কী করবে এখন জাপান?

প্রতীকী ছবি। ছবি: রয়টার্স
প্রতীকী ছবি। ছবি: রয়টার্স

মে মাসের শেষ দিকে যখন মনে করা হচ্ছিল, করোনার বিরুদ্ধে বিজয়ের কাছাকাছি চলে এসেছে জাপান, দেশের আত্মবিশ্বাসী নেতৃত্ব তখন নিয়ন্ত্রণ শিথিল করে আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার পথ নাগরিকদের জন্য করে দেয়। সরকারের সেই উদ্যোগের পেছনে আরেকটি চিন্তা ছিল। সেটি হলো জরুরি অবস্থা চলতে থাকায় অর্থনীতির ওপর যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে, তা কাটিয়ে ওঠায় সাহায্য করা।

মে মাসের শেষ দিকে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হলে ধীরে ধীরে আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসতে শুরু করে রাজধানী টোকিও এবং দেশের অন্য বড় শহরগুলোতে। অনেকেই তখন ধরে নিয়েছিলেন, জীবনের গতি আবারও স্বাভাবিক হয়ে আসা সময়ের ব্যাপার মাত্র। সে রকম অবস্থায় করোনাভাইরাস যে যাই যাই আওয়াজ তুলেও আবারও ফিরে এসে আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরাতে শুরু করবে, সেই চিন্তা অনেকেই করেননি। তবে গত এক সপ্তাহের হিসাব–নিকাশ বলে দিচ্ছে ভাইরাসমুক্ত হওয়া জাপানের জন্য এখনো কতটা অলীক ধারণা রয়ে গেছে!

জুন মাসের প্রথমার্ধে ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার দৈনিক হিসাব যথেষ্ট নিচুতে বজায় থাকার পর, মাসের শেষ দিক থেকে আবারও তাতে গতি সঞ্চারিত হয়েছে। দৈনিক শনাক্ত হওয়ার হিসাব ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে। জুলাই মাসে এসে তা এখন নতুন করে উদ্বেগ ছড়াতে শুরু করেছে। এবারের সংক্রমণ বৃদ্ধির ব্যতিক্রমী একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সংক্রমণের ক্লাস্টার বা কেন্দ্রীভূতকরণ মূলত রাজধানী টোকিওতে সীমিত থাকা। তবে এতে অবশ্য নীতিনির্ধারকদের প্রফুল্ল হওয়ার কারণ নেই। কেননা জাপানের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক–দশমাংশের বসবাস টোকিওতে এবং টোকিওর বিপর্যয় দেশের অন্যান্য এলাকাকে খুব সহজেই প্রভাবিত করতে পারে।

টোকিওর গভর্নর ইয়ুরিকো কোইকে আজ শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ৩ জুলাই রাজধানীতে ১২৪টি নতুন সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে। গতকাল ১০৭টি নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর তড়িঘড়ি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার দৈনিক হিসাব আবার ১০০ ছাড়িয়ে গেলেও ব্যবসাসংক্রান্ত কর্মকাণ্ড সীমিত রাখার মতো আগের পরিস্থিতিতে ফিরে যাওয়া তিনি প্রত্যাশা করছেন না। বরং মেট্রোপলিটন সরকার রাজধানীর যেসব এলাকায় সংক্রমণের হার বেশি বলে শনাক্ত হচ্ছে, সেই এলাকাগুলোকে লক্ষ্য করে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে উল্লেখ করেন ইয়ুরিকো কোইকে।

জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার পর সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার দৈনিক সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকলেও গত মাসের ২৪ তারিখে হঠাৎ করে তা ৫০ অতিক্রম করে যায়। তখন ধারণা করা হয়েছিল, এটা হয়তো একক এক দিনের বিচ্ছিন্ন কোনো হিসাব। তবে এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে নীতিনির্ধারকদের তা কিছুটা দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল। বিশেষ করে টোকিওর গভর্নরের জন্য এটা অতিরিক্ত মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ আগামী রোববারের গভর্নর নির্বাচনে তিনি হচ্ছেন অগ্রবর্তী প্রার্থী এবং সংক্রমণের লাগাম ধরা না গেলে ভোটারদের তা নিরুৎসাহিত করতে পারে। এ কারণেই তিনি এখন রাজধানীবাসীর এই বলে আশ্বস্ত করতে চাইছেন যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়নি এবং জনগণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিয়ে আরেকটু সচেতন হলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।

এবারের সংক্রমণ প্রধানত রাতের বিনোদনের জায়গাগুলো থেকে বিস্তৃত হতে থাকা চিহ্নিত হওয়ায় টোকিওর বিনোদন এলাকাগুলো, বিশেষ করে মানুষের বেশি ভিড় যেখানে ইদানীং লক্ষ করা গেছে, সেই জায়গাগুলো এড়িয়ে চলার জোরালো আহ্বান গভর্নর আবারও জানিয়েছেন। এবারের দ্বিতীয় পর্যায়ে ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তরুণদের মধ্যে ভাইরাস বিস্তৃত হওয়া। গতকাল এবং আজকের শতাধিক শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের দলে ২০ থেকে ৪০–এর ঘরে বয়সীরা হচ্ছেন প্রায় ৭০ শতাংশ। করোনাভাইরাস তরুণদের বেলায় বৃদ্ধদের মতো মারাত্মক ঝুঁকি হয়ে দেখা দেয় না বলে সেদিক থেকে এটা স্বাস্থ্যকর্মীদের আশ্বস্ত করলেও তরুণদের নজরদারিতে আনার প্রয়োজনীয়তা ভাইরাসের এই নতুন আঘাত অনেকটাই বাড়িয়ে দিচ্ছে।

অন্যদিকে জাপান সরকার চাইছে না আবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পথে এগিয়ে যেতে। অর্থনীতির ইতিমধ্যে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির হিসাব সরকারকে সেই পথে পুনরায় অগ্রসর হওয়া থেকে বিরত রাখছে। মন্ত্রিসভার চিফ কেবিনেট সেক্রেটারি ইয়োশিহিদে সুগা যেমন গতকাল নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রয়োজনীয়তা এখনো দেখছে না। তবে পরিস্থিতির অবনতি হলে কোন পথে সরকার অগ্রসর হবে, তা অনিশ্চিত রয়ে গেছে। সরকার এখন তাকিয়ে আছে করোনার টিকা আবিষ্কারের দিকে এবং মনে করছে সেই পথে সাফল্য দ্রুতই হয়তো আসবে।