মার খাওয়ার পর এবার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ঢাবি প্রক্টরকে ছাত্রলীগ নেত্রীর চিঠি

ফাল্গুনী দাস
ছবি: সংগৃহীত

সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও হল পর্যায়ের দুই জ্যেষ্ঠ নেত্রীর মারধরের শিকার হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের নেত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। তাঁকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন প্রক্টর।

গত ২১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ ও বঙ্গবন্ধু টাওয়ার এলাকায় ওই মারধরের ঘটনা ঘটে।

মারধরের শিকার নেত্রী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী দাস। মারধর করার অভিযোগ ওঠা দুই নেত্রী হলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেনজীর হোসেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা।

ঘটনার পর অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ নেত্রী বেনজীর ও জিয়াসমিন দাবি করেন, ‘বেয়াদবি’ করায় তাঁরা ফাল্গুনীকে ‘শাসন’ করেছেন।

এ ঘটনার জেরে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানীকে চিঠি দিয়েছেন ফাল্গুনী।

প্রক্টরকে দেওয়া চিঠির বিষয়ে ফাল্গুনী আজ মঙ্গলবার দুপুরের দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিঠিতে আমি গত ২১ ডিসেম্বরের ঘটনাটি তুলে ধরেছি। আমাকে মারধর করা জিয়াসমিন ও বেনজীর ছাড়াও মারধরে সহযোগী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা শাহজালালের নাম উল্লেখ করে জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছি। প্রক্টর সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আগে প্রক্টরকে ঘটনাটি লিখিতভাবে অবহিত করার অংশ হিসেবেই এই চিঠি দিয়েছি।’

বেনজীর হোসেন ও জিয়াসমিন শান্তা
ছবি: সংগৃহীত

জানতে চাইলে প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাল্গুনী দাসের নিরাপত্তাবিষয়ক পত্রটি পেয়েছি। তাঁকে আমরা সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি। চিঠি গ্রহণের পরপরই ফাল্গুনীকে কিছু জরুরি ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে। যেখান থেকে তাঁকে দ্রুত সহায়তা করা হবে। এ ছাড়া দুজন সহকারী প্রক্টরের সঙ্গে তাঁকে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। কোনো কিছু সন্দেহজনক মনে হলে আমাদের জানাতে বলেছি। শিক্ষার্থীদের কেউ জড়িত থাকলে আমরা (বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন) আমাদের মতো করে ব্যবস্থা নেব। আর বাইরের কেউ হলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মারধরের ওই ঘটনায় ছাত্রলীগ আনুষ্ঠানিক কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি। তবে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ব্যক্তিগতভাবে তদন্ত করছেন।

জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘আমরা (সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) দুজন টিম হয়ে ঘটনাটি তদন্ত করছি। অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। একটা কথাই বলব, এভাবে শাসন করাটা আসলে সমীচীন নয়।’

মারধরের ঘটনার বিষয়ে ফাল্গুনী গত ২৩ ডিসেম্বর প্রথম আলোকে বলেছিলেন, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় তিনি বেনজীরের ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশের অভিযোগ সম্পর্কে কিছু কথা বলেছিলেন। কোনো একটি মাধ্যমে সেটি জানতে পেরে ২১ ডিসেম্বর রাত ১২টার দিকে তাঁকে ফোন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সামনে যেতে বলেন বেনজীর। সেখানে তাঁর সঙ্গে জিয়াসমিনও ছিলেন। তাঁকে নানা জিজ্ঞাসাবাদ ও মুঠোফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা। একপর্যায়ে তাঁরা তাঁকে মারতে উদ্যত হলে তিনি সেখান থেকে দৌড়ে চলে আসার চেষ্টা করেন। বেনজীর ও জিয়াসমিন তাঁকে পেছন থেকে ধাওয়া করেন। আইন অনুষদের কাছে বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের সামনে তাঁরা তাঁকে ধরে ফেলেন। মাটিতে ফেলে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। তাঁরা তাঁর মুখও খামচে দেন। রাস্তায় পড়ে গিয়ে তাঁর হাত, পা ও মাথায় আঘাত লাগে। বেনজীরের অনুসারী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা শাহজালাল তাঁর মুঠোফোনটি ছিনিয়ে নেন। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ও দায়িত্বরত পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন