে উত্সাহিত করে। প্রতিটি শিক্ষার্থীদের মনের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলে। এটি যে কেবল জ্ঞানের মূল্যায়ন তাই-ই নয় বরং শিক্ষার্থীদের তাদের শিক্ষাযাত্রায় উচ্চতর লক্ষ্য অর্জনে অনুপ্রাণিত করার একটি প্ল্যাটফর্মও।
বৃত্তি পরীক্ষার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকার মধ্যে একটি হলো এটি শিক্ষার্থীদের ছোটবেলা থেকেই দৃঢ় লেখাপড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত করে। এই পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ধারাবাহিক প্রচেষ্টা, শৃঙ্খলা এবং নিষ্ঠার প্রয়োজন, যা কিশোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলে। জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে তৈরি এই অভ্যাসগুলো প্রায়ই তাদের ভবিষ্যতের একাডেমিক এবং পেশাগত সাফল্যকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে উত্সাহিত করে।
শিক্ষাজীবনের প্রাপ্ত সাফল্য অন্য শিক্ষার্থীদের জন্যও হয়ে ওঠে অনুপ্রেরণার উত্স যা তাদের অনেক মনোযোগী হতে এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি বিনির্মাণের পথকে সহজ করবে। মেধাবীদের সহজেই শনাক্তকরণ করতে ভূমিকা পালন করে এই পরীক্ষা, যা অনেক সময় আরও অনেক শিক্ষার্থীর মনে আশা ও সাহস জোগাতে পারে।
এই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে পাওয়া বৃত্তি যোগ্য-শিক্ষার্থীদের মূল্যবান আর্থিক সহায়তা প্রদান করে, যা অনেক পরিবারে বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় বা নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোয় এই অর্থনৈতিক-প্রাপ্তি বিদ্যালয়ের ইউনিফর্ম এবং বিদ্যালয়ের দরকারি শিক্ষাগত খরচ মেটাতে সহায়তা করে, তা ছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি অর্জন একটি গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে, আর্থিক সীমাবদ্ধতার প্রবল চাপ থেকে মুক্ত হয়ে তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বৃত্তি অর্জনের সঙ্গে পাওয়া ‘স্বীকৃতি’ এবং ‘উত্সাহ’। একজন কিশোর শিক্ষার্থী যখন তার কঠোর পরিশ্রমের জন্য স্বীকৃতি পায়, তখন এটি তাদের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি করে এবং আরও উচ্চ লক্ষ্য নির্ধারণ ও সেই লক্ষ্য অর্জনে নিজেদের আত্মনিয়োগ করতে অনুপ্রাণিত করে তোলে। বৃত্তি পরীক্ষার এই যে স্বীকৃতি তা কেবল শিক্ষার্থীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি তাদের পরিবার, বিদ্যালয় এবং নিজস্ব সমাজের জন্যও গর্ব এবং প্রেরণার উত্স হয়ে থাকে, গেঁথে থাকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনের ভেতরে।
শিক্ষাজীবনের এই পর্যায়ে প্রাপ্ত সাফল্য অন্যান্য শিক্ষার্থীদের জন্যও হয়ে ওঠে অনুপ্রেরণার এক অনন্য উত্স যা তাদের অনেক বেশি মনোযোগী হতে এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি বিনির্মাণের পথকে সহজ করবে। মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহজেই শনাক্তকরণ করতে ভূমিকা পালন করে এই পরীক্ষা, যা অনেক সময় বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে আরও অনেক শিক্ষার্থীর মনে আশা ও সাহস জোগাতে পারে।
এই বৃত্তি পরীক্ষা শুধু যে শিক্ষার্থীদের মাঝেই প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি করে তাই-ই নয়; বরং অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝেও প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করে, ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে উত্সাহিত করে, যা প্রকৃতপক্ষে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতিতে বিশেষ অবদান রাখে।
তা ছাড়া, জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতার মানসিকতা সৃষ্টি করে; জাগিয়ে তোলে তাদের মনের ভেতর নিহিত সুপ্ত প্রতিভা। জ্ঞানের রাজ্যে শুধু বিচরণই নয়; জ্ঞানের সীমানা অতিক্রম করে নতুন নতুন দক্ষতা শিখতে উত্সাহিত করে। শুধু বাংলা, ইংরেজি এবং গণিতের মতো মূল বিষয়গুলোতেই নয়, সমস্যা সমাধান, জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর- দক্ষতাসহ সমালোচনমূলক চিন্তা-ভাবনায় পারদর্শী করে তুলতে সহায়তা করবে এ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। এই দক্ষতাগুলোই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের শিক্ষাগত ও পেশাগত জীবনের সাফল্যের দ্বার উন্মোচন করতে অপরিহার্য হিসেবে দেখা দিবে।
সার্বিক অর্থে বৃত্তি পরীক্ষা ভবিষ্যতে একটি মেধাবী-দক্ষ-শিক্ষার্থী তৈরির জাতীয় লক্ষ্যে অবদান রাখতে ভূমিকা পালন করবে। কিশোর শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে এবং তাদের দেশের জাতীয় সম্পদে পরিণত করতে জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা আমাদের দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করতে চাই।
জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা শুধু একটি পরীক্ষা নয়—এটি আমাদের জাতির ভবিষ্যতের জন্য একটি বিনিয়োগ। এই পরীক্ষা শ্রেষ্ঠত্বকে পুরস্কৃত করে, আর্থিক স্বস্তিও প্রদান করে, প্রতিভাকে লালন করে এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে অনুপ্রাণিত করে। কিশোর প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের সাফল্য অর্জনের স্বীকৃতি প্রদান এবং তাদের উত্সাহিত করে আমরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে শুধু শক্তিশালীই নয়; একটি উজ্জ্বল সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের ভিত্তি স্থাপনে এই বৃত্তি পরীক্ষা অপরিসীম ভূমিকা পালন করবে।
লেখা: মো. জসিম উদ্দীন বিশ্বাস, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ, ঢাকা