আজ ট্রাম্প ‘গরিব’ বলে

ডোনাল্ড ট্রাম্প
এএফপি

এক বিতিকিচ্ছি অবস্থায় আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্যাপিটল হিলে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে হামলার ঘটনায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। অনেকে আবার শুধু অভিযোগ নয়, ওই অরাজক পরিস্থিতির জন্য সরাসরি ট্রাম্পকেই দায়ী করছেন। এই ঘটনার পর থেকে একেবারেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন একদা পরাক্রমশালী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এমন এক অবস্থায় পড়েছেন যে চাইলে বলতেই পারেন, ‘আজ আমি গরিব বলে...!’

আজ আমি গরিব বলে—এই বাক্যের অর্থ নানাবিধ। ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য আক্ষরিক অর্থে গরিব নন মোটেও। তবে গ্যাঁড়াকলে যে পড়েছেন, সেটি নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আর হাতি গর্তে পড়লে কী হয়, তা কে না জানে! যুক্তরাষ্ট্রে তো অন্য হাতিরাও এখন ট্রাম্পের পেছনে লেগেছে। কেউ তাঁকে দেওয়া ডিগ্রি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে, কেউ নিষিদ্ধ করে দিচ্ছে, আবার কেউ বলছে—ট্রাম্পের দলকে ডলার দেবে না। ট্রাম্প টুইটার-ফেসবুকে একটু সরব ছিলেন, কর্তৃপক্ষ এখন তা-ও বন্ধ করে দিচ্ছে। ফলে একরকম ‘একঘরে’ হয়ে পড়ছেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। স্ট্যাচু অব লিবার্টির দেশে কোনো প্রেসিডেন্টের এমন দশা কেউ কি কখনো দেখেছে?

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কীভাবে চারপাশ থেকে আক্রমণের শিকার হচ্ছেন, তা জানা যাক। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা গেল, ট্রাম্প ন্যাশনাল গলফ ক্লাবে ৪টি বড় বড় গলফ টুর্নামেন্ট আয়োজনের চুক্তি ছিল। ক্যাপিটল হিলে হামলা ও জো বাইডেনের জয় স্বীকার করতে না চাওয়ায় ট্রাম্পের মালিকানাধীন এই ক্লাবের সঙ্গে টুর্নামেন্ট আয়োজনের চুক্তি বাতিল করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এর উত্তরে ট্রাম্প অর্গানাইজেশন বলেছে, এমন পদক্ষেপে তারা হতাশ। এভাবে চুক্তি বাতিল করার এখতিয়ার কারও থাকতে পারে না।

কেউ ডিগ্রি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে, কেউ নিষিদ্ধ করে দিচ্ছে, আবার কেউ বলছে ট্রাম্পের দলকে ডলার দেবে না
কোলাজ: একটু থামুন

এদিকে ফেসবুকিংয়েও শান্তি নেই ট্রাম্পের। সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন ট্রাম্প। অন্ততপক্ষে ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা ছাড়ার আগপর্যন্ত আর ফেসবুকে লগ–ইন করতে পারবেন না তিনি। টুইটার তো ট্রাম্পের প্রতি নিষেধাজ্ঞা চিরস্থায়ী করতে চাইছে। স্ন্যাপচ্যাট, ইউটিউব, রেডিট—সামাজিক যোগাযোগের এসব মাধ্যমও বসে নেই। এরা কেউ ট্রাম্প–সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে, কেউ আবার অ্যাকাউন্টের ব্যবহার সীমিত করে দিয়েছে।

আরও পড়ুন

অনলাইন পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম স্ট্রাইপ বলে দিয়েছে, ট্রাম্পের প্রচারাভিযানের ওয়েবসাইট–সংক্রান্ত কোনো লেনদেন তারা আর করবে না। বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে সেবা দেয় শপিফাই নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা জানিয়েছে, ট্রাম্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি অনলাইন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এগুলো চালাত ট্রাম্প অর্গানাইজেশন ও ট্রাম্পের প্রচার দল।

এসবেই শেষ নয়। যুক্তরাষ্ট্রের চারটি বৃহৎ ব্যাংক হলো জেপিমরগান চেজ, গোল্ডম্যান স্যাকস, সিটিগ্রুপ ও মরগ্যান স্ট্যানলি। এই ব্যাংকগুলো রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুদান দিয়ে থাকে। ক্যাপিটল হিলের ঘটনার পর এরা সবাই অনুদান দেওয়া বন্ধ ঘোষণা করেছে। একই পথে হাঁটার কথা জানিয়েছে শিপিং কোম্পানি ফেড-এক্স, ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল হোটেল ও পানীয় প্রস্তুতকারী কোম্পানি কোকা–কোলা। ফলে রিপাবলিকান পার্টি অর্থাৎ ট্রাম্পের দলের পক্ষে অর্থ জোগাড় কঠিন হয়ে পড়তে পারে। এর মধ্যে মরগ্যান স্ট্যানলি বলেছে, কংগ্রেসের যেসব সদস্য ভোটের ফল প্রত্যয়নের বিরোধিতা করেছেন, তাঁদের আপাতত কোনো অনুদান দেওয়া হবে না। মাস্টারকার্ড ও আমেরিকান এক্সপ্রেসও একই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে।

ডিগ্রির কাগজ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন কী করবেন? একমাত্র কাটাকুটি খেলায় ব্যবহার করা যেতে পারে হয়তো। সম্মানসূচক ডিগ্রির সম্মানই যে রইল না। কাটাকুটি খেললেই আর কী!

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট ওলটানোর পক্ষে অর্থাৎ ট্রাম্পের পক্ষ নিয়েছিলেন যেসব কংগ্রেস সদস্য, তাঁদের যন্ত্রণা এখানেই শেষ নয়। এঁদের অনুদান না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমাজন, এটিঅ্যান্ডটি ও কমকাস্ট। আর কার্ড নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হলমার্ক তো সরাসরি অর্থ ফেরত চেয়ে বসেছে। ট্রাম্পের পক্ষে উচ্চকণ্ঠ দুই রিপাবলিকান সিনেটর জশ হলি ও রজার মার্শালের কাছে এই দাবি জানিয়েছে হলমার্ক। এই দুজনের প্রচারে হলমার্ক যে অবদান রেখেছিল, তা ফেরত চেয়েছে এখন। এই দুই সিনেটর অবশ্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

এসব তো গেল কানাকড়ির হিসাব। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া ট্রাম্পের ‘সম্মানে’ও এখন টান পড়েছে। এখন পর্যন্ত দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জানিয়েছে যে ট্রাম্পকে দেওয়া সম্মানসূচক ডিগ্রি তারা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয় দেশটির বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেওয়া সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম লেহাই বিশ্ববিদ্যালয়, অবস্থান পেনসিলভানিয়ায়। গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টি এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়। বোর্ড অব ট্রাস্টি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ১৯৮৮ সালে ট্রাম্পকে দেওয়া ডিগ্রিটি তারা সর্বসম্মতিক্রমে প্রত্যাহার ও বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াগনার কলেজ অন স্ট্যাটেন আইল্যান্ড। ২০০৪ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেওয়া ডিগ্রি প্রতিষ্ঠানটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যাও কলেজটি দেয়নি।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই দুটি ডিগ্রির কাগজ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন কী করবেন? একমাত্র কাটাকুটি খেলায় ব্যবহার করা যেতে পারে হয়তো। সম্মানসূচক ডিগ্রির সম্মানই যে রইল না। কাটাকুটি খেললেই আর কী! রাগে-দুঃখে ট্রাম্প এখন তাই বলতেই পারেন, আজ ‘গরিব’ বলেই তাঁর ‘সম্মান’ নিয়ে এভাবে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে! এই খেলা বন্ধে কি সংশ্লিষ্ট রেফারির প্রতি আবেদন জানাবেন তিনি? নাকি রেফারির ওপরও হামলা চলবে? চলতেও পারে, কে জানে!

তথ্যসূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, সিএনএন, দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, বিবিসি ও এনওয়াইএসবিএ ডট ওআরজি

আরও পড়ুন