এ প্রশ্ন আমাকে অনেকেই করেন
ফ্যামিলি ম্যান টু সিরিজে আবারও দাপুটে অভিনয় করলেন বলিউড অভিনেতা মনোজ বাজপেয়ি। তবে সফলতায় গা ভাসিয়ে না দিয়ে আরও চ্যালেঞ্জ নিতে চান তিনি। পর্দার বাইরে সাদামাটা জীবনে বিশ্বাসী এই বলিউড তারকাকে বলা যায়, আপাদমস্তক ‘ফ্যামিলি ম্যান’। শুধু পর্দার মনোজ নয়, পর্দার বাইরের মনোজও ধরা দিলেন বৃষ্টিভেজা এক আড্ডায়। প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধির সঙ্গে তিনি কথা বললেন পর্দা ও পর্দার বাইরের জীবন নিয়ে।
প্রশ্ন :
যেকোনো সিরিজের দ্বিতীয় মৌসুমের সফলতা নিয়ে একটা খটকা থাকে। ‘ফ্যামিলি ম্যান টু’ ব্যতিক্রম। বাংলাদেশের দর্শকও পছন্দ করেছেন।
দেশের বাইরেও অনেকে পছন্দ করছেন শুনে ভালো লাগল। তবে আমরা কখনোই ভাবিনি, এতটা সাড়া পাব। প্রথম মৌসুম প্রকাশ হওয়ার আগেই আমরা দ্বিতীয় মৌসুমের চেন্নাই সিডিউল শেষ করে ফেলি। তখনো আমরা বুঝতে পারিনি যে প্রথম মৌসুম এত সফল হবে। দ্বিতীয় মৌসুমের ট্রেলার মুক্তির আগে আমরা সবাই একটু নার্ভাস ছিলাম। প্রথম মৌসুমের মতো দ্বিতীয় মৌসুম কি সবাই পছন্দ করবে?
প্রশ্ন :
রাজ ও ডিকের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
রাজ ও ডিকে দুজনই নতুন কিছু করার নেশায় মেতে থাকেন। পরপর দুটি মৌসুমের চূড়ান্ত সফলতার পরও তাঁদের মধ্যে এতটুকু পরিবর্তন আসেনি। তাঁরা দুজনই মাটিতে পা রেখে চলতে ভালোবাসেন। রাজ ও ডিকে দুজন শুধু ভালো পরিচালক নন, মানুষ হিসেবেও দারুণ। দুজন খুবই ভদ্র। আমি এ রকম পরিচালক আর ভালো মানুষদের সঙ্গে বারবার কাজ করতে চাইব।
প্রশ্ন :
এই সফলতার পেছনে কি সামান্থা আক্কিনেনির অবদান আছে?
বিশালসংখ্যক দর্শক শুধু তাঁর জন্য ফ্যামিলি ম্যান টু দেখেছেন। এই সূত্রে এখন তাঁরা প্রথম মৌসুমও দেখবেন। অভিনেত্রী হিসেবেও তিনি দুর্দান্ত। সামান্থা বেশ পরিশ্রমী। তাঁর মতো অভিনেত্রী এই সিরিজের মান অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছেন।
ইন্ডাস্ট্রির অনেক শক্তিশালী নির্মাতারা বড় মাপের ছবি বানান। আমি সেই ছবির অংশ নই। আর তাতে আমি খুশি। আমি আমার নিজের পছন্দ অনুযায়ী সিনেমায় অভিনয় করি। আমি কে, তা বিচার করার দায়িত্ব কারও নয়। আর যিনিই এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করবেন, তিনিই এই ইন্ডাস্ট্রির একজন।
প্রশ্ন :
বাস্তবে ‘ফ্যামিলি ম্যান’ হিসেবে নিজেকে কত দেবেন?
পরিবার’ হলো সবচেয়ে বাস্তব দুনিয়া, যেখানে আমরা প্রাণে বেঁচে থাকি। ‘ফ্যামিলি ম্যান’ হিসেবে আমিও কখনো সফল হই, কখনো ব্যর্থ। আমি অনেকটা ‘শ্রীকান্ত’র (সিরিজে মনোজের চরিত্র) মতো বলতে পারেন। পরিবার আর কাজের মধ্যে সমতা বজায় রেখে চলার চেষ্টা করি। আমাদের ছোট্ট পরিবার। আমরা পরস্পরের খুব কাছের। প্রত্যেক স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আলাদা রসায়ন থাকে। আমাদের মধ্যেও আছে। আমাদেরও মতবিরোধ হয়। তবে মেয়েকে ঘিরেই আমাদের সবকিছু। লেখাপড়া থেকে শুরু করে ওর খুঁটিনাটি সবকিছুতে আমাদের নজর থাকে। আমি বন্ধুদের সঙ্গে যা শেয়ার করতে পারি না, স্ত্রীর সঙ্গে তা পারি। স্ত্রী আমার প্রিয় বন্ধু।
প্রশ্ন :
করোনায় কীভাবে সময় কাটালেন?
ভালো সিরিজ দেখেছি। মেডিটেশন করেছি। কাজ করেছি। তবে এই এক বছরে আমার মধ্যে কিছু পরিবর্তন এসেছে। আমি এই সময়ে আরও বেশি আধ্যাত্মিকতা চর্চা করেছি। আমার কাছে সফলতার সংজ্ঞা আগেই বদলে গিয়েছিল। এই লকডাউনে তা আরও বেশি করে উপলব্ধি করেছি। সাফল্য আর প্রাচুর্য ততক্ষণ থাকে, যতক্ষণ আমাদের প্রাণ থাকে।
পরিবার’ হলো সবচেয়ে বাস্তব দুনিয়া, যেখানে আমরা প্রাণে বেঁচে থাকি। ‘ফ্যামিলি ম্যান’ হিসেবে আমিও কখনো সফল হই, কখনো ব্যর্থ। আমি অনেকটা ‘শ্রীকান্ত’র (সিরিজে মনোজের চরিত্র) মতো বলতে পারেন।
প্রশ্ন :
আপনি কি মনে করেন ওটিটিতে নির্মাতারা অনেক বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে পারেন, বড় পর্দায় যা সম্ভব নয়?
ভারতীয় চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে বাণিজ্যিক ছবির দাপট অনেক বেশি। ওটিটিতে পরিচালক, লেখকেরা নতুন নতুন সৃষ্টি মেলে ধরার সুযোগ পান। সত্যি বলতে, ওটিটি আশীর্বাদ হয়ে আমাদের কাছে এসেছে। অনেক প্রতিভার এখানে বিকাশ হচ্ছে। তবে থিয়েটার বা ওটিটির ভাগ্য ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে, যখন করোনা থাকবে না, মহামারি চলে যাবে আর মাস্ক অফ হবে।
প্রশ্ন :
‘ভোঁশলে’র মাধ্যমে তৃতীয়বার জাতীয় পুরস্কার পেলেন।
হ্যাঁ, আমি তৃতীয়বার জাতীয় পুরস্কার পেলাম। তবে দ্বিতীয় আর তৃতীয়বারের মধ্যে অনেক ব্যবধান। এর মধ্যে অনেক ভালো সিনেমায় কাজ করেছি। আমার অভিনয় শুধু দেশে নয়, বাইরেও প্রশংসিত হয়েছে। যখনই পুরস্কারের আশা করেছি, পাইনি। তাই ভোঁশলে ছবির জন্য পুরস্কার পাওয়া আমার কাছে অবিশ্বাস্য ছিল। ছবিটি নির্মাণ করতে চার বছর লাগে। তাই ভোঁশলের জন্য এত বড় সম্মাননা পেয়ে সত্যি ভালো লাগছে।
প্রশ্ন :
আপনি ইন্ডাস্ট্রির বাইরে থেকে এসেছেন। নিজেকে এখন কতটা এই ইন্ডাস্ট্রির একজন বলে মনে করেন?
আমি সব সময় নিজেকে এই ইন্ডাস্ট্রির একজন মনে করি। আমাকে যাঁরা ‘আউটসাইডার’ বলেন, তাঁরা ভুল করেন। ইন্ডাস্ট্রির অনেক শক্তিশালী নির্মাতারা বড় মাপের ছবি বানান। আমি সেই ছবির অংশ নই। আর তাতে আমি খুশি। আমি আমার নিজের পছন্দ অনুযায়ী সিনেমায় অভিনয় করি। আমি কে, তা বিচার করার দায়িত্ব কারও নয়। আর যিনিই এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করবেন, তিনিই এই ইন্ডাস্ট্রির একজন। জানি না ‘আউটসাইডার’ শব্দটি কে ইন্ডাস্ট্রিতে এনেছেন। আমার কাছে তিনি নিজেই একজন আউটসাইডার।
প্রশ্ন :
একজন অভিনেতা হিসেবে কোন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করা বেশি কঠিন?
আমার কাছে অভিনয় করাটা বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন কাজ। তাই যে চরিত্রই করি না কেন, সেটা তার মতো করে পর্দায় মেলে ধরতে হয়, পর্দায় সেই চরিত্রকে তুলে ধরতে হয়।
প্রশ্ন :
মনোজ বাজপেয়ি অনেক অভিনেতার অনুপ্রেরণা। আপনার অনুপ্রেরণা কে?
আমাকে অনেকে প্রভাবিত করেছেন, যেমন নাসিরুদ্দিন শাহ, অমিতাভ বচ্চন, দিলীপ সাহেব, সঞ্জীব কুমার, ওম পুরি, মতিলালজি, বলরাজ সাহানিজিসহ আরও অনেকে। তা ছাড়া আমি এখনকার অভিনেতাদের থেকে অনেক কিছু শিখেছি। কে কে মেনন, ইরফান, নওয়াজ—তাঁরা প্রত্যেকে আমাকে কিছু না কিছু শিখিয়েছেন। তাঁরা দারুণ অভিনেতা। তবে আমাকে অনুপ্রাণিত করেন আমার বাবা আর আমার শিক্ষক ব্যারি জন। তাঁরা আমাকে শিখিয়েছেন পরিশ্রম করতে। জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে।
প্রশ্ন :
‘ফ্যামিলি ম্যান থ্রি’ কবে আসবে?
এ প্রশ্ন আমাকে অনেকেই করেন। তবে এ ব্যাপারে আমাজন আর পরিচালক ভালো বলতে পারবেন।