প্যাসকেল ত্রিভুজের সারি নির্ণয়ের নতুন ফর্মুলা (পর্ব-১)

গণিত ইশকুলে বছরজুড়ে গণিত শিখি

প্যাসকেল ত্রিভুজের বিভিন্ন প্যাটার্নকোলাজ: পড়াশোনা গ্রাফিক্স

প্যাসকেল ত্রিভুজ! তোমরা অনেকেই হয়তো এই নামের সঙ্গে পরিচিত। তবে অনেকেই হয়তো পরিচিত নয়। তাই চলো প্রথমে একটু প্যাসকেল ত্রিভুজের সঙ্গে পরিচিত হয়ে নিই। তোমরা একটু নিচের চিত্রটি লক্ষ করো।

এখানে দেখো সংখ্যাগুলো একটি ত্রিভুজের মতো তৈরি করেছে। এটিই হচ্ছে প্যাসকেল ত্রিভুজের একটি অংশ। এখানে প্যাসকেল ত্রিভুজের প্রথম পাঁচটি সারি দেখানো হয়েছে। তোমরা যদি সারিগুলোর দিকে একটু ভালোভাবে লক্ষ করো, তাহলে বুঝতে পারবে সারিগুলো কীভাবে তৈরি হয়েছে। প্রতিটি সারিগুলোর প্রথমে এবং শেষে 1 আছে এবং মাঝের সংখ্যাগুলো আগের সারির পাশাপাশি দুটি সংখ্যার যোগফলের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। তাহলে আমরা এই সিকুয়েন্স থেকে বলতে পারছি যে ৫ম সারি হবে: 1 5 10 10 5 1। এভাবে তুমি ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম যত ইচ্ছা, তত নম্বর সারি বের করতে পারবে। কিন্তু এ জন্য তোমার আগের সবগুলো সারি বের করে নিতে হবে, যেটি কিনা খুবই কষ্টকর কাজ। তবে সরাসরি n-তম সারি বের করারও একটি ফর্মুলা আমাদের কাছে আছে। সেটি হচ্ছে—

Kakon Bishwas

মানুষ এত দিন পর্যন্ত প্যাসকেলের n-তম সারি বের করার এই ফর্মুলাই জানতো। তবে কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের চারজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী মিলে আমরা এই প্যাসকেল ত্রিভুজের n-তম সারি বের করার নতুন ফর্মুলা উদ্ভাবন করেছি, যেটি কিনা একটি আন্তর্জাতিক Q1 জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। জার্নালের লিঙ্ক এই লেখার শেষ পর্বে দিয়ে দেব আগ্রহীরা চাইলে পেপারটি পড়ে দেখতে পারো। তবে আজকে আমি মূলত এই নতুন ফর্মুলা দিয়ে কীভাবে কাজ করে, সেটি নিয়ে একটু হিন্টস দেব। এই ফর্মুলার প্রমাণ এখানে দেখাব না, তবে তোমাদেরকে অনুরোধ করব তোমরা যেন পেপার থেকে প্রমাণটি দেখে নাও। তাহলে ভূমিকা শেষ করে চলো মূল কোথায় আসি।

আরও পড়ুন

আমরা ওপরের আলোচনায় প্যাসকেল ত্রিভুজের মোট ছয়টি সারি দেখেছি। তবে এই ছয়টি সারি আমরা আরেকভাবেও বের করতে পারি। যেমন:

শূন্যতম সারি: 110 = 1

১ম সারি: 111 = 11

২য় সারি: 112 = 121

৩য় সারি: 113 = 1331

৪র্থ সারি: 114 = 14641

এখানে লক্ষ করো 111 = 11 এর ডিজিটগুলো আলাদা করে লিখলে প্রথম সারি পাওয়া যায়। একইভাবে 112 = 121 এর ডিজিটগুলো আলাদাভাবে লিখলে দ্বিতীয় সারি পাওয়া যায়। অর্থাৎ আমরা প্রথম পাঁচটি সারি কিন্তু 11 এর পাওয়ার 0, 1, 2, 3, 4 দিয়ে ডিজিটগুলো আলাদা করেই পেতে পারি। তবে পঞ্চম সারি যদি বের করতে যাই, তখন 115 = 161051 । কিন্তু আমাদের পঞ্চম সারিটি হচ্ছে 15101051, যেটি কিনা 115 এর সমান নয়। তবে আমাদের ফর্মুলা অনুযায়ী এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। আমরা যদি এ ক্ষেত্রে 11 না নিয়ে 101 এর পাওয়ার 5 নিই এবং দুটি করে ডিজিট আলাদা করি, তাহলে আমরা ঠিক পঞ্চম সারি পাব। যেমন: 1015 = 10510100501।

আরও পড়ুন

আমরা যদি 10510100501 কে ডান দিক থেকে দুই ডিজিট করে আলাদা করি, তাহলে পাই—

1 05 10 10 05 01, যেটি কিনা পঞ্চম সারি। এভাবে আমরা অষ্টম সারি পর্যন্ত যেকোনো সারিকে 101 এর পাওয়ার নিয়ে দুই ডিজিট হিসাবে আলাদা করে বের করতে পারব। যেমন:

1011 = 101 ডান থেকে দুই ডিজিট হিসাবে আলাদা করলে হবে: 1 01 (প্রথম সারি)।

1012 = 10201 ডান থেকে দুই ডিজিট হিসাবে আলাদা করলে হবে: 1 02 01 (দ্বিতীয় সারি)।

এখানে তোমরা তাহলে একটি ব্যাপার বুঝতে পেরেছ যে 11 এর মাঝে কয়টা শূন্য দিতে হবে এবং কতগুলো ডিজিট নিয়ে আলাদা করতে হবে, সেটি সারি নম্বরের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনটি কীভাবে হয়, সেটি তোমরা একটু নিজেরা বের করার চেষ্টা করে দেখতে পারো। আমরা পরবর্তী পর্বে দেখব আসলে কোনো ফর্মুলা বের করা সম্ভব কি না, যার মাধ্যমে আমরা সারি নম্বর থেকে বের করতে পারব যে কতগুলো শূন্য 11 এর মাঝে দিতে হবে এবং এরপর আবার কতগুলো ডিজিট হিসাবে আলাদা করলে আমরা n-তম সারি পাব। পরবর্তী কোনো একদিন আবার চলে আসব তোমাদের মাঝে।

আরও পড়ুন