খোলা আকাশের নিচে গাইবে আট ব্যান্ড

ব্যান্ড সংগীতের জনপ্রিয় এই দলগুলোকে পাওয়া যাবে বিগ রক ডে কনসার্টে
ব্যান্ড সংগীতের জনপ্রিয় এই দলগুলোকে পাওয়া যাবে বিগ রক ডে কনসার্টে

একটা সময় ঢাকায় ওপেন এয়ার কনসার্ট হতো নিয়মিত। ভেন্যুও ছিল বেশ কয়েকটি। শোয়ের ক্ষেত্রে মাত্র ৫০ থেকে ১০০ টাকায় মিলত টিকিট। তরুণ–তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সী সংগীতপ্রেমীরা ভিড় করতেন সেসব কনসার্টে। এখন খোলা আকাশের নিচে আগের মতো কনসার্ট তেমন হয় না। ভেন্যু সমস্যার কারণে বিশেষ দিবসের কিছু অনুষ্ঠান আয়োজকেরা চাইলেও করতে পারেন না। তবে শীতের শুরুতেই ব্যান্ডপ্রেমী তরুণদের জন্য রয়েছে সুখবর। ২১ ডিসেম্বর ঢাকার পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের বসুন্ধরা আইসিসিবি এক্সপো জোনে বসছে ওপেন এয়ার কনসার্ট ‘বিগ রক ডে’।

ব্লুজ কমিউনিকেশনন্সের আয়োজনে ‘বিগ রক ডে’ কনসার্টে গাইবে দেশের আটটি ব্যান্ড। দলগুলো হলো নগরবাউল জেমস, ভাইকিংস, নেমেসিস, আরবোভাইরাস, পাওয়ার সার্জ, অ্যাভয়েড রাফা, ট্রেইনরেক ও কনক্লুশন।

এ কনসার্টে অংশ নিচ্ছেন তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় গানের দল নেমেসিস। দলটির অন্যতম সদস্য জোহাদ মনে করেন, টিকিট কেটে কনসার্টে গান শুনবে এই রীতিটাই অনেকে ভুলে যেতে বসেছেন। নিজের কৈশোরের দিনে ফিরে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা প্রপার একটা কনসার্ট। ২০০ টাকায় টিকিট কিনতে হবে। ছোটবেলায় নিজেরা যেমন টিকিট কিনে কনসার্টে যেতাম, এটাও তেমনই। আজকাল তো গান শোনার জন্য টাকা দিতে চায় না অনেকেই। ওপেন এয়ার কনসার্ট অনেক বেশি বেশি হওয়া উচিত।’

ব্যান্ডের বেশির ভাগ দলনেতা একবাক্যে স্বীকার করেছেন, ওপেন এয়ার কনসার্টের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন বড় মাঠ। সারা দেশে এসব মাঠের ভাড়াও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। মাত্রাতিরিক্ত ভাড়ার কারণে ওপেন এয়ার কনসার্টের আয়োজন করা অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। মোটা অঙ্কের টাকা প্রয়োজন হওয়ায় ওপেন এয়ার কনসার্টগুলোর আয়োজন এখন কেবল বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোই করতে পারে। ভাইকিংস ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য তন্ময় বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, ওপেন এয়ার কনসার্টের আগের সময়টায় ফিরে পেতে। বামবাও শক্ত অবস্থানে। টিকিট কনসার্ট হতে হবে, এই চর্চা আগে ছিল, এখন নাই। মানুষকে দোষ দিয়ে লাভ নাই। মানুষকে যেভাবে অভ্যস্ত করানো হবে, তাঁরা সেভাবেই তৈরি হবেন। দোষ হয়তো আমাদের।’

২০১৭ সালে একই জায়গায় ওপেন এয়ার কনসার্টের আয়োজন করে ব্লুজ কমিউনিকেশন্স। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘এখন টাকা দিয়ে কনসার্টে গান শোনার চল একেবারে নেই বললেই চলে। আমরা দেশের শিল্পীদের নিয়ে ওপেন এয়ার কনসার্টের সেই সোনালি দিনে ফিরে যেতে চাই। গানপ্রেমী তরুণ–তরুণীদের সেই প্ল্যাটফর্ম দিতে চাই। এখন ভেন্যু নেই, আর্মি স্টেডিয়াম সবচেয়ে চমৎকার জায়গা। এক্সপো জোনের ব্যয় বহন করা কষ্টসাধ্য। এটা কিন্তু অনেক বড় একটা ইন্ডাস্ট্রি। শিল্পীরা ছাড়াও অনেক লোক এখানে কাজ করেন। আমাদের অনেক শিল্পী আছেন, তাঁদের বাঁচিয়ে রাখতে হলে ওপেন এয়ার কনসার্টের ভেন্যু দরকার। ভেন্যুর কারণে অনেক সৃজনশীল অনেক কিছুর বিকাশ ঘটানো সম্ভব হচ্ছে না। টিকিট শোতে শিল্পীরাও লাভবান হন। ইনডোরে কতজনই–বা শো দেখতে যান।’

রাজধানী ঢাকার কমলাপুর স্টেডিয়াম, আর্মি স্টেডিয়াম, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, মিরপুর শেরেবাংলা নগর স্টেডিয়াম, রাওয়া ক্লাব মাঠ, ধানমন্ডি মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স, মোহাম্মদপুর শারীরিক শিক্ষা কলেজ মাঠ, কলাবাগান মাঠে আগে নিয়মিত ওপেন এয়ার কনসার্ট হতো। এখন কোনো কোনো মাঠ শুধুই খেলার জন্য বরাদ্ধ। ঢাকার বাইরের অবস্থা আরও কঠিন বলে মনে করেন ব্যান্ড সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ। ভেন্যুসংকটের পাশাপাশি নিরাপত্তাজনিত সমস্যা এবং ক্ষেত্রবিশেষে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবেও কমে গেছে খোলা মাঠের কনসার্ট।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় গত বছর দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে বেশ কয়েকটি ওপেন এয়ার কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়। গান বাংলা চ্যানেলের আয়োজনে সেসব কনসার্টে দেশের শিল্পীদের সঙ্গে বিদেশি যন্ত্রশিল্পীরা বাজিয়েছিলেন।