প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশের পর পাকিস্তান থেকে আবদুল আলীমের গান ফিরেছে

২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর আবদুল আলীমকে নিয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বিষয়টি অনেকের নজরে আসে, আলোচনারও জন্ম দেয়কোলাজ

কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী আবদুল আলীমকে নিয়ে ২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ‘পাকিস্তানে নষ্ট হচ্ছে আবদুল আলীমের গান’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, রেডিও পাকিস্তানের ইসলামাবাদ স্টেশনে আলীমের বহু গান নষ্ট হয়ে গেছে, বাকি গানগুলো অযত্নে পড়ে রয়েছে।

প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বিষয়টি অনেকের নজরে আসে, আলোচনারও জন্ম দেয়। আবদুল আলীমের মেয়ে সংগীতশিল্পী নূরজাহান আলীম গত রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম আলোর নিউজটি (সংবাদ) তখন বাংলাদেশের মানুষের মাঝে ভীষণভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।’

আরও পড়ুন

প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর প্রায় এক বছর ধরে পাকিস্তানের সঙ্গে চিঠি চালাচালি করেছে বিগত সরকার; ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ইসলামাবাদ থেকে আবদুল আলীমের ১২টি গান ফিরিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরে গানগুলো পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

আবদুল আলীম
পরিবারের সৌজন্যে

কীভাবে ফিরল

সেই প্রতিবেদন প্রকাশের পর গান ফেরানোর জন্য ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরেই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে আলীমের পরিবার। আবেদনটি আমলে নিয়ে ২০২২ সালের নভেম্বরে আবদুল আলীমের গান ফেরানোর বিষয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বেতারের মতামত নেয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। সেসব মতামতের ভিত্তিতে ইসলামাবাদ থেকে গান ফেরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সেই বছর ২২ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।

২০২৩ সালের মার্চ থেকে বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগ। পাকিস্তানে গানগুলো কোথায়, কীভাবে আছে, তা নিয়ে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করেছেন আবদুল আলীমের মেয়ে নূরজাহান আলীম ও জামাতা হিসান বাবু।

২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ‘পাকিস্তানে নষ্ট হচ্ছে আবদুল আলীমের গান’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো
প্রথম আলো

গত রোববার প্রথম আলোকে নূরজাহান আলীম জানান, পাকিস্তানে থাকা আবদুল আলীমের দেড়শ গানের একটি তালিকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দিয়েছেন তাঁরা। পরে তালিকাটি ইসলামাবাদের বাংলাদেশ হাইকমিশনে পাঠিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

তালিকাটি ধরে রেডিও পাকিস্তানের ইসলামাবাদ স্টেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইসলামাবাদের বাংলাদেশ হাইকমিশন। পরে সেখান থেকে ১২টি গান পাওয়ার কথা জানিয়েছে হাইকমিশন। গানগুলো ভিনাইল রেকর্ড আকারে ছিল। পরে সেখান থেকে ডিজিটালি রূপান্তর করে পেনড্রাইভে নেওয়া হয়।

আবদুল আলীম
পরিবারের সৌজন্যে
আরও পড়ুন

পেনড্রাইভে ১২টি গান ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগে পাঠিয়েছে ইসলামাবাদের বাংলাদেশ হাইকমিশন। পরে গানগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

১২টি গানের মধ্যে ‘হেঁইয়ো রে হেঁইয়ো’, ‘ও আমার দরদি, আগে জানলে তোর ভাঙা নৌকায় চড়তাম না’ একদম নতুন; আবদুল আলীমের কণ্ঠে গানগুলো তাঁর পরিবারের সংগ্রহে ছিল না। পাশাপাশি ‘নিদানের কান্ডারি মুর্শিদ দেখা দাও আমারে’ ও ‘পার করো দিনের বন্ধু’ দুটি গানের অংশবিশেষ শোনা গেলেও পুরো গান ছিল না; ইসলামাবাদ থেকে এই দুটি গানও পুরোটাই পাওয়া গেছে।

নিউজটা (সংবাদ) করে প্রথম আলো যে ভূমিকা রেখেছে, এটা আসলে অবিস্মরণীয়। এটা আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
নূরজাহান আলীম, আবদুল আলীমের মেয়ে ও সংগীতশিল্পী

‘প্রথম আলোর ভূমিকা অবিস্মরণীয়’

বিষয়টি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে সংবাদ প্রকাশ করায় প্রথম আলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান আলীম-কন্যা নূরজাহান আলীম। গত রোববার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিউজটা (সংবাদ) করে প্রথম আলো যে ভূমিকা রেখেছে, এটা আসলে অবিস্মরণীয়। এটা আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথম আলোকে কৃতজ্ঞতা জানাই।’

নূরজাহান আলীম জানান, প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর অনেকেই তাঁকে ফোন করেছেন। অনেকেই তাঁকে বলেছেন, বিষয়টি এতদিন তাঁদের জানা ছিল না। প্রতিবেদনটি পড়ে বিষয়টি (পাকিস্তানে আবদুল আলীমের গান থাকা) জানতে পেরেছেন।

আবদুল আলীমের স্ত্রী জমিলা আলীম ( প্রয়াত) ও তাঁর সাত সন্তান
পারিবারিক অ্যালবাম থেকে
আরও পড়ুন

বাকি গানও ফিরবে, পরিবারের আশা

স্বাধীনতার আগে রেডিও পাকিস্তানে নিয়মিত বাংলা গানের অনুষ্ঠান হতো। সেই সূত্রে রেডিও পাকিস্তানে বহু গান করেছেন আবদুল আলীম, সেই গানগুলোর স্পুল রেডিও আর্কাইভে জমা রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে রেডিও পাকিস্তানের করাচি স্টেশনের আর্কাইভে পড়ে ছিল আলীমের গান। পরে সেগুলো ইসলামাবাদ স্টেশনের বৈদেশিক সার্ভিস বিভাগে নেওয়া হয়।

আলীম পরিবার বলছে, পাকিস্তানে আবদুল আলীমের অন্তত দেড়শ গান রয়েছে। মাঝে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আবারও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তাঁরা। বাকি গানগুলোও ফেরানোর আশা করছে পরিবার।

১৯৭৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মারা যান আবদুল আলীম। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৭ সালে তাঁকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে।