গানের রাজ্যে যুদ্ধের দামামা

গ্যাংনাম স্টাইল
গ্যাংনাম স্টাইল

সাঁইজি তাঁর সাম্রাজ্য হারিয়েছেন, ইন্দ্রজালের ব্যাপক বিস্তারের কল্যাণে এই খবর এখন অনেকটাই পুরোনো। প্রবল প্রতাপে পাঁচ বছর রাজত্ব করে তিনি হার মানলেন উইজ খলিফা ও চার্লি পুথের কাছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ‘সি ইউ অ্যাগেইন’ নামের যৌথ বাহিনী নিয়ে তাঁরা সাঁইয়ের রাজ্যে আগ্রাসন চালিয়েছেন। তবে উইজ খলিফা বা চার্লি পুথ কেউই খুব একটা শান্তিতে নেই লুইস ফনসির আর ড্যাডি ইয়াঙ্কির উত্থানে। ‘দেসপাসিতো’ নামে তাঁদের যৌথ বাহিনী ‘ধীরে ধীরে’ একের পর এক রাজ্য জয় করে হাত বাড়িয়েছে খলিফার সাম্রাজ্যের দিকে। তবে আশার কথা, এটি কোনো ভূমি দখলের লড়াই নয়। কথা হচ্ছে ইউটিউবে সর্বাধিক দেখা ভিডিও নিয়ে। সাঁইয়ের ‘গ্যাংনাম স্টাইল’ এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে এটি সে সময় ইউটিউবের প্লে কাউন্টারের কোড ধারণক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছিল। বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে দেখার কারণে ইউটিউবের প্লে কাউন্টারের (২১৪,৭৪, ৮৩,৬৪৭) কোড নতুন করে লিখতে হয়েছিল। গ্যাংনাম জ্বরে আক্রান্ত হয়নি এমন সংগীতপ্রেমী খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশে যে এর কতগুলো সংস্করণ ইউটিউবে প্রকাশিত হয়েছে, তার সঠিক হিসাব পাওয়া কঠিন। তবে এসবই এখন ইতিহাস।

দেসপাসিতো
দেসপাসিতো

গতকাল দুপুর পর্যন্ত ‘সি ইউ অ্যাগেইন’ দেখা হয়েছে ২,৯৬,০৩,০০,১০৭ বার আর গ্যাংনাম স্টাইল দেখা হয়েছে ২,৯১,১২,৬৫,৬৫৯ বার। উইজ খলিফা ইউটিউবে যাত্রা শুরু করেন ২০০৭ সালে। তিনি নিজেও কখনো ভাবেননি সাফল্য এভাবে তাঁকে ধরা দেবে। বরং তাঁর আশা ছিল, বড়জোর হাজার দশেক লোক তাঁর মিউজিক ভিডিও দেখবে। বলা বাহুল্য, তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। চার্লি পুথ ‘সি ইউ অ্যাগেইন’ রচনা করলে ইউনিভার্সাল মিউজিকের অনুরোধে ফিউরিয়াস ৭ সিনেমার জন্য গানটিতে সুর ও কণ্ঠ দেন উইজ খলিফা। প্রয়াত জনপ্রিয় অভিনেতা পল ওয়াকারের স্মরণে সিনেমার শেষ দৃশ্যের এই গানটিতে দেখা যায় কিছু রাস্তা একসঙ্গে গাড়ি চালিয়ে হাসি বিনিময়ের পর দুই বন্ধু পল ওয়াকার ও ভিন ডিজেলকে যার যার পথে চলে যেতে। ২০১৫ সালে এটি ছিল বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রীত গান, যা একই সঙ্গে গ্রামি ও অস্কার মনোনয়ন লাভ করে। প্রকাশের প্রথম ছয় মাসেই ‘সি ইউ অ্যাগেইন’ ইউটিউবে দেখা হয় এক বিলিয়নের বেশি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এটি দেখা হয় দুই বিলিয়নের বেশি বার।

সি ইউ অ্যাগেইন
সি ইউ অ্যাগেইন

তবে ‘সি ইউ অ্যাগেইন’-এর এই সাফল্য খুব দীর্ঘ সময় স্থায়ী হবে বলে মনে হয় না। প্রকাশের মাত্র ছয় মাসের মাথায় ২.৫ বিলিয়নের বেশি দেখা হয় ‘দেসপাসিতো’। দেসপাসিতো অর্থ ‘ধীরে ধীরে’ হলেও এই গতি কারও থেকে কম নয়। স্প্যানিশ ও ইংরেজির মিশ্রণে গাওয়া এই গানটি গতকাল পর্যন্ত দেখা হয়েছে ২,৮০,৮৪,২৪,২২৪ বার। এর জনপ্রিয়তার আরেকটি মাপকাঠি হলো এর বাংলা প্যারোডি ‘দেশবাসিতো’। কোনো এক গুণী বাংলাদেশির করা এই প্যারোডিটি ইউটিউবে দেখা হয়েছে ৪০,৭৮,০২৬ বার। দেশবাসিতোর এই সাফল্য বাংলাদেশের যেকোনো জনপ্রিয় শিল্পীর ঈর্ষার কারণ হতেও পারে।

তবে ইউটিউব সাম্রাজ্যে এই তিন গানের যেটিই প্রথম স্থান অধিকার করুক না কেন, ইউনিভার্সাল মিউজিকের জন্য এটি একটি দারুণ ব্যাপার। কেননা, তিনটি গানেরই স্বত্ব রয়েছে এই কোম্পানির।

 * মীর আহসান হাবীব
গার্ডিয়ান ও ইউটিউব অবলম্বনে