জীবনযাত্রার মানে বিশ্বের যে শীর্ষ ১০ দেশ এগিয়ে আছে

জীবনযাত্রার মানের কথা উঠলেই আমাদের মাথায় প্রথমেই আসে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হওয়ার কথা। বেশির ভাগেরই ধারণা, খাবার, বাসস্থান, মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও স্থায়ী কর্মসংস্থানের মতো বিষয়গুলোর ওপরই জীবনযাত্রার মান নির্ভর করে। তবে ২০২৫ সালের শেষে এসে আমরা এমন দেশ দেখতে পাই, যেখানে কেবল মৌলিক অধিকারই নিশ্চিত হয় না, বরং সেসব দেশে প্রাধান্য পায় চাকরির নিরাপত্তা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, পরিবেশের মান, এমনকি নাগরিকদের প্রতি রাষ্ট্রের মনোভাবও।
বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে এই সূচকগুলো নির্ণয় করে। যেমন নাম্বিওর জীবনযাত্রার মানসূচকে নাগরিকের ক্রয়ক্ষমতা, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবার মান, জীবনযাত্রার খরচ, বাড়ি কেনার সামর্থ্য, যানজট, দূষণ ও জলবায়ুর মতো বিষয়গুলো একসঙ্গে বিবেচনা করা হয়।
নাম্বিও অনুসারে, ২০২৫ সালের জীবনযাত্রার মানসূচকে শীর্ষে থাকা ১০টি দেশের তালিকা এখানে দেওয়া হলো—দেশগুলো কেবল বসবাসের জন্যই নয়, বরং আরাম, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতার জন্য ভ্রমণকারীদের কাছেও আকর্ষণীয়।

১. লুক্সেমবার্গ

লুক্সেমবার্গ
ছবি: পেক্সেলস

২০২৫ সালের জীবনযাত্রার মানসূচকে ২১৮.২ স্কোর নিয়ে তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে লুক্সেমবার্গ। উচ্চ ক্রয়ক্ষমতা, চমৎকার স্বাস্থ্যসেবা (৭৫.১) এবং জীবনযাত্রার মধ্যম ব্যয় (৭৩.৫) এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত দেশগুলোর মধ্যে একটি করে তুলেছে। লুক্সেমবার্গের নিরাপত্তার স্কোর ৬৬.০, যা শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এর জলবায়ুর মানের স্কোর ৮২.৬।

আয়ের তুলনায় সম্পত্তির দাম তুলনামূলকভাবে বেশি থাকলেও লুক্সেমবার্গের আরাম, উন্নত সেবা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নাগরিকদের জন্য অসাধারণ জীবনযাত্রার মান নিশ্চিত করে।

আরও পড়ুন

২. নেদারল্যান্ডস

নেদারল্যান্ডস
ছবি: পেক্সেলস

নেদারল্যান্ডস ২১৬.৫ স্কোর অর্জন করেছে। যার মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী নিরাপত্তা সূচক (৭৪.২) এবং উৎকৃষ্ট স্বাস্থ্যসেবার মান (৮০.৬), যা নাগরিকদের জন্য নির্ভরযোগ্য জীবনযাত্রা নিশ্চিত করে। ক্রয়ক্ষমতা যথেষ্ট শক্তিশালী, স্কোর ১৪৪.৫; এবং জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ন্ত্রণযোগ্য, ৬৮.১।

যানজট তুলনামূলকভাবে কম (২২.৭) এবং জলবায়ু সূচকও অনুকূলে (৮৬.৮)। সামাজিক অবকাঠামো ও জনসাধারণের সুযোগ-সুবিধার কারণে নেদারল্যান্ডস পেশাজীবীদের কাছে শীর্ষস্থানীয় দেশ হিসেবে বিবেচিত।

৩. ডেনমার্ক

ডেনমার্ক
ছবি: পেক্সেলস

২১৫.১ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ডেনমার্ক। দেশটি নিরাপত্তা (৭৪.০) ও স্বাস্থ্যসেবার মানের (৭৮.৩) দিক থেকে সেরা। নাগরিকের ক্রয়ক্ষমতা শক্তিশালী, স্কোর ১৫২.৭ এবং জীবনযাত্রার ব্যয় ৭৪.১। ফলে দেশের নাগরিকদের মধ্যে আয় ও ব্যয়ের সামঞ্জস্য থাকে। মাঝারি যানজট (২৭.৭) এবং ভারসাম্যপূর্ণ জলবায়ু (৮১.২) দৈনন্দিন জীবনকে আরও আরামদায়ক করে। জনকল্যাণ, শিক্ষা ও নিরাপত্তার সমন্বয়ে ডেনমার্ক দীর্ঘমেয়াদি বসবাসের জন্য পছন্দের শীর্ষে থাকা দেশ।

৪. ওমান

ওমান
ছবি: পেক্সেলস

এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে এ তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ওমান। ডেনমার্কের মতো ওমানেরও স্কোর ২১৫.১ পয়েন্ট। তবে ডেনমার্কের চেয়ে দেশটি এগিয়ে আছে নিরাপত্তা সূচকে (৮১.৪)। জীবনযাত্রার ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম (৩৯.৩), আর ক্রয়ক্ষমতা যথেষ্ট শক্তিশালী (১৭০.৯)। জলবায়ু সূচক ৭১.৩ আর স্বাস্থ্যসেবা স্কোর ৬৩.৩। বিদেশিদের জন্য ওমান একটি আকর্ষণীয় দেশ। কারণ, এটি নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ভারসাম্যপূর্ণ সমন্বয় বজায় রাখে।

আরও পড়ুন

৫. সুইজারল্যান্ড

সুইজারল্যান্ড
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

সুইজারল্যান্ড ২১০.৯ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। দেশটির অর্জন করেছে শক্তিশালী নিরাপত্তা স্কোর ৭৩.৩, ক্রয়ক্ষমতার সূচক ১৮৩.৫। জীবনযাত্রার ব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশি (১০৬.৮) হলেও স্বাস্থ্যসেবার সূচক ৭০.৮। যাতায়াত ও মনোরম পরিবেশ (৮০.৬) জীবনযাত্রার মানকে উন্নত করে। যদিও এ দেশে সম্পদের দাম বেশি (১০.৭), তবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও উচ্চ মানের অবকাঠামোর মিশেল সুইজারল্যান্ডকে জীবনযাত্রার মানে শীর্ষ স্থান ধরে রাখতে সহায়তা করেছে।

৬. ফিনল্যান্ড

ফিনল্যান্ড
ছবি: পেক্সেলস

ফিনল্যান্ডের জীবনযাত্রার মানসূচক ২০৮.৩। দেশটি নিরাপত্তা দিক দিয়ে (৭৩.৫) এবং স্বাস্থ্যসেবার মানে (৭৭.৪) এগিয়ে আছে। দেশটির ক্রয়ক্ষমতার মান ভালো (১৪২.৯) এবং দূষণমাত্রা খুব কম (১১.৭)। জলবায়ু সূচক ৫৪.৪। ফিনল্যান্ড ঠান্ডার দেশ হলেও সামাজিক কল্যাণব্যবস্থার কারণে এটি ভারসাম্যপূর্ণ। ফিনল্যান্ডের জনসেবা, পরিবেশগত মান এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নাগরিকদের বসবাসের জন্য অত্যন্ত সহায়ক জীবনযাত্রার পরিবেশ নিশ্চিত করে।

৭. নরওয়ে

নরওয়ে
ছবি: পেক্সেলস

নরওয়ে ১৯৯.২ স্কোর অর্জন করেছে। স্বাস্থ্যসেবা (৭৫.৮) এবং নিরাপত্তার (৬৭.২) দিক থেকে এটি একটি শক্তিশালী দেশ। ক্রয়ক্ষমতা যথেষ্ট শক্তিশালী (১৩৩.৩) এবং জীবনযাত্রার ব্যয় তুলনামূলক কম (৭৮.৯)। যানজটের স্কোরে এটি মাঝারি স্থানে রয়েছে (২৬.৩)। জলবায়ু সূচক (৭০.৯) এর বাইরের উচ্চ জীবনমান নিশ্চিত করে। নরওয়ের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, জনসেবা এবং সামাজিক নিরাপত্তার সমন্বয় এর উচ্চ জীবনযাত্রার মানে অবদান রাখে।

আরও পড়ুন

৮. আইসল্যান্ড

আইসল্যান্ড
ছবি: পেক্সেলস

আইসল্যান্ড ১৯৮.০ স্কোর নিয়ে এ তালিকার ৮ নম্বর স্থানে রয়েছে। আইসল্যান্ডের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ (৭৪.২)। স্বাস্থ্যসেবা (৬৭.৯), এবং জীবনযাত্রার ব্যয় মাঝারি মানের (৯৪.৫)। ক্রয়ক্ষমতা (১২৪.৩) আরামদায়ক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করে। যানজটে কম সময় (২১.২) এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশ (দূষণসূচক ১৬.৭) ও অনুকূল জলবায়ু (৬৮.৮) জীবনযাত্রার মানকে উন্নত করে। বিশেষত এর প্রকৃতির সৌন্দর্য প্রশান্তি আনে।

৯. অস্ট্রিয়া

অস্ট্রিয়া
ছবি: পেক্সেলস

১৯৭.৭ স্কোর নিয়ে তালিকার নবম স্থানে রয়েছে অস্ট্রিয়া। নিরাপত্তা (৭১.৭) এবং স্বাস্থ্যসেবার মান (৭৮.৫) উচ্চ। জীবনযাত্রার ব্যয় যুক্তিসংগত (৬৭.৬) এবং ক্রয়ক্ষমতা ১২২.০। সম্পত্তির দামের তুলনায় আয়ের হার কিছুটা বেশি (১১.৮)। তবে যাতায়াতে কম সময় (২৩.২) লাগে এবং ভালো জলবায়ুর (৭৬.৬) কারণে এটি দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে সহজ করে তোলে। অস্ট্রিয়ার অবকাঠামো, সামাজিক নিরাপত্তা এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য দেশটির জীবনযাত্রার মান উন্নত করে।

১০. জার্মানি

জার্মানি
ছবি: পেক্সেলস

১৯৫.২ স্কোর নিয়ে জার্মানি শীর্ষ ১০–এ স্থান করে নিয়েছে। নিরাপত্তা ভালো (৬০.৪), স্বাস্থ্যসেবা নির্ভরযোগ্য (৭১.৭) এবং ক্রয়ক্ষমতা শক্তিশালী (১৪৪.৩)। জীবনযাত্রার ব্যয় মাঝারি (৬৪.৭)। যদিও যাতায়াতে বেশি সময় লাগে (২৯.৬)। তবে দূষণ (২৮.৮) ও জলবায়ু (৮২.৮) সহনীয়। সামাজিক অবকাঠামো, অর্থনৈতিক সুযোগ এবং পরিবেশগত মানের কারণে জার্মানি উচ্চ মানের জীবনযাত্রার জন্য একটি বিশ্বব্যাপী মানদণ্ড হিসেবে এখনো শীর্ষ স্থানে আছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়া

আরও পড়ুন