বিকেএসপিতে নারী ফুটবলার-ক্রিকেটার তৈরির উদ্যোগ

জাতীয় নারী ক্রিকেট দলে বিকেএসপির মেয়েরা
ছবি : সংগৃহীত

প্রায় ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিকমানের খেলোয়াড় তৈরি করে আসছে বাংলাদেশে ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)। খেলোয়াড় তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠানটিতে আছে উন্নত অবকাঠামো, সুন্দর পরিবেশ ও দক্ষ কোচিং স্টাফ। যেখানে বেড়ে উঠে বিশ্ব ক্রিকেট মাতাচ্ছেন সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমদের মতো ক্রিকেটাররা।

শুধু ক্রিকেট নয়, সব খেলাতেই আছে খেলোয়াড় তৈরির কারখানার ছাত্রছাত্রীদের প্রাধান্য। ফুটবলে উঠে এসেছেন মাসুদ রানা, হাসান আল মামুন, ফিরোজ মাহমুদ, মামুনুল ইসলামের মতো তারকারা; যাঁরা দীর্ঘ সময় দেশের ফুটবলে পতাকা বহন করেছেন। হকিতে আছেন মামুনুর রশিদ, রাসেল মাহমুদরা।

নারী খেলোয়াড় তৈরিতেও পিছিয়ে নেই প্রতিষ্ঠানটি। অ্যাথলেটিকসে ফৌঁজিয়া জুঁই, সাঁতারে মাহফুজা আক্তার শিলা, শুটিংয়ে শারমিন আক্তার-জাকিয়া সুলতানারা দেশের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন।

বর্তমানে জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের নাহিদা নাহিন, রাবেয়া খান, মুর্শিদা খাতুনরা এই প্রতিষ্ঠানেরই। ক্রিকেটার মুর্শিদা তো কয়েক দিন আগে ইএসপিএন ক্রিকইনফো ভবিষ্যৎ নারী ক্রিকেট তারকার ছোট তালিকাতেও উঠে এসেছেন। এছাড়া ফুটবলে আছেন আঁখি খাতুন, ঋতুপর্ণা চাকমা; আন্তর্জাতিক আর্চারিতে নিশানা ভেদ করতে জুড়ি নেই দিয়া সিদ্দিকীরও।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুবই ক্রীড়া বান্ধব। তাঁর প্রত্যাশা ছেলেদের মতো মেয়েরাও ক্রীড়াঙ্গনে এগিয়ে যাক। সে জন্যই বড় লক্ষ্য নিয়ে এবার বিশেষভাবে শুধু নারী খেলোয়াড় তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৪০০ মেয়েকে বিদেশি দক্ষ কোচের অধীনে রেখে দীর্ঘ মেয়াদে অনুশীলন করাতে চায় বিকেএসপি
কর্নেল এ কে এম মাজহারুল হক, পরিচালক (প্রশিক্ষণ), বিকেএসপি

এবার প্রতিষ্ঠানটি আলাদাভাবে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি ও আর্চারিতে নারী খেলোয়াড় তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। যার পোশাকি নাম ‘বিকেএসপি প্রমীলা প্রশিক্ষণার্থীদের উন্নয়ন’ প্রকল্প। এর আওতায় প্রাথমিকভাবে ৪০০ খেলোয়াড় বাছাই করে তিন মাসের অনুশীলনের সুযোগ দেওয়া হবে। সেখান থেকে আবার সেরা ২০০ নারী খেলোয়াড়কে দেওয়া হবে দেড় বছরের অনুশীলন। বিকেএসপির এই কর্মসূচির প্রশংসা করেছে ফেডারেশনগুলো।

জাতীয় দলের ফুটবলার আঁখি খাতুন
ছবি : সংগৃহীত

খেলাসমূহ ও বয়সের ধাপ

ক্রিকেট, ফুটবল, হকি ও আর্চারি এই চারটি ইভেন্টে খেলোয়াড় বাছাই করা হবে। ক্রিকেট ও ফুটবলে ১২ থেকে ১৪ ও ১৫ থেকে ১৭ দুইটি বয়সভিত্তিক ধাপে খেলোয়াড় বাছাই করবে। এছাড়া হকিতে ১৪ থেকে ১৮ ও আর্চারিতে ১৪ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েদের খুঁজছে বিকেএসপি।

খেলোয়াড় বাছাইয়ের স্থান ও সময়

আটটি বিভাগীয় শহরে বিকেএসপির কোচেরা উপস্থিত থেকে খেলোয়াড় বাছাই করবেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম (৫ ডিসেম্বর), সিলেট (৭ ডিসেম্বর), রংপুর (১০ ডিসেম্বর), খুলনা (১২ ডিসেম্বর) ও বরিশালে (১৯ ডিসেম্বর) বিকেএসপি আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলোতে হবে বাছাই পরীক্ষা। রাজশাহী বিভাগে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়াম (১২ ডিসেম্বর) ও ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে (১৪ ডিসেম্বর) হবে এই দুই বিভাগের বাছাই প্রক্রিয়া। এছাড়া সব শেষে ২২ ডিসেম্বর ঢাকা সাভারস্থ বিকেএসপির মূল কেন্দ্রে হবে ঢাকা বিভাগের পরীক্ষা। নির্ধারিত দিনগুলোতে সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বাছাই প্রক্রিয়া চলবে। প্রতিযোগীকে খেলোয়াড়ি সরঞ্জাম, পূরণকৃত ফরম ও জন্ম নিবন্ধন (সত্যায়িত) নিয়ে উপস্থিত থাকতে হবে।

আবেদন পদ্ধতি

বিকেএসপির নিজস্ব ওয়েবসাইটে http://bksp.gov.bd/ তে গিয়ে অনলাইনে নিবন্ধনের সুযোগ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে অনলাইনে নিবন্ধনের পূর্বে ফরম ফি বাবদ জনপ্রতি বিকেএসপির উত্তরা ব্যাংক শাখায় (মহাপরিচালক বিকেএসপি, সঞ্চয় হিসাব-৭৩৩) যে কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে ডিডি/পে অর্ডার স্লিপ অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের সময় আপলোড করতে হবে। বাছাইয়ের দিন জমা স্লিপ/ডিডি/পে অর্ডারের মূল কপি নিবন্ধন ফরমের সঙ্গে জমা দিতে হবে।

তবে যারা অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারবেন না, তাদের জন্য বিকল্প সুযোগ রাখা হয়েছে। বাছাই পরীক্ষার দিন নগদ একশত টাকার সঙ্গে দুই কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজ ছবি জমা দিয়ে ফরম পূরণ করে বাছাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।

বিকেএসপি পরিচালক (প্রশিক্ষণ) কর্নেল এ কে এম মাজহারুল হক
ছবি: সংগৃহীত

একজন চারটি খেলার বাছাইয়ে অংশ নিতেপারবে

একজন প্রতিযোগীর জন্য চারটি খেলার বাছাই পরীক্ষাতেই অংশগ্রহণের সুযোগ রেখেছে বিকেএসপি। যেন একটিতে ব্যর্থ হলেও অন্যটিতে নিজের মেধার যাচাই করতে পারেন। এক্ষেত্রে ধাপে ধাপে একটি করে পরীক্ষা শেষ করতে হবে। তবে প্রতিটি খেলার জন্য প্রয়োজন হবে ভিন্ন ভিন্ন ফরম।

বিকেএসপির পরিচালক (প্রশিক্ষণ) কর্নেল এ কে এম মাজহারুল হক বলেন ,‘ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই ক্রীড়া বান্ধব। তাঁর প্রত্যাশা ছেলেদের মতো মেয়েরাও ক্রীড়াঙ্গনে এগিয়ে যাক। তাঁর নির্দেশনা ছিল মেয়েদের দক্ষ খেলোয়াড় হিসেবে তৈরি হওয়ার সুযোগ বাড়াতে হবে। সে জন্যই বড় লক্ষ্য নিয়ে এবার বিশেষভাবে শুধু নারী খেলোয়াড় তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৪০০ মেয়েকে বিদেশি দক্ষ কোচের অধীনে রেখে দীর্ঘ মেয়াদে অনুশীলন করাতে চায় বিকেএসপি । যারা ভবিষ্যতে দেশকে গর্বিত করতে পারবেন।’

আরও পড়ুন