বাদশাহ যখন এক নম্বর বেকুব

নাসিরুদ্দিন হোজ্জার জন্ম তুরস্কে ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে। নানা চরিত্রে ও পেশায় তাঁকে তাঁর কয়েক শ গল্পে হাজির হতে দেখা যায়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, হোজ্জা এখন আর তুরস্কের নন, সারা বিশ্বের। ইউনেসকো তাঁর গল্পগুলোকে বিশ্বসাহিত্যিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে। হোজ্জা অবশ্য একেক অঞ্চলে একেক নামে অভিহিত। যেমন উজবেকিস্তান ও চীনে তিনি আফেন্দি বা এফেন্দি। তাঁর গল্প কখনো নির্মল হাস্যকৌতুকে, কখনো বুদ্ধির ঝলকে, কখনো বা নৈতিক শিক্ষার দ্যুতিতে উজ্জ্বল। কখনো নিজেকে নিজেই ব্যঙ্গ করেছেন।

অলংকরণ: তুলি

লজ্জায় সিন্দুকে

একদিন মোল্লা দেখলেন যে এক চোর তাঁর বাড়িতে ঢুকেছে। ব্যাপারটা টের পেয়ে খুবই সাবধানে-সন্তর্পণে মোল্লা তাঁর বিরাট সিন্দুকটার ভেতরে গিয়ে লুকালেন। এদিকে চোর ঘরময় ঘুরে বেড়াল, বাক্সপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করল। কিন্তু কিছুই মিলল না। রেগেমেগে যেই না চোর ব্যাটা সিন্দুকের মুখ খুলেছে, অমনি মোল্লা মাথা তুলে বলে উঠলেন, ‘চোর বাবাজি, আপনার নেওয়ার মতো কোনো জিনিসই নেই। তাই লজ্জায় আমি সিন্দুকে এসে লুকিয়েছি।’

আরও পড়ুন

বাদশাহ যখন এক নম্বর বেকুব

পারস্য দেশের কয়েকজন ব্যবসায়ী এসেছেন দরবারে বাদশাহর পছন্দসই ঘোড়া বিক্রি করতে। বাদশাহ বেশ কিছু ভালো ঘোড়া কিনলেন। এর চেয়েও ভালো ঘোড়া তাঁদের দেশে আছে শুনে বাদশাহ তাঁদের এক শ মোহর অগ্রিম দিলেন। এ ঘটনার দিন কয়েক পর বাদশাহ নাসিরুদ্দিন হোজ্জাকে হুকুম দিলেন, তাঁর রাজ্যে যত বোকা, কম বুদ্ধির লোক আছে, তাদের একটা তালিকা প্রস্তুত করতে। দুদিন প্রচণ্ড খেটেখুটে হোজ্জা ২৬ পাতার একটা তালিকা প্রস্তুত করলেন। তালিকার ওপর চোখ বোলাতেই বাদশাহ দেখলেন, ওতে সবার প্রথমে তাঁর নিজের নাম।

‘সে কী মোল্লা, আমার নাম সবার প্রথমে কেন?’

‘বাহ রে, অজানা-অচেনা ইরানি ব্যবসায়ীদের সম্বন্ধে কোনো কিছু না জেনেই এককথায় এতগুলো মোহর যিনি অগ্রিম দেন, তাঁকে তো বেকুবদের তালিকায় প্রথমেই রাখতে হবে।’

‘আর, তারা যদি সত্যি সত্যি ভালো ঘোড়া নিয়ে হাজির হয়, তাহলে?’ বাদশাহ আশান্বিত হয়ে বলেন।

‘হুজুর, তাহলে আর কি, তাহলে ওই তালিকার প্রথম বেকুব আপনার নাম কেটে, তাদের নামই বসিয়ে দেব’, মোল্লা নাসিরুদ্দিন বললেন।

প্রথমা প্রকাশনের নাসিরুদ্দিন হোজ্জার ১০০ গল্প বই থেকে

আরও পড়ুন