যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেসব কারণে ঘুরে দেখা উচিত
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু শিক্ষার কেন্দ্র নয়, এগুলো একেকটি জীবন্ত শহরের মতো। এখানে রয়েছে ইতিহাস, সংস্কৃতি, শিল্পকলা ও বিনোদনের সম্ভার। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোয় লুকিয়ে আছে এক বিশেষ ‘শুধুমাত্র আমেরিকায়’ অভিজ্ঞতা।
শরতের ঠান্ডা হাওয়া ও পাতা ঝরার মৌসুমে যখন লাখো শিক্ষার্থী কলেজে ফিরে আসেন, তখন এই ক্যাম্পাসগুলো প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। আলাদা শহরের মতো গড়ে ওঠা এসব ক্যাম্পাসে রয়েছে নিজস্ব রেস্তোরাঁ, ঐতিহাসিক স্থাপনা, জাদুঘর, পার্ক ও দর্শনীয় স্থান, যা সাধারণ পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত।
ফুটবল স্কুল: খেলাধুলার উন্মাদনা ও ঐতিহ্য
আগস্ট থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শুরু হয় কলেজ ফুটবলের মৌসুম। এই সময়ে স্টেডিয়ামগুলো ভরে যায় হাজারো দর্শকে। ফুটবল এখানে শুধু খেলা নয়, এটি এক সংস্কৃতি। খেলার আগে হয় বিশাল ‘টেইলগেট পার্টি’—যেখানে শিক্ষার্থী, প্রাক্তন ছাত্র ও স্থানীয় লোকজন একসঙ্গে বসে গান, খাবার ও উৎসবে মাতেন।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়: যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় কলেজ ফুটবল স্টেডিয়াম ‘দ্য বিগ হাউস’-এর আসনসংখ্যা ১,০৭,০০০। প্রাক্তন ছাত্র ক্লারেন্স ওয়ার্ডেল বলেন, ‘ফাইট সং গাওয়া, মার্চিং ব্যান্ডের সুর, একসাথে চিৎকার—সব মিলিয়ে এটি এক প্রায় আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা।’
পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি: এখানে প্রতিবছর একবার হয় বিখ্যাত ‘হোয়াইট আউট গেম’, যেখানে লক্ষাধিক দর্শক সাদাপোশাক পরে একসঙ্গে গর্জে ওঠে। আতশবাজি, আলো ও সংগীত মিলিয়ে তৈরি হয় এক চমকপ্রদ পরিবেশ।
আইভি লিগ বিশ্ববিদ্যালয়: ইতিহাস, স্থাপত্য ও জ্ঞানের ভান্ডার
উত্তর-পূর্ব যুক্তরাষ্ট্রের আটটি মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়—আইভি লিগ-শুধু শিক্ষার জন্য নয়, ইতিহাস ও স্থাপত্যের জন্যও বিখ্যাত। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই রয়েছে জাদুঘর, গ্রন্থাগার ও পার্ক, যা সবার জন্য উন্মুক্ত।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি: ১৬৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত, এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে দেখা যায় হার্ভার্ড মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্টরির বিস্তৃত সংগ্রহ—ফসিল, রত্ন, জীবাশ্ম ও প্রাকৃতিক নিদর্শন। কাছেই রয়েছে আর্নল্ড আর্বোরেটাম, ২৮১ একর জায়গাজুড়ে বিশ্বজুড়ে গাছপালার সমাহার।
প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি: মনোমুগ্ধকর পাথরের ভবন, সবুজ পরিবেশ এবং বিপুল ইতিহাসে ভরপুর এই ক্যাম্পাস একসময় ছিল মার্কিন বিপ্লব যুদ্ধের যুদ্ধক্ষেত্র। নাসাউ হলো ভবনটি একসময় যুক্তরাষ্ট্রের অস্থায়ী রাজধানী ছিল। প্রিন্সটনের আর্ট মিউজিয়ামে প্রাচীন মিশরীয় নিদর্শন থেকে শুরু করে অ্যান্ডি ওয়ারহলের আধুনিক চিত্রকর্ম পর্যন্ত রয়েছে।
ইয়েল ইউনিভার্সিটি: গথিক স্থাপত্য, রেয়ার বুক লাইব্রেরি ও জাদুঘরসমৃদ্ধ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থিয়েটার, সংগীত ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিখ্যাত পিবডি মিউজিয়ামে দেখা যায় ডাইনোসরের কঙ্কাল এবং বিশ্বের নানা প্রান্তের সাংস্কৃতিক নিদর্শন।
ঐতিহাসিকভাবে কৃষ্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়: সংস্কৃতি ও সংগ্রামের ইতিহাস
দাসপ্রথার যুগে আফ্রিকান-আমেরিকানদের শিক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে ১৮৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম HBCU-চেইনি ইউনিভার্সিটি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ১০৭টি ঐতিহাসিক কৃষ্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যা কেবল শিক্ষার নয়, সাংস্কৃতিক আন্দোলনেরও কেন্দ্র।
মোরহাউস কলেজ: মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ও অভিনেতা স্যামুয়েল এল জ্যাকসনের মতো বিশিষ্টদের শিক্ষালয়। ক্যাম্পাসের কিং চ্যাপেলে রয়েছে ছয় হাজার পাইপ অর্গান ও কিংয়ের স্মৃতিস্তম্ভ। প্রতিবছর এখানে অনুষ্ঠিত হয় ‘মানবাধিকার চলচ্চিত্র’ উৎসব।
টাস্কেগি ইউনিভার্সিটি: বুকার টি ওয়াশিংটনের প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠান জাতীয় ঐতিহাসিক স্থানে পরিণত হয়েছে। এখানে রয়েছে জর্জ ওয়াশিংটন কারভার মিউজিয়াম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাধিক্ষেত্র, যেখানে সমাহিত রয়েছেন কারভার ও ওয়াশিংটন দুজনই।
হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটি: এখানে অনুষ্ঠিত ‘হোমকামিং’ উৎসব পুরো সম্প্রদায়কে একত্র করে। প্যারেড, নাচ, সংগীত আর ‘স্টেপ শো’-সমন্বিত নাচের প্রদর্শনী—সবই উন্মুক্ত থাকে দর্শকদের জন্য।
ফুটবল মাঠের গর্জন, ঐতিহাসিক ভবনের ছায়া, কিংবা আফ্রিকান-আমেরিকান সংস্কৃতির নৃত্য-মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পর্যটকদের জন্য হয়ে উঠতে পারে নতুন এক গন্তব্য। এখানে প্রতিটি ক্যাম্পাস একেকটি গল্প, যেখানে শিক্ষার সঙ্গে মিশে আছে আমেরিকার প্রাণ, ঐতিহ্য ও বৈচিত্র্য।