ইলিয়াস কাঞ্চনের মৃত্যুর গুজবে ক্ষুব্ধ জয়, জানালেন বাবার বর্তমান অবস্থা
জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ও ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চনের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিষয়টি নিয়ে তাঁর ছেলে ও নিসচার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিরাজুল মইন জয় দেশবাসীকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে জয় বলেন, ‘বাবা বর্তমানে অসুস্থ এবং চিকিৎসাধীন আছেন। তাঁর চিকিৎসা চলছে নিয়মিতভাবে। দয়া করে কেউ কোনো গুজবে কান দেবেন না। আমি দেশবাসীসহ সবার কাছে অনুরোধ করছি, আপনারা বাবার দ্রুত সুস্থতার জন্য দোয়া করবেন।’
জয় আরও বলেন, ‘বাবার অসুস্থতার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে দেশ-বিদেশে “নিরাপদ সড়ক চাই”-এর কর্মী, বাবার ভক্ত এবং সাধারণ মানুষ যে আন্তরিকভাবে দোয়া করছেন, বিশেষ করে আজ জুমার নামাজে বিভিন্ন স্থানে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছেন—এর জন্য আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানাই।’
তবে কিছু ইউটিউবার ও ফেসবুক ব্যবহারকারীর কর্মকাণ্ডে হতাশা প্রকাশ করে জয় বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে, কিছু ইউটিউবার ও ফেসবুক ব্যবহারকারী সামান্য ভিউয়ের আশায় বিভ্রান্তিকর ভিডিও প্রকাশ করছেন। এগুলো জনমনে আঘাত হানছে এবং আমার বাবার ভক্তদের কষ্ট দিচ্ছে। আমরা এসব কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই।’
লন্ডনে চিকিৎসাধীন ইলিয়াস কাঞ্চন
বর্তমানে ইলিয়াস কাঞ্চন লন্ডনের হার্লি স্ট্রিট ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন। গত আগস্টে লন্ডনের উইলিংটন হাসপাতালে তাঁর মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। সেখানে টিউমারের কিছু অংশ অপসারণ করা হয়, তবে পুরোটা অপসারণ করা সম্ভব হয়নি ঝুঁকির কারণে। এখন তিনি নিচ্ছেন রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপি—‘টার্গেট থেরাপি’। পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, সপ্তাহে পাঁচ দিন করে ছয় সপ্তাহ এই থেরাপি চলবে। এরপর চার সপ্তাহ তাঁকে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে।
এর আগে ইলিয়াস কাঞ্চনের জামাতা আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ২৬ এপ্রিল থেকে আব্বু (ইলিয়াস কাঞ্চন) আমাদের লন্ডনের বাসায় আছেন। এখানে হার্লি স্ট্রিট ক্লিনিকের অনকোলজিস্ট ভিনায়ার নেতৃত্বে তাঁর চিকিৎসা চলছে। গত ৫ আগস্ট উইলিংটন হাসপাতালে অধ্যাপক ডিমিট্রিয়াসের নেতৃত্বে তাঁর মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। পুরো টিউমার অপসারণ করলে জীবনহানির ঝুঁকি ছিল বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন।’
আরিফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বাকি অংশ রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপির মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা চলছে। এটিকে তাঁরা টার্গেট থেরাপি বলছেন। সোম থেকে শুক্রবার, সপ্তাহে পাঁচ দিন করে ছয় সপ্তাহ থেরাপি চলবে। থেরাপি শেষে চার সপ্তাহ ডাক্তারের পর্যবেক্ষণে বিশ্রামে থাকবেন তিনি।’
টানা চিকিৎসার কারণে ইলিয়াস কাঞ্চন কিছুটা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর জামাতা। ‘আব্বু কর্মব্যস্ত মানুষ ছিলেন। হঠাৎ করে এমন ঘরবন্দী জীবন ও চিকিৎসাজনিত ক্লান্তি তাঁকে কিছুটা দুর্বল করে তুলেছে। কথা বলা সীমিত করা হয়েছে। তবে তিনি সবকিছু বুঝতে পারেন, নিসচার খবর রাখেন। তিনি চান, দ্রুত সুস্থ হয়ে দেশের মাটিতে ফিরতে।’
শিল্পী মহলের উদ্বেগ
চিত্রনায়িকা রোজিনা ও সোনিয়া সম্প্রতি লন্ডনে ইলিয়াস কাঞ্চনের খোঁজ নিয়েছেন। রোজিনা বলেন, ‘উনি আমাদের সবার প্রিয় মানুষ। আমরা সবাই তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’ গত রোববার বিকেলে এফডিসিতে শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে এক বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগরের উদ্যোগে আয়োজিত এই দোয়ায় শিল্পীরা প্রার্থনা করেন, প্রিয় সহকর্মী ইলিয়াস কাঞ্চন আবারও যেন সুস্থ হয়ে তাঁদের মধ্যে ফিরে আসেন। সভায় মিশা সওদাগর বলেন, ‘ইলিয়াস কাঞ্চন শুধু আমাদের চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র নন, তিনি সচেতন নাগরিক, সমাজকর্মী এবং আমাদের সবার প্রেরণা। তাঁর অসুস্থতার খবর শুনে আমরা ভীষণভাবে ব্যথিত। আজ (৫ অক্টোবর) আমরা সবাই মিলে দোয়া করেছি, আল্লাহ যেন তাঁকে দ্রুত আরোগ্য দান করেন। তিনি সুস্থ, স্বাভাবিক হয়ে আমাদের মধ্যে ফিরে আসবেন। আবার কাজ শুরু করবেন।’