আহা, ঈদ কার্ড

রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে আর্চিজের শো রুমে সাজানো ঈদ কার্ড। ছবি: আবদুস সালাম
রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে আর্চিজের শো রুমে সাজানো ঈদ কার্ড। ছবি: আবদুস সালাম

১২ বছরের ইশরা জানেই না ঈদ কার্ড কী? তার কাছে যখন জানতে চাইলাম এবার কোনো বন্ধুকে ঈদ কার্ড দিয়েছ কি না? কিছুটা অবাক হয়েই ও জানাল, আম্মুর ফোনটা নিয়ে বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানাব। কার্ড তো কখনো কিনিনি। এমন উত্তর পেলাম আইডিয়াল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী প্রিমার কাছ থেকেও। সে বলল, ‘বাসায় ওয়াই ফাই কানেকশন আছে। সবাইকে ফেসবুকে শুভেচ্ছা জানাই।’

বর্তমান কিশোর তরুণ প্রজন্মের কাছে ‘ঈদ কার্ড’ এখন অতীত। একটা সময় ছিল ঈদ এলেই ছোট-বড় সবাই একে অন্যকে শুভেচ্ছা জানাত ঈদ কার্ড দিয়ে। শহর-গ্রাম সবখানেই ছিল ঈদ কার্ড দেওয়ার প্রচলন। তবে গেল কয়েক বছর ধরেই হঠাৎ করেই যেন হারিয়ে যেতে বসেছে ঈদ কার্ড দেওয়ার রেওয়াজ। শুধু অফিস আদালতে করপোরেট শুভেচ্ছা জানাতে এখন ঈদ কার্ডের কিছুটা ব্যবহার দেখা যায়।

বছর পাঁচেক আগেও ঈদ এলে পাড়া-মহল্লার অলিতে-গলিতে ছোট ছোট দোকানে ঈদ কার্ড সাজিয়ে নিয়ে বসত এলাকার কিশোররা। বর্ণিল সব কার্ড। কার্ডগুলোতে লেখা থাকত ঈদের বিভিন্ন শুভেচ্ছা, কবিতা, ছড়া। মজার মজার সব ছবির সঙ্গে লেখা থাকত আগামীর শুভেচ্ছাবার্তা। এখন আর এসব দেখা মেলায় ভার।

বেসরকারি অফিসে কর্মরত নাসরিন আক্তার ছোটবেলার স্মৃতি হাতড়ে জানালেন, ‘২০ বছর আগে যখন স্কুলে পড়তাম সব সময় বন্ধুদের ঈদ কার্ড দিতাম। বন্ধুরাও আমাকে ঈদ কার্ড দিত। কেউ না দিলে বন্ধুত্বই যেন ফিকে হয়ে যেত।’

নাসরিন জানালেন, এখন তাঁর মেয়ে জানেই না ঈদ কার্ড বলে কিছু আছে। বন্ধুদের ইন্টারনেট ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ইমো পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানায় তাঁর মেয়ে।

এখন হলমার্ক, আড়ং, আর্চিজ গুটিকয়েক গিফট হাউসে এখনো কিছু ঈদ কার্ড পাওয়া যায়। কিন্তু এসব দোকানে ঈদের এই ভরা মৌসুমেও ক্রেতাশূন্য।

বর্তমান কিশোর তরুণ প্রজন্মের কাছে ‘ঈদ কার্ড’ এখন অতীত।ছবি: আবদুস সালাম
বর্তমান কিশোর তরুণ প্রজন্মের কাছে ‘ঈদ কার্ড’ এখন অতীত।ছবি: আবদুস সালাম

রাজধানীর হাতিরপুলে আর্চিজের বড় শো রুমে দুদিন গিয়েও দেখা মেলেনি কোনো কার্ডের ক্রেতা। বিক্রেতারা জানালেন, এবারের ঈদে একটি কার্ডও বিক্রি হয়নি তাঁদের। বিক্রি কম বলে এখন কার্ডের দামও কিছুটা কম জানালেন তারা। শোরুমের বিক্রেতা ফারজানা জানান, ভারত থেকে কার্ডগুলো আনা হয়। প্রতিটি কার্ডের ডিজাইন খুবই সুন্দর। তবে একদমই ক্রেতা নেই এই কার্ডের।

হলমার্কের একটি শোরুম ঘুরে জানা গেল, ঈদ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৪টি কার্ড বিক্রি করেছেন তাঁরা। কেউই এখন আসেন না ঈদ কার্ড কিনতে। আগে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা আসত কার্ড কিনতে। পাঁচ বছর ধরেই ঈদ মৌসুমে আলাদা করে কোনো কার্ডের চাহিদা নেই।

ফয়সাল আলম নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা জানালেন, ব্যক্তিগতভাবে এখন আর ঈদ কার্ড দেখেন না তিনি। এখন ঈদ কার্ড নয়, সবাই শুভেচ্ছা জানানোর কাজটি সেরে নিচ্ছেন মোবাইল ফোন আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তবে অফিস থেকে ঈদের আগে গ্রাহকদের ঈদ কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।

বিভিন্ন বেসরকারি অফিসের গণসংযোগ কর্মকর্তারাও একই কথা জানালেন, ঈদের আগে গ্রাহকদের বিভিন্ন শুভেচ্ছা উপহারের সঙ্গে ঈদ কার্ড দেওয়া হয়। তবে অধিকাংশ গ্রাহককে ঈদসহ যেকোনো উৎসবেই ই-মেইলের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানানো হয়।

আসলে ঈদকার্ড এখন টিকে আছে করপোরেট শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যম হিসেবে। এমনটাই জানালেন আজাদ প্রোডাক্টসের জেনারেল ম্যানেজার মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ঈদ কার্ড এখন আর ব্যক্তিগত পর্যায়ে নেই। করপোরেট অফিস, ব্যাংক, বিমা ও রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তির পক্ষ থেকে কার্ডের অর্ডার আসে আমাদের। এবারে আমাদের পুরো ব্যস্ততাই গেছে করপোরেট অর্ডারে। পাইকারি ও খুচরা ক্রেতাদের আগমন একেবারে নেই বললেই চলে।

মোস্তাফা কামাল আরও জানান, একটা সময় কিশোর-তরুণেরা প্রচুর আসত ঈদ কার্ড কিনতে। আমরা লাখ লাখ শুভেচ্ছাবার্তা দেওয়া ঈদকার্ড বিক্রি করেছি। এখন মোবাইলের কারণে ওটা একদমই নেই।