ফার্মেসিতে যে ৯ ধরনের ক্রেতা আসেন

প্রতি বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত হচ্ছে রম্য পাতা—কথাcom। ছাপা হচ্ছে পাঠকের রসরচনা, রম্যগল্প, মজার অভিজ্ঞতা, আইডিয়াসহ নানা কিছু। লেখা পাঠাতে পারেন আপনিও। ইমেইল: [email protected]

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার একটি ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনছেন ক্রেতারা।
ছবিঃ দীপু মালাকার

ফার্মেসি পেশায় এসে নানা রকম ক্রেতা বা কাস্টমারের দেখা পেয়েছি। আমার অভিজ্ঞতা বলে, ৯ ধরনের ক্রেতা সাধারণত ফার্মেসিতে আসেন।

১. ডিসকাউন্ট–সন্ধানী ক্রেতা

প্রথমেই আসবে তাঁদের নাম। এই শ্রেণির ক্রেতারা দোকানে ঢুকেই সরু চোখে তাকিয়ে প্রথম যে প্রশ্নটা করবেন, তা হলো, ‘কত পার্সেন্ট করে দেন?’ অর্থাৎ কত শতাংশ ডিসকাউন্ট দেওয়া হবে, সেটাই তাঁর জিজ্ঞাসা। আপনি যে সংখ্যাই বলেন না কেন, তিনি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলবেন, ‘হাহ! এত কম! অমুক দোকান তো আমাকে অত পার্সেন্ট দেয়…’ এই শ্রেণির কাস্টমারকে আপনি যদি বিনা মূল্যেও ওষুধ দিয়ে দেন, তবু বলবেন, ‘অমুক দোকানে তো আমাকে ফ্রি ওষুধ দেয়। সঙ্গে চা-নাশতা খাওয়ায়। যাওয়ার সময় রিকশা ভাড়াটাও দিয়ে দেয়।’

২. রাগী ক্রেতা

এই গ্রুপের ক্রেতারা বেশির ভাগ বয়স্ক। ডায়াবেটিস, নয়তো হার্টের রোগী। তাঁদের কথাবার্তা খুবই ঝাঁজাল। প্রায়ই তাঁরা বিনা কারণে রেগে গিয়ে অর্ধেক ওষুধ না কিনেই চলে যান। তবে তাঁদের পছন্দের তালিকায় একবার ঢুকতে পারলে এরা দ্রুতই পরের ক্যাটাগরি, অর্থাৎ ৩ নম্বর ক্যাটাগরিতে চলে যান।

৩. বিশ্বস্ত ক্রেতা

এরা খুবই দুষ্প্রাপ্য প্রাণী। আজকাল প্রায় দেখা যায় না বললেই চলে। এদের যা দেবেন, যে দামে দেবেন, তাতেই খুশি। যত ঝড়বৃষ্টিই হোক না কেন, এরা আপনার দোকান থেকেই ওষুধ কিনবে।

আরও পড়ুন

৪. সন্দেহবাতিকগ্রস্ত ক্রেতা

এই শ্রেণির ক্রেতারা সাংঘাতিক খুঁতখুঁতে স্বভাবের। ওষুধের মেয়াদ থেকে শুরু করে সামান্য পুরোনো টাকা—সবকিছুতেই তাঁদের সমস্যা। এই গ্রুপের অধিকাংশ লোক ১ নম্বর ক্যাটাগরিতেও পড়েন।

৫. ৫ টাকার ক্রেতা

এই গ্রুপের ক্রেতাদের কাছে সাকল্যে পাঁচ টাকাই থাকে! গ্যাস্ট্রিক, আলসার, বুকব্যথা থেকে শুরু করে সারা শরীরের সব মুশকিলের সমাধান তাঁরা পাঁচ টাকাতেই চান!

৬. উদাস ক্রেতা

এ ধরনের ক্রেতারা প্রথমে দোকানে এসে উদাসভাবে এদিক-ওদিক তাকান। ওষুধের নাম মনে করার চেষ্টা করেন। এবং সবশেষে ভাংতি টাকা ফেরত নিতে ভুলে যান।

আরও পড়ুন

৭. জ্ঞানপাপী ক্রেতা

এই শ্রেণির ক্রেতারা প্রথম আধঘণ্টা শুধু কোন ওষুধ কী কাজ করে, তা নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবেন। মোবাইল বের করে গুগল বা ইউটিউব ঘেঁটে সবচেয়ে কম দামি ওষুধটা খুঁজবেন, এবং সবশেষে আপনার ব্যবসার সার্বিক দিকনির্দেশনা দিয়ে বিদায় নেবেন। এদের প্রায় সবাই আবার ১ নম্বর ক্যাটাগরিতেও পড়েন।

৮. বাকিপ্রেমী ক্রেতা

এরা খুবই ধুরন্ধর প্রকৃতির। এক এলাকায় বেশি দিন থাকেন না। আর একবার বাকি নিলে দোকানের সামনে দিয়ে পারতপক্ষে হেঁটেও যান না। ঘুরপথে দোকান এড়িয়ে চলাচল করেন। বাকি দেওয়া বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে এদের আসল রূপ প্রকাশ পায়।

৯. অদ্ভুত ক্রেতা

এ ধরনের ক্রেতারা পাক্কা দুই-তিন বছর আগের একটা মলিন প্রেসক্রিপশন বুকপকেট থেকে অতি সাবধানে বের করে দেন। কোনো একটা লাল রঙের বড়ি খুঁজতে শুরু করেন। ওই লাল বড়ি আপনি জিন্দেগিতেও পাবেন না। সবশেষে এরা কোনো ওষুধ না কিনেই বিদায় নেন!

কাফি খান, উত্তরা, ঢাকা