খেলার বিকেএসপি পড়াশোনায়ও ভালো করছে
সকাল ও বিকেলে মাঠে ঘাম ঝড়ানো। অনুশীলনে নিজের পারফরম্যান্সকে ছাড়িয়ে যাওয়ার অদম্য চেষ্টা ও কোচের মন জয় করার তাড়না। নিজেকে তৈরি করে প্রতিযোগিতার মঞ্চে গিয়ে প্রতিপক্ষকে হারানোর মানসিক যুদ্ধ। দিনের পর দিন এমন পরিশ্রম আর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শরীরে জমতে থাকে ক্লান্তির পাহাড়। এমন দৈনন্দিন জীবনে তাঁদের জন্য বইয়ের পাতায় চোখ রাখার কাজটি তো বড্ড কঠিন।
বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের জীবনের গল্পের টাইমলাইনটা এমনই। তবু সব ক্লান্তিকে হার মানিয়ে বইয়ের পাতায় চোখ রাখেন তাঁরা। খেলোয়াড় তৈরির কারখানার ছেলেমেয়েরা নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছেন বোর্ড পরীক্ষাতেও। সাম্প্রতিক সময়ে বোর্ড পরীক্ষার ফলাফলে চোখ বোলালে বলাই যাচ্ছে, খেলার প্রতিষ্ঠান বিকেএসপি পড়াশোনায়ও ভালো করছে।
ঢাকা বোর্ডের অধীন সর্বশেষ ঘোষিত উচ্চমাধ্যমিক এইচএসসি পরীক্ষায় খেলার মাঠের মতো পরীক্ষাতেও সাড়া ফেলেছে বিকেএসপি। বোর্ড অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির পাসের হার ৯২ দশমিক ৪৫ শতাংশ । ১৬১ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছেন ১৪৭ জন। ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রথমবারের মতো শীর্ষ দশের তালিকায় উঠে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি। ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি আছে সপ্তম স্থানে।
তবে বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী ১৬১ জন হলেও প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ১৫৬ শিক্ষার্থী। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য শেষ মুহূর্তে তিনজন পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। সে হিসাব অনুযায়ী ১৫৬ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন ১৪৭ জন। এতে পাসের গড় হিসাব দাঁড়াচ্ছে ৯৪ দশমিক ২৩ শতাংশ।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি থেকে জিপিএ–৫ পেয়েছেন ৬ জন। তাঁরা হলেন ক্রিকেট বিভাগের নাভিদ আল হাসান, মেহরাব হাসান ও জান্নাতুল ফেরদৌস; অ্যাথলেটিকস বিভাগের মাসুম মোস্তফা, টেবিল টেনিস বিভাগের জয় ইসলাম ও বাস্কেটবল বিভাগের শাহরিয়ার। তাঁদের মধ্যে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছেন বাস্কেটবলের শাহরিয়ার। তারকা খেলোয়াড়দের মধ্যে থেকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন দুই আর্চার অলিম্পিয়ান সাগর ইসলাম ও এশিয়া কাপে স্বর্ণজয়ী আবদুর রহমান আলিফ।
একটা সময় বিকেএসপির ট্যাগলাইন ছিল—এখানে শুধু খেলার জন্যই আসেন ছেলেমেয়েরা। বাস্তবতা মেনে নিয়ে পড়াশোনার প্রতি জোর দিয়েছেন প্রশাসকেরা। কলেজের শিক্ষকেরা তো অবশ্যই এখন কোচরাও মাঠে তাঁদের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছেন।
ছাত্রছাত্রীরা যে এইচএসসি পরীক্ষার জন্য নিরবচ্ছিন্ন প্রস্তুতি নিতে পারেন, তার সব প্রস্তুতিই গ্রহণ করেছিল বিকেএসপি। প্রতিষ্ঠানটির ছাত্রছাত্রীরা সারা বছর খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। সেই ক্ষত পুষিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষে থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। মানসিক অবসাদ দূর করার জন্য বান্দরবান লামার কোয়ান্টাম সেন্টারে পাঠানো হয় শিক্ষা সফরে। ঈদের সময়েও খোলা রাখা হয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম। আয়োজন করা হয় বিভিন্ন মডেল টেস্ট। শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে চাঙা রাখার জন্য মহাপরিচালকের পক্ষে থেকে ঈদের সময় ব্যবস্থা রাখা হয় তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী খাবারও। সবকিছু মিলিয়ে এর সুফল আসে বোর্ড পরীক্ষায়।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ লে. কর্নেল মোহাম্মদ ইমরান হাসান বলেন, ‘ঈদে কেন ক্যাডেট ছুটিতে যেতে পারেনি, এটা ছিল মহাপরিচালক মহোদয়ের একটা দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। সন্তানতুল্য ক্যাডেটদের সঙ্গে তিনি নিজেও ঈদ করেছিলেন। নিয়মিত ক্লাস, মডেল টেস্ট, উত্তরপত্রের মূল্যায়ন দেখে পূর্ণাঙ্গ আগ্রহ ফিরে পায় ক্যাডেটরা, পরীক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন করা হয় মোটিভেশনাল ক্লাস।’