হানি-নাটের প্রেমকাহিনি

হানি–নাটের প্রেমকাহিনিকোলাজ: কথাCom

সিনেমার নায়িকা হানি বনেদি পরিবারের একমাত্র রূপবতী কন্যা, আদরের দুলালি। বাবার অবর্তমানে আমগাছের ডালে মা রানি চৌধুরী গড়ে তুলেছেন সুরম্য মৌচাক। সেখানেই হানি বেড়ে উঠছিল একটু একটু করে। সবাই তার রূপে-গুণে মুগ্ধ। তাই তো তার সুরক্ষায় সদা তৎপর একঝাঁক অতন্দ্র প্রহরী। কেউ একটা ঢিল ছুড়লেই তারা ছুটে যায় তেড়েফুঁড়ে, হুল ফুটিয়ে করে শায়েস্তা।

হানিদের মৌচাকের ঠিক পাশেই ছিল একটা কাজুবাদামের গাছ। আর ওতে কষ্টেসৃষ্টে বেড়ে উঠছিল কিছু কাজুবাদাম। ওদেরই একজন সিনেমার নায়ক নাট। দরিদ্র পরিবারের মেধাবী তরুণটিকে ঘিরে মা-বাবার চোখে রঙিন স্বপ্ন। নাটও রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে বিসিএসের জন্য পড়ছে। তবে এই পড়ুয়া নাট একদিন পাশের গাছের মৌচাকে তাকাতেই পড়ে যায় প্রেমে। সোনালি বরন লাস্যময়ী হানির হাসিতে সে ঘায়েল। তার মন বসে না পড়ার টেবিলে। ওদিকে সুদর্শন-মেধাবী নাটের দেখা পেয়ে হানির মাথার নাটবল্টুও হয়ে যায় ঢিলা। সে বালিশ চেপে ধরে অকারণে হাসে, একা একা কথা বলে। নাট গাইতে শুরু করে সিনেমার প্রথম গান, ‘মৌচাক মার্কেটে হলো দেখা...!’

২.

এভাবে কেটে যায় বেশ কটা দিন। বৈশাখ মাসের এক বিকেলে শুরু হয় উথালপাতাল ঝড়। কাঁঠালগাছ বাড়ি খায় জামগাছে আর আমগাছের দিকে ঝুঁকে পড়ে কাজুবাদামের ডাল। প্রকৃতির নিজ হাতে দেওয়া এ সুযোগে নাট গিয়ে ধাক্কা খায় হানিদের চাকে। নাটের ছোঁয়ায় শিহরিত হানি, আর হানির স্পর্শে নাট দিওয়ানা। অদূরে একটা বজ্রপাত হতেই শুরু হয় সিনেমার দ্বিতীয় গান। বৃষ্টিতে ভিজে হানি গাইতে থাকে, ‘সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে...।’ আহা, রুপালি পর্দায় রবীন্দ্রসংগীতের কী অনুপম প্রয়োগ!

আর তখনই রানি চৌধুরী তার প্রহরী-সরদার শাহিনকে ডেকে হুকুম দেন, ‘শাহিইইন, নাটের পোলাকে ধরে ফেল!’ শাহিন হুকুম তালিম করতেই রানি চৌধুরী নাটের দিকে আঙুল তুলে বলেন, ‘ওই বাদাইম্যার বাচ্চা বাদাইম্যা, তোর এত বড় সাহস, আমার মেয়ের দিকে হাত বাড়াস! কত টাকা তুই চাস, বল!’

তবে এই মাখামাখি হানির মা রানি চৌধুরীর নজর এড়ায় না। প্রহরীর সংখ্যা বাড়িয়ে হানিকে তিনি করে ফেলেন চাকবন্দী। নাটের বুকে জেগে ওঠে বেদনার বালুচর। হানিকে না দেখে একদিনও গাছে ঝুলে থাকা যে দায়! আর তাই তো সে মৃদু বাতাসেও চেষ্টা করে হানিদের মৌচাকের দিকে ছুটে যেতে। চেষ্টা করতে করতে একদিন সে ছুঁয়েও ফেলে হানিকে। আর তখনই রানি চৌধুরী তার প্রহরী-সরদার শাহিনকে ডেকে হুকুম দেন, ‘শাহিইইন, নাটের পোলাকে ধরে ফেল!’

শাহিন হুকুম তালিম করতেই রানি চৌধুরী নাটের দিকে আঙুল তুলে বলেন, ‘ওই বাদাইম্যার বাচ্চা বাদাইম্যা, তোর এত বড় সাহস, আমার মেয়ের দিকে হাত বাড়াস! কত টাকা তুই চাস, বল!’

নাটও চুপ করে থাকার ছেলে নয়। বুক চিতিয়ে দাঁড়ায়। চিৎকার করে বলে, ‘চৌধুরী সাহেবা, টাকা দিয়ে ভালোবাসা কেনা যায় না! মনে রাখবেন, গরিব হতে পারি, তবে আমরাও বাদাম!’

ব্যস, শুরু হয়ে যায় বেদম প্রহার। প্রহরীদের হুলের আঘাতে জর্জরিত নাট কেবল বলতে থাকে, ‘হানি, আই লাভ ইউ...!’ ওদিকে হানিও চিৎকার করে বলে, ‘নাট, আই লাভ ইউ!’

৩.

হানি-নাটের প্রেমের কারণে আমগাছের রোষানলে পড়ে কাজুবাদামগাছ। শুরু হয় গাছের ডালে ডালে লড়াই, পাতায়–পাতায় যুদ্ধ। আর রানি চৌধুরীর বাহিনী আক্রমণ করে কাজুগাছের প্রতিটা বাদামকে। আচমকা এক আঘাতে গাছ থেকে টুপ করে খসে পড়ে প্রাণ হারান স্বয়ং নাটের গুরু! এই গুরুর কাছেই বিসিএস দিয়ে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্রণা পেয়েছে নাট। তাই সে আর বসে থাকতে পারে না। ‘ইয়াল্লি’ বলে ঝাঁপিয়ে পড়ে মৌচাকে, রানি চৌধুরীর বাহিনীকে করে দেয় ছত্রভঙ্গ। নিজেও হয় ক্ষতবিক্ষত। অবস্থা বেগতিক দেখে বসে থাকেন না রানি চৌধুরী। তার ইশারায় ঠিক পরদিনই কিছু লোক এসে কেটে নিয়ে যায় মৌচাক, অর্থাৎ হানি চলে যায় এক মধু ব্যবসায়ীর হাতে। হানি নাকি চলে যাবে কোনো এক সুপারশপে! ওর নতুন নাম হবে ‘সুন্দরবনের খাঁটি মধু’।

নাটের মাথা ঠিক থাকে না। সে ‘মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলা’ গানটি গাইতে গাইতে গাছ থেকে খসে পড়ে আত্মহত্যা করতে চায়। কিন্তু তার আগেই গাছ থেকে ওকে পেড়ে নিয়ে যান ওই মধু ব্যবসায়ী। প্রকৃতির কী অমোঘ নিয়তি, মধু ব্যবসায়ীর দোকানে গিয়ে নাট দেখা পায় তার প্রাণপ্রিয় হানির! বিরহকাতর হানি তখন বোতলে বন্দী, তার সোনালি বরন হয়ে গেছে কালচে। তবে নাটের দেখা পেয়ে সে যেন প্রাণ ফিরে পায়। খুশিতে আটখানা নাট অবশ্য বন্দী হয় আরেকটা বোতলে। জায়গা হয় দোকানের আরেক তাকে। ‘এত কাছে তবু এত দূর’! হানি-নাটের মিলন কি আর হবে? দর্শকের মনে যখন এই প্রশ্ন, ঠিক তখন ঘটে যায় দুর্ঘটনা। মধু ব্যবসায়ীর হাত থেকে পড়ে যায় নাটের বোতল। কাচের বোতলটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে মেঝেতে। সিনেমার টুইস্ট ছিল এখানেই। হাতের কাছে আর কোনো বোতল না পেয়ে মধু ব্যবসায়ী কী যেন ভাবেন। তাকান অর্ধেক খালি হানির বোতলের দিকে। মেঝে থেকে নাটকে তুলে রেখে দেন হানির ওই বোতলেই! দর্শকের তালিতে ফেটে পড়ে প্রেক্ষাগৃহ!

মধু ব্যবসায়ী বুদ্ধি খাটিয়ে হানি ও নাটের প্রচারণা চালান ফেসবুকে, শুরু হয় রমরমা ব্যবসা
ছবি: আনস্প্ল্যাশ

৪.

হানি-নাটের এই মিলনেই কিন্তু সিনেমার শেষ নয়! টুইস্ট আরও ছিল। মধু ব্যবসায়ী বুদ্ধি খাটিয়ে হানি ও নাটের প্রচারণা চালান ফেসবুকে। শুরু হয় রমরমা ব্যবসা। আর এতেই হানি-নাটের প্রেম হয়ে যায় অমর। বোতলে বোতলে ছড়িয়ে পড়ে তাদের ভালোবাসার রসায়ন। জামশেদ মজুমদার পরিচালিত, মার্ক জাকারবার্গ প্রযোজিত ‘হানি-নাটের প্রেমকাহিনি’ সিনেমাটি শেষ হয় গানে গানে, ‘তোমার মাঝে নামব আমি, তোমার ভেতর ডুব, তোমার মাঝে কাটব সাঁতার, ভাসব আমি খুব...!’