অস্ট্রেলিয়ায় সিনেমা বানাচ্ছেন চট্টগ্রামের অর্ক

অর্ক দাশ। আইএমডিবি

অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ফিজির প্রেক্ষাগৃহে গতকাল মুক্তি পেয়েছে ‘মাই মেলবোর্ন’। সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত অ্যানথোলজি সিনেমাটিতে ইন্দ্রনীল চরিত্রে অভিনয় করেছেন চট্টগ্রামের সন্তান অর্ক দাশ। ছবিটিতে উঠে এসেছে অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসীদের জীবনের গল্প। সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন ইমতিয়াজ আলী, কবির খান, রিমা দাস, ওনিরের মতো ভারতের প্রথম সারির নির্মাতারা। গত বছরের আগস্টে ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব মেলবোর্নে সিনেমাটির প্রিমিয়ার হয়। ১৪ মার্চ ভারতে মুক্তি পাবে।

চট্টগ্রামের সন্তান অর্ক দাশ ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়ান চলচ্চিত্রশিল্পে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন। তিনি অভিনেত্রী নিকোল কিডম্যান, দেব প্যাটেল অভিনীত ‘লায়ন’, ক্রিকেটার ব্রেট লি অভিনীত ‘আনইন্ডিয়ান’-এর মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এ ছাড়া বলিউড ও হলিউডের মূলধারার বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে নতুন সংযোজন ‘মাই মেলবোর্ন’।

সিনেমার দৃশ্যে অর্ক দাশ। আইএমডিবি
চট্টগ্রামের সন্তান অর্ক দাশ ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়ান চলচ্চিত্রশিল্পে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন। তিনি অভিনেত্রী নিকোল কিডম্যান, দেব প্যাটেল অভিনীত ‘লায়ন’, ক্রিকেটার ব্র্যাড লি অভিনীত ‘আনইন্ডিয়ান’-এর মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

২০২৩ সালে সিডনিতে এবিসি চ্যানেলের ফিচার ফিল্ম ‘হেয়ার আউট ওয়েস্ট’-এ অভিনয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার লোগি অ্যাওয়ার্ডসে সেরা পার্শ্ব অভিনেতা মনোনীত হন অর্ক দাশ। সিনেমাটি সিডনি চলচ্চিত্র উৎসবে উদ্বোধনী চলচ্চিত্র ছিল। ছবিটিতে পশ্চিম সিডনিতে বসবাসরত বাঙালি, ভারতীয়, কুর্দি, ভিয়েতনামিজসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর খাবারের সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে। সিনেমাটি মুক্তির সময় স্থানীয় গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অর্ক জানিয়েছিলেন, সিনেমাটিতে আসলে পরিবার, এক প্রজন্মের সঙ্গে অন্য প্রজন্মের দূরত্ব ইত্যাদি বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। সমালোচকদের কাছে প্রশংসিত সিনেমাটি এবিসির স্ট্রিমিং সার্ভিসে মুক্তি পায়।
মঞ্চে অভিনয়েও সুনাম কুড়িয়েছেন অর্ক। দেশটির অনসাম্বল থিয়েটারে ‘অ্যানিমেলস আউট অব পেপার’-এ অভিনয় করে সিডনি থিয়েটার পুরস্কারে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন।

অর্ক দাশ। আইএমডিবি

সিডনির স্থানীয় বাংলা মাসিক পত্রিকার সম্পাদক ও সমাজকর্মী আল নোমান শামীম বলেন, ‘অর্ক দাশের সাফল্য আমাদের কমিউনিটির জন্য একটি বড় অর্জন। তিনি আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে উঁচুতে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর সাফল্য দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হই।’

‘হেয়ার আউট ওয়েস্ট’-এর পোস্টার। আইএমডিবি

কী নিয়ে ‘খানা’
এক দশকের বেশি সময় ধরে লেখক, পরিচালক ও অভিনেতা হিসেবে অস্ট্রেলিয়ান টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে কাজ করছেন অর্ক দাশ। তাঁর প্রথম কাজ ওয়েব সিরিজ ‘দ্য কাজুয়ালস’। এটি ২০১৪ সালে মুক্তি পায়। অভিবাসী শ্রমিকদের জীবন নিয়ে অর্ক দাশের লেখা ও পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘খানাখাজানা’ বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার জিতেছে। চলচ্চিত্রটিকে ফিচার ফিল্ম হিসেবে নির্মাণের জন্য সম্প্রতি স্ক্রিন অস্ট্রেলিয়া থেকে তহবিল পেয়েছেন অর্ক।

সিডনির অভিবাসী শ্রমিকদের কঠোর বাস্তবতা নিয়ে নির্মীয়মাণ ফিচার ফিল্মটির নাম হবে ‘খানা’। চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশি-অস্ট্রেলিয়ান সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির একটি প্রতিচ্ছবি হবে। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশি সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন সিডনিপ্রবাসী নির্মাতা গোলাম মোস্তাফা। চলচ্চিত্রটির বিপণনসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ের কাজে সম্প্রতি ভারতের গোয়ায় গিয়েছিলেন অর্ক দাশ। সেখানে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়ান ফিল্ম বাজারে (আইএফবি) বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নিয়েছিলেন। নির্মাতা জানালেন, চলচ্চিত্রটি নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। সিনেমাটি এ মুহূর্তে কোন পর্যায়ে আছে বা কবে নাগাদ মুক্তি পাবে, সে বিষয়ে আপাতত তথ্য দিতে নারাজ নির্মাতা। শুধু জানালেন, ‘আমার জন্ম বাংলাদেশে, ফলে আমি যেখানেই যাই অথবা যা-ই করি, সেখানে বাংলা থাকবেই। আমার গল্প, লেখা থেকে শুরু করে সব সৃষ্টির মধ্যে বাংলাদেশ থাকে। আমার আগামী চলচ্চিত্রেও এটা থাকবে।’

কলামিস্ট অজয় দাশগুপ্ত ও দীপা দাশগুপ্তর একমাত্র সন্তান অর্ক দাশ। তাঁর কাজে বাংলার প্রভাব পড়েছে বারবার। সংলাপ লিখতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ান সিনেমায় বাংলা সংলাপের পাশাপাশি রবীন্দ্রসংগীতের ব্যবহার করেছেন অর্ক। স্মৃতি হাতড়ে জানালেন, চট্টগ্রাম শহরের লাভ লেনে থাকতেন তাঁরা।

অর্ক দাশ। আইএমডিবি
আরও পড়ুন

১৯৯০-এর দশকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় পরিবারের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান। সিডনির পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় বেড়ে উঠেছেন তিনি। তবে বাংলাদেশ, বিশেষ করে চট্টগ্রামের স্মৃতি স্পষ্ট। নুহাশ হুমায়ূনসহ আরও অনেক তরুণ নির্মাতার সঙ্গে যোগাযোগ আছে। ভবিষ্যতে জন্মভূমিতে কাজ করার ইচ্ছা আছে।

অর্ক দাশ। আইএমডিবি