আলোচনায় ‘হিজরা’, কী আছে সৌদি আরবের এই সিনেমায়

‘হিজরা’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

সৌদি পরিচালক শাহাদ আমিনের নতুন রোড মুভি ‘হিজরা’ সৌদি নারীদের বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে গড়ে ওঠা বন্ধনকে কেন্দ্র করে তৈরি। আরবি ‘হিজরা’ শব্দের অর্থ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যাওয়া। সিনেমাতে এ বিষয়টিই তুলে ধরা হয়েছে। ছবিটিতে দেখা যাবে তিনজন নারীর—দাদি সিত্তি (খায়রিয়া নাজমি) এবং তাঁর দুই নাতনি জানা (লামার ফাদেন) ও সারা (রঘাদ বোখারি)—যাত্রা, যাঁরা হজের উদ্দেশ্যে তায়েফ থেকে মক্কা যাওয়ার পথে নানা অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন।
সিনেমাটি নিয়ে শাহাদ আমিন ভ্যারাইটিকে বলেন, ‘আমি চাইছিলাম সৌদি আরবের অজানা দিকটা দেখাতে। শুধু মরুভূমি নয়, দেশটা একটা বিভিন্ন সংস্কৃতির মিশ্রণ যেখানে অনেক মানুষ নিরাপদে বসবাস করে।’

‘হিজরা’ সৌদি আরব থেকে অস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। সিনেমাটি রেড সি চলচ্চিত্র উৎসবে জিতেছে জুরি পুরস্কার। এটি শাহাদের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র, তাঁর প্রথম সিনেমা ‘স্কেলস’ ২০১৯ সালে ভেনিস উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছিল।

‘হিজরা’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

গল্পের সূত্রপাত
শাহাদ জানান, প্রথমে তিনি নিখোঁজ এক তরুণীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন। এক ছোট বোন তার বড় বোনকে খুঁজে বেড়াচ্ছে জেদ্দায়—এই ছিল ভাবনা। কিন্তু একসময় তাঁর নিজের কাছেই গল্পটা শিশুসুলভ মনে হওয়ায় বাতিল করে দেন। ‘পরে আমার প্রযোজক মোহামেদ আল-দারাদজি বললেন—“তুমি কি চাইবে না এই গল্পকে নারীদের দৃষ্টিকোণ থেকে বানাতে?” তখনই গল্পটা নতুন আকার পেল,’ বলেন শাহাদ।

এই নির্মাতা জানান, তাঁর পরিবার চীনা বংশোদ্ভূত। এই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি ভাবলেন, ‘যদি হারানো মেয়েটি প্রবাসী হয়, তাহলে গল্প আরও সমৃদ্ধ হবে।’ এরপর তিনি আগের চিত্রনাট্য থেকে একটি দৃশ্য পুনর্ব্যবহার করলেন—মক্কায় হজ্জের সময় চেকপয়েন্ট পার হওয়ার মুহূর্ত। এভাবেই পরিবার, অভিবাসন এবং যাত্রার থিম একত্রিত হয়।

‘হিজরা’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

অভিনয়শিল্পী ও বিভিন্ন চরিত্র
জানা চরিত্রের জন্য লামার ফাদেনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। শাহাদ বলেন, ‘আমি তাকে প্রথম দেখেই ঠিক করেছিলাম যে তাকে চাই। তার নানি পাকিস্তানি এবং বাবা ইন্দোনেশিয়ান; তাই তার চেহারার বৈচিত্র্য গল্পের সঙ্গে মিলে। লামার কখনো সৌদি, কখনো ফিলিপাইনের, কখনো মেক্সিকো, কখনো ইন্দোনেশিয়ান মনে হয়, যা ছবির বহুজাতীয় চরিত্রের ছাপ ফুটিয়ে তোলে।’

আরও পড়ুন

সিনেমাটি নিয়ে নির্মাতা আরও বলেন, ‘আমি চেয়েছি দর্শক ধীরে ধীরে চরিত্রগুলোর মধ্যে প্রবেশ করতে করুক। এটা আসলে ধীরে ধীরে পর্দা সরিয়ে দেওয়ার মতো, যেন তাঁর চরিত্রগুলোর সঙ্গে একাত্ম হতে পারেন; চরিত্রগুলোর আবেগ নাড়িয়ে দিয়ে যায়।’
সিনেমায় বরফের বেশ কিছু দৃশ্য আছে। নির্মাতা এটা করেছেন সৌদি আরবের বৈচিত্র্য বোঝাতে। শাহাদ বলেন, ‘সৌদিতে মরুভূমি আছে কিন্তু উত্তরে ও দক্ষিণে পাহাড়ি এলাকাও আছে। সেখানে শীতল থাকে এবং মানুষকে উইন্ডশিল্ডের বরফ খসাতে হয়। এটা গল্পের বৈচিত্র্য এবং বাস্তবতার প্রতিফলন।’

সৌদি আরবের ভিন্ন রূপ
শাহাদ চান দেশটিকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখাতে। তিনি বলেন, ‘সৌদি সম্পর্কে মানুষ যেটি জানে তা শুধুই মরুভূমি। কিন্তু আসলে দেশটি অনেক বিচিত্র। বিভিন্ন প্রান্তে অনেক মুসলিম নিরাপদে বসবাস করছে। আমি চাইছিলাম দর্শককে এই মিশ্র সমাজ ও ভৌগোলিক বৈচিত্র্য দেখাতে।’
ছবিতে তিনজন নারীর জীবন, প্রজন্মের পার্থক্য ও সৌদি সমাজের অজানা দিকগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। শাহাদ জানান, এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি সৌদি নারীদের কাহিনি আর দেশটির বহু সাংস্কৃতিক সত্যিকারের চিত্র উপস্থাপন করতে চেয়েছেন।

ভ্যারাইটি অবলম্বনে