এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরাও পেতে যাচ্ছেন বদলির সুযোগ

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়প্রথম আলো ছবি

দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার পর অবশেষে এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরাও (সরকার থেকে বেতনের মূল অংশ পাওয়া শিক্ষক) বদলির সুযোগ পেতে যাচ্ছেন। তবে এমপিওভুক্ত সবাই এই সুযোগ পাবেন না। কেবল বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সুপারিশে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকেরাই এ সুযোগ পাবেন। এ বিষয়ে ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষক বদলি নীতিমালা ২০২৪’–এর খসড়া প্রণয়ন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর সভা করে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।

সারা দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী আছেন পাঁচ লাখের মতো। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে বেতনের মূল অংশ ও কিছু ভাতা পেয়ে থাকেন। বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা নেই। এক প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করে সেখান থেকেই অবসর নিতে হয় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের। একসময় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরিভাবে নিজেদের উদ্যোগে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিত। কিন্তু এখন কেন্দ্রীয়ভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠান এনটিআরসিএর অধীন অনুষ্ঠিত পরীক্ষার মাধ্যমে এসব পদে নিয়োগ পাওয়া যায়। আগে এই পরীক্ষায় পাস করার পর একটি নিবন্ধন সনদ দেওয়া হতো। তারপর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান আলাদা পরীক্ষা নিয়ে এসব নিবন্ধনধারীদের মধ্যে থেকে নিয়োগ দিত। তবে সেই জায়গায় পরিবর্তন করে এখন এনটিআরসিএ প্রতিষ্ঠান ঠিক করে সুপারিশ করে দেয়।

আরও পড়ুন
খসড়া নীতিমালায় বদলির ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতামূলক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘বদলির আবেদন অধিকার বা সুযোগ হিসেবে দাবি করা যাবে না। বদলির জন্য কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংগঠনের সুপারিশ শৃঙ্খলাজনিত অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। বদলির জন্য বদলি হওয়া শিক্ষক কোনো ভাতা পাবেন না।
শিক্ষক
প্রতীকী ছবি

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, এ ধরনের শিক্ষক আছেন এক লাখের বেশি। মন্ত্রণালয়ের যুক্তি হলো, যেহেতু এসব শিক্ষক এনটিআরসিএর সুপারিশে, মানে সরকারের ঠিক করে দেওয়া প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেয়েছেন, তাই আপাতত তাঁদের বিষয়টিই বদলির জন্য বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এমপিওভুক্ত অন্য শিক্ষকেরা যেহেতু নিজেদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেয়েছেন, তাই তাঁদের আপাতত বদলির বিবেচনায় রাখা হয়নি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নীতিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, এনটিআরসিএর প্রথম গণবিজ্ঞপ্তি থেকে সংস্থাটির সুপারিশে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকেরাই বদলির সুযোগ পাবেন। সমপদে ও সমস্কেলে বদলির জন্য এই নীতিমালা প্রযোজ্য হবে। প্রতিবছরের ১৬ অক্টোবর থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বদলির আবেদন নিষ্পত্তি করা হবে।

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগটি ভালো। কিন্তু এটি এমপিওভুক্ত সব শিক্ষকের জন্য করতে হবে। সবার জন্য না করে শুধু এনটিআরসিএর সুপারিশ পাওয়া শিক্ষকদের জন্য করলে নতুন করে বৈষম্যের সৃষ্টি হবে
মো. শাহজাহান, সাধারণ সম্পাদক, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের
আরও পড়ুন

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির আবেদন আহ্বান, গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করবেন। প্রয়োজন হলে তিনি এই ক্ষমতা অধস্তন দপ্তরে অর্পণ করতে পারবেন। বদলির পুরো প্রক্রিয়াটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। মাউশি বদলির আবেদন ফরম ও সফটওয়্যার তৈরি করবে।

আরও পড়ুন

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, ‘বদলির আদেশ জারি হওয়ার পর শিক্ষকেরা বদলি করা প্রতিষ্ঠানপ্রধানের কাছে যোগদানপত্র পেশ করবেন। তারপর প্রতিষ্ঠান যোগদানপত্র গ্রহণ করে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করবেন। বদলির পরিপ্রেক্ষিতে এমপিওভুক্ত অংশের (সরকারি অংশ) বেতন, অন্যান্য আর্থিক সুবিধা এবং জ্যেষ্ঠতার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।’

এই বদলির ক্ষেত্রে এনটিআরসিএর আবেদনে উল্লেখিত স্থায়ী ঠিকানা থেকে দূরত্ব বিবেচনায় যিনি যত দূরে চাকরিরত আছেন, তিনি বদলির জন্য অগ্রাধিকার পাবেন। তবে নারী শিক্ষক-কর্মচারীরা স্বামী বা নিজের স্থায়ী ঠিকানায় বদলি হতে পারবেন। একই পদে একাধিক ব্যক্তি বদলি হওয়ার পর আগ্রহী হলে এনটিআরসিএর মেধাক্রম, জ্যেষ্ঠতা ও স্থায়ী ঠিকানা থেকে কর্মস্থলের দূরত্বের ভিত্তিতে আবেদনটি বিবেচনা করা হবে। নিয়োগ পাওয়ার পর যেসব শিক্ষকের চাকরি দুই বছর পূর্ণ হবে, তারা বদলির আবেদন করতে পারবেন। পারস্পরিক বদলির আবেদনে উভয় প্রার্থীর সম্মতি থাকলে বদলির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। তবে পদ শূন্য না থাকলে বদলির কোনো আবেদনই বিবেচনা করা হবে না।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

খসড়া নীতিমালা এই বদলির ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতামূলক নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, ‘বদলির আবেদন অধিকার বা সুযোগ হিসেবে দাবি করা যাবে না। বদলির জন্য কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংগঠনের সুপারিশ শৃঙ্খলাজনিত অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। বদলির জন্য বদলি হওয়া শিক্ষক কোনো ভাতা পাবেন না। বদলির আদেশ জারির সাত দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান বদলি হওয়া শিক্ষকের অবমুক্তি (রিলিজ) নিশ্চিত করবেন। অন্যথায় অষ্টম দিনে বদলি করা শিক্ষক সরাসরি অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন। আর যোগদানপত্র দেওয়ার সাত দিনের মধ্যে তা গ্রহণ করতে হবে।’

জানতে চাইলে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগটি ভালো। কিন্তু এটি এমপিওভুক্ত সব শিক্ষকের জন্য করতে হবে। সবার জন্য না করে শুধু এনটিআরসিএর সুপারিশ পাওয়া শিক্ষকদের জন্য করলে নতুন করে বৈষম্যের সৃষ্টি হবে।’

আরও পড়ুন