প্রশ্ন :
‘শহিদ বুদ্ধিজীবী’ দিবস কবে? কেন এটি পালন করা হয়?
উত্তর: শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস হলো ১৪ ডিসেম্বর। ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত শিক্ষক, শিল্পী, সাংবাদিক, চিকিত্সক ও কবি- সাহিত্যিকদের স্মরণে দিনটি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করা হয়।
প্রশ্ন :
যৌথবাহিনী কবে গঠিত হয় এবং এর নেতৃত্বে কে ছিলেন?
উত্তর: ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী মিলে গঠিত হয় যৌথবাহিনী। যৌথবাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন মিত্রবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা।
প্রশ্ন :
পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিল কোথায় স্বাক্ষর হয় এবং কারা এ দলিলে স্বাক্ষর করেন?
উত্তর: ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে যৌথবাহিনীর পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এবং পাকিস্তানের পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন।
প্রশ্ন :
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবে পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেন এবং স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন?
উত্তর: ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেন এবং ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।
প্রশ্ন :
শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস বলতে কী বোঝ? কোন তারিখে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়? শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের ৪টি কারণ লেখো।
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে দেশকে মেধাশূন্য করার পরিকল্পনা নেয় পাকিস্তানি বাহিনী। সেই পরিকল্পনা অনুসারে ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের নৃশংসভাবে হত্যা করে। বুদ্ধিজীবী হত্যার চূড়ান্ত দিনটিকে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ পালন করা হয়।
শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের ৪টি কারণ —
১. শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া
২. তাঁদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করা
৩. মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের অবদানের কথা নতুন প্রজন্মকে জানানো
৪. বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে দেশপ্রেম জাগানো
প্রশ্ন :
অপারেশন সার্চলাইট কী? কার নির্দেশে এটি পরিচালিত হয়? পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে ৪টি বাক্য লেখো।
উত্তর: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে একযোগে আক্রমণ করে অসংখ্য নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। এই আক্রমণের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার নির্দেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এ আক্রমণ চালায় ২৫ মার্চ রাতে।
পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে নিচে দেওয়া হলো:
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ২৫ মার্চ রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, ইপিআর সদর দপ্তর পিলখানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও শিক্ষকদের বাসভবনসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে একযোগে আক্রমণ করে। সেই ভয়াল রাতে হানাদার বাহিনী দেশের অন্য বড় বড় শহরেও আক্রমণ চালিয়ে ছাত্র-শিক্ষক, পুলিশ ও ইপিআর সদস্যসহ অসংখ্য নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। যা গণহত্যার শামিল। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ বাঙালি শহীদ হন।
প্রশ্ন :
১৯৭১ সালের বাঙালি জাতির গৌরবময় ঘটনা কোনটি? কত সাল থেকে পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালির ওপর অত্যাচার ও নিপীড়ন শুরু করে? মুক্তিযুদ্ধের তাত্পর্য ৪টি বাক্য লেখো।
উত্তর: ১৯৭১ সালের ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ’ বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গৌরবময় ঘটনা। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালির ওপর শুরু করে অত্যাচার ও নিপীড়ন।
মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য লেখা হলো:
১. মুক্তিযুদ্ধের ফলেই পৃথিবীর বুকে আজ আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন দেশ।
২. মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে আমরা পেয়েছি নিজস্ব একটি ভূখণ্ড, একটি নিজস্ব পতাকা।
৩. আমরা পেয়েছি স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার।
৪. পরাধীনতা থেকে আমরা মুক্ত হতে পেরেছি।
প্রশ্ন :
কত সালে বাঙালিরা ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে? আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ কীভাবে শুরু হয়? এমন ৪টি ঘটনার কথা উল্লেখ করো, যা মুক্তিযুদ্ধ সংঘটনে ভূমিকা রেখেছিল?
উত্তর: ১৯৫২ সালে বাঙালিরা ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়।
আমাদের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ সংঘটনে ভূমিকা রেখেছে এমন চারটি ঘটনা হলো—
১. ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন।
২. ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান।
৩. ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় হওয়ার পরও ক্ষমতা না দেওয়া।
৪. ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নারকীয় গণহত্যা ও বাঙালিদের প্রতিরোধ।
প্রশ্ন :
মুক্তিবাহিনী কবে গঠিত হয়েছিল? মুক্তিযোদ্ধাদের প্রিয় স্লোগান কী ছিল? বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বসূচক উপাধি সম্পর্কে লেখো।
উত্তর: ১৯৭১ সালের ১১ জুলাই মুক্তিবাহিনী গঠিত হয়।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রিয় স্লোগান ছিল ‘জয় বাংলা’।
মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার বীরত্বসূচক রাষ্ট্রীয় উপাধি প্রদান করেন। মুক্তিযুদ্ধে অসমসাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করে শহিদ হয়েছেন এমন সাতজনকে সর্বোচ্চ ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধি প্রদান করা হয়। এ ছাড়া সাহসিকতা এবং ত্যাগের জন্য আরও তিনটি উপাধি দেওয়া হয়েছে। উপাধিগুলো হলো: বীর–উত্তম,বীর–বিক্রম, বীর–প্রতীক।
প্রশ্ন :
মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ভূমিকা কী ছিল? সাধারণ মানুষ কীভাবে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন?
উত্তর: বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে নারীর ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক নারী প্রশিক্ষণ নিয়ে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। আবার অনেক নারী খাদ্য, আশ্রয় এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ করতে প্রেরণা জুগিয়েছেন। এ দেশের সাধারণ মানুষ নানাভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন। পুরুষেরা সরাসরি সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। অনেকেই গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছেন। এ দেশের মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
রাবেয়া সুলতানা, শিক্ষক, বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল, ঢাকা