মাস্টার শামিম হয়ে ফিরে যাচ্ছি আমেরিকায়...
বছরের পর বছর নিজ দেশে আসা–যাওয়া করছেন। তবে এবার বাংলাদেশে আসার অভিজ্ঞতাটা অন্য রকম অভিনেতা ও সংগীতশিল্পী অভিনেতা শামিম ইব্রাহিমের কাছে। অল্প কথায় অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন তিনি, ‘শামিম ইব্রাহিম হয়ে এসেছিলাম, মাস্টার শামিম হয়ে ফিরে যাচ্ছি আমেরিকায়।’
বাংলাদেশে ১৫ দিনের সফর শেষে তিনি ফিরে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রে। গতকাল শুক্রবার ভোরে দেশ ছাড়ার আগে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সবাইকে। বললেন, ‘জীবনের স্মরণীয় সফর শেষে, ফিরে যাচ্ছি দেশের মানুষের ভালোবাসা সঙ্গে নিয়ে।’
গত বৃহস্পতিবার রাতে বিমানবন্দর থেকে প্রথম আলোকে শামিম বলেন, ‘পরিবারের কাছে ফিরে যাচ্ছি, বিষয়টা সব সময় আনন্দের হলেও এবার বিষাদ ভর করছে। মনে হচ্ছে, সবাইকে রেখে যাচ্ছি, যেমন প্রথমবার মনে হয়েছিল। এবার অনেকের সঙ্গে দেখা হয়েছে, নিজেকে তাই ভাগ্যবান মনে করছি। সময়স্বল্পতায় অনেকের সঙ্গে দেখা হয়নি, তাঁদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। তবে কথা দিচ্ছি, শিগগির ফিরে আসব।’
এর আগে দেশে এলেও শামিমকে পরিবার ও বন্ধুবান্ধব ছাড়া তেমন কেউ চিনত না। কিন্তু তাঁকে নিয়ে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশের পর যেখানেই গেছেন, মানুষ তাঁকে চিনেছেন, তাঁর অভিনয়ের স্মৃতিচারণা করেছেন। শামিম বলেন, ‘শ্বশুরবাড়ি নোয়াখালীতে গিয়েছিলাম, ফেরার পথে বাসে অনেকেই চিনেছেন। কেউ সেলফি তুলেছেন। ফেসবুকে প্রচুর মানুষের মেসেজ রিকোয়েস্ট পেয়েছি। এবারের অভিজ্ঞতা সত্যিই ভিন্ন।’
আগস্টের মাঝামাঝি পেশাগত কাজে বাংলাদেশে আসেন শামিম ইব্রাহিম। সেসব কাজ শেষ তিনি যেন করেছেন ‘টাইম ট্রাভেল’। ৪৪ বছর আগের ছোট্ট ‘বিপ্লব’ হয়ে তিনি ফিরেছিলেন অভিনেত্রী আনোয়ারা বেগমের বাসায়। দুজনের যখন দেখা হয়, তখন বাসায় আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। দুজনেই কাঁদেন; কাঁদান বাসায় থাকা অন্যদেরও। দুজন মিলে ‘বাবা বলে গেল, আর কোনো দিন গান কোরো না’ গান শুনে ফিরে গিয়েছিলেন ফেলে আসা সময়ে। সিনেমাটির শুটিংয়ের স্মৃতি ভাগ করেছেন সবার সঙ্গে।
শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় শুরু করলেও নায়ক হিসেবে শামিমের অভিষেক ‘আশিক প্রিয়া’ সিনেমা দিয়ে। আওকাত হোসাইন পরিচালিত এ সিনেমায় তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেন সোনিয়া ফেরদৌস। ১৯৯২ সালে ছবিটির শুটিংয়ের পর আর দেখা হয়নি দুজনের। এবার ৩৩ বছর পর আবার দুজনের দেখা হয়েছে। এমবিবিএস করে এখন ঢাকার একটি হাসপাতালে সনোলজিস্ট কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত সোনিয়া। তাঁর কাছেই চেকআপ করাতে গিয়েছিলেন শামিম।
২০১৪ সালে পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান শামিম ইব্রাহিম। স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে থাকেন টেক্সাসের ডালাসে। তিন সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে সুখের সংসার তাঁর।
বাংলা চলচ্চিত্রে চিত্রনায়ক ফয়সালের সময়কাল ১৯৭৯ থেকে ১৯৯৪। এই ১৫ বছরে শিশুশিল্পী হিসেবেই পর্দায় বেশি দেখা গেছে তাঁকে। ১৯৭৯ সালে ‘দেবদাস’ সিনেমায় কয়েক মিনিটের একটা চরিত্রে প্রথম শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন তিনি। এরপর ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘নান্টু ঘটক’, ‘তিন বাহাদুর’, ‘এতিম’, ‘গৃহলক্ষ্মী’, ‘লালুগুলু’, ‘রেশমি চুড়ি’, ‘সাক্ষী’, ‘রঙিন রূপবান’, ‘বড় মা’, ‘নসিব’ও ‘শাস্তি’ সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন। ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ সিনেমায় ‘বাবা বলে গেল আর কোনো দিন গান কোরো না’, ‘নান্টু ঘটক’ সিনেমায় ‘জন্ম, মৃত্যু আর বিয়া’ এবং ‘পাঙাশ মাছের পেটি’ গানে তাঁর অভিনয় শিশুশিল্পী হিসেবে তাঁকে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল।
নায়ক হিসেবে ‘আশিক প্রিয়া’ ছাড়া আওকাত হোসাইনের ‘জানের বাজি’ চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন শামিম। এটিই তাঁর অভিনীত শেষ সিনেমা।