‘ফ্রি, ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগান, ভেনিস উৎসবে নজিরবিহীন দিন
ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের শনিবারের দিনটি পরিণত হয় এক নজিরবিহীন বিক্ষোভে। কোনো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সম্ভবত এত বড় মিছিল এর আগে দেখা যায়নি।
হাজারো মানুষ—বয়সে তরুণ থেকে প্রবীণ, উৎসবে আগত অতিথি থেকে সাধারণ অংশগ্রহণকারী—সবাই মিলে এই মিছিলে যোগ দেন। লক্ষ্য একটাই—ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধ হোক। হাতে হাতে পতাকা, মুখে মুখে স্লোগান: ‘ফ্রি, ফ্রি প্যালেস্টাইন’। রাজনৈতিক বার্তার মধ্যেও মিছিলটা পেয়েছিল উৎসবমুখর আবহ। ‘শান্তি’ লেখা ব্যানার ওড়াচ্ছিলেন কেউ, আবার কোথাও বাজছিল গান, কোথাও ভেসে আসছিল ফগহর্ন আর ফ্লেয়ারের আলো।
উৎসবকে প্ল্যাটফর্ম বানানোর আহ্বান
এক যৌথ বিবৃতিতে আয়োজকেরা বলেন, ‘ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে না। এটি হওয়া উচিত ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধের আহ্বান আর ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সংহতির প্ল্যাটফর্ম।’
মিছিল চলাকালে লিডোর মূল সড়কগুলো বন্ধ করে দেয় পুলিশ। ঢাকঢোল ও স্লোগানের শব্দ ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়।
আয়োজকদের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘গাজায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থীশিবিরে বোমা ফেলা হচ্ছে। খাদ্য ও পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। নিহত হচ্ছেন সাংবাদিক ও চিকিৎসকেরা। ফ্রিডম ফ্লোটিলার মতো মানবিক সহায়তার জাহাজ দখল করছেন ইসরায়েলি সেনারা। একই সময়ে পশ্চিম তীরে চলছে দখলদারি ও বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা। এই দখলদারি নীতি মানবতা ও আন্তর্জাতিক আইনের সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে।’
আয়োজকেরা ইউরোপ ও ইতালির প্রতিও অভিযোগ তোলেন—অস্ত্র সরবরাহ, অর্থনৈতিক চুক্তি ও কূটনৈতিক ছাতার মাধ্যমে এ হত্যাযজ্ঞে জড়িয়ে পড়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো।
উৎসব ঘিরে বিতর্ক
ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব সাধারণত তুলনামূলকভাবে কম রাজনৈতিক। কিন্তু গাজার পরিস্থিতিতে এবার উৎসবের ভেতরেও গর্জে উঠল প্রতিবাদের সুর। সপ্তাহের শুরুতেই উৎসব ভবন পালাজো দেল সিনেমার সামনে ফিলিস্তিনি পতাকা আর ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন, স্টপ দ্য জেনোসাইড’ লেখা ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন কর্মীরা।
উৎসব শুরুর আগে শত শত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রকার ও শিল্পী কর্তৃপক্ষকে খোলাচিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছিলেন গাজার গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার জন্য। একই সঙ্গে তাঁরা আহ্বান জানান ইসরায়েলপন্থী তারকাদের, যেমন ‘ইন দ্য হ্যান্ড অব দান্তে’ ছবির অভিনেতা গাল গ্যাদত ও জেরার্ড বাটলারকে উৎসবে নিষেধাজ্ঞা দিতে। পরে নিশ্চিত হয়, গ্যাদত এবারের উৎসবে অংশ নিচ্ছেন না।
উৎসব কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া
ভেনিস উৎসবের আয়োজক সংস্থা বায়েনালে জানায়, ‘ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব সব সময়ই বিশ্বের সবচেয়ে জরুরি সামাজিক-রাজনৈতিক ইস্যুতে সংবেদনশীল থেকেছে। এর প্রতিফলন ঘটছে উৎসবে প্রদর্শিত চলচ্চিত্রগুলোতেও।’
উৎসবের প্রধান আলবের্তো বারবেরা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমাদের কিছু শিল্পীর আমন্ত্রণ বাতিল করতে বলা হয়েছে, তবে আমরা সেটা করব না। যাঁরা আসতে চান, তাঁরা আসবেন। তবে আমরা স্পষ্টভাবে জানাচ্ছি, গাজা ও ফিলিস্তিনে যা ঘটছে, তাতে আমরা গভীরভাবে দুঃখিত। শিশুদের মৃত্যু আমাদের ব্যথিত করছে। এই যুদ্ধ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব থামা উচিত।’
তবে উৎসবের প্রথম দিন উৎসবের প্রধান জুরি আলেকজান্ডার পেইন গাজা প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, ‘আমি এখানে সিনেমা বিচার করতে এসেছি। আমার রাজনৈতিক মতামত অনেকের সঙ্গেই মিলে যাবে, তবে সেগুলো ব্যক্ত করার জায়গা এটা নয়।’
তথ্যসূত্র: ভ্যারাইটি