রেজওয়ানুলের ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণায়ক যন্ত্র

মো. রেজওয়ানুল ইসলাম ছবি: স্বপ্ন নিয়ে
মো. রেজওয়ানুল ইসলাম ছবি: স্বপ্ন নিয়ে

চিরকুট ব্যান্ডের ‘জাদুর শহর’ এই ঢাকাতে প্রায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে উঁচু উঁচু দালান। যেটুকু ফাঁকা জায়গা আছে, সেখানেও আশপাশের বাড়িঘরের তোয়াক্কা না করে দিব্যি গড়ে উঠছে নতুন কোনো বহুতল ভবন। এসব দালান নির্মাণের জন্য ‘পাইলিং’-এর সময় সৃষ্ট কম্পনেই মূলত আশপাশের বাড়িঘরগুলো ঝুঁকির মুখে পড়ে যায়।
‘আমি শুরুতে এই কম্পনের কারণে কী ধরনের ক্ষতি হবে তা বোঝার জন্য কম্পনের মাত্রা নির্ণয়ের একটা ডিভাইস বানাই। পরে ভেবে দেখলাম, একই কম্পন তো ভূমিকম্পের কারণেও হতে পারে। তাহলে নিশ্চয় একই যন্ত্র দিয়ে ভূমিকম্পের মাত্রাও নির্ণয় করা যাবে’—এই চিন্তা থেকেই শুরু। নিজের তৈরি সিসমোগ্রাফের (ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণায়ক যন্ত্র) পেছনের কথা জানাচ্ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মো. রেজওয়ানুল ইসলাম।

.
.

রিখটার স্কেলে যেমন সিসমিক তরঙ্গের মাত্রা দেখা যায় বা ভূমিকম্পের তীব্রতা দেখায়, রেজওয়ানুলের তৈরি ডিভাইসেও একই মাত্রা দেখা যাবে। পার্থক্য, এই ডিভাইস ক্যালকুলেটরের থেকে সামান্য বড় আকৃতির হওয়ায় সহজেই বহনযোগ্য এবং এর মূল্য প্রকৃত সিসমোগ্রাফের তুলনায় খুবই কম। রেজওয়ানুল জানালেন, ‘মাত্র ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় তৈরি করা যাবে এই সিসমোগ্রাফ।’
২০১২ সালে প্রথমে কম্পন পরিমাপের একটি ‘প্রোটোটাইপ’ তৈরি করেছিলেন রেজওয়ানুল। দেখিয়েছিলেন বুয়েটের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মেহেদী আনসারিকে। প্রথম দেখাতেই স্যারের বাহবা পান। এরপর শেষ বর্ষে এসে স্যারের নেতৃত্বেই গবেষণার বিষয় হিসেবে বেছে নেন সিসমোগ্রাফকে।
‘যন্ত্রটা আসলেই ঠিকমতো কাজ করে কি না বোঝার জন্য স্যারের পরামর্শে বুয়েট ল্যাবে “শেক টেবিল” ব্যবহার করে আমরা একটা পরীক্ষা করি। এই টেবিলের সঙ্গে মাইক্রো টিমুর নামে একটা ক্যালিব্রেটেড ডিভাইস আছে। আমার জানামতে, এই যন্ত্র বাংলাদেশে শুধু বুয়েটেই আছে, আর এর দাম প্রায় কোটি টাকা। মজার ব্যাপার হলো, পরীক্ষা করে দেখলাম, কোটি টাকার মাইক্রো টিমুর আর আমার তৈরি যন্ত্র প্রায় কাছাকাছি মান দেখায়।’ নিজের আবিষ্কারের কথা বলছিলেন রেজওয়ানুল।
বাবা ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) বিভাগের অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম ও মা শামসুন্নাহারের তিন ছেলের মধ্যে সবার ছোট রেজওয়ানুলের ছোটবেলা থেকেই ইলেকট্রনিকসের প্রতি আগ্রহ ছিল।
গত বিশ্বকাপে যেমন বাতি জ্বলা এলইডি স্টাম্প (জিংস স্টাম্প) আকর্ষণ করেছিল রেজওয়ানুলকে। ঘরে বসেই তিন জিংস স্টাম্প তৈরি করেছেন। সে সময় জিংসের উদ্ভাবক ব্রন্টি ইকারম্যান জানিয়েছিলেন, এই স্টাম্পের প্রতিটি বেলের দাম নতুন আইফোনের সমান! অথচ রেজওয়ানুলের এই এলইডি বেল তৈরি করতে খরচ হয়েছে মাত্র হাজার দশেক টাকা! চাইলে ইউটিউবে (https://www.youtube.com/watch?v=iPgg-mMCjv4) তাঁর তৈরি জিংস স্টাম্পের ভিডিও দেখে নিতে পারেন।
ছোট-বড় আরও বহু অবাক করে দেওয়ার মতো আবিষ্কার আছে তাঁর ঝুলিতে। তবে বাণিজ্যিক উদ্দেশে এসব ব্যবহারের ইচ্ছে নেই এই বুয়েট-পড়ুয়া বিজ্ঞানীর। নিজের মতো করে আবিষ্কারের আনন্দ তিনি উপভোগ করেন।