সেই দিনের কথা মনে পড়লে আজও আমার হাসি পায়, নিষাদের পায় কি না জানি না

ভালোবাসার গল্প আহ্বান করেছিল ‘ছুটির দিনে’। বিপুল সাড়া দিয়েছেন পাঠকেরা। কেউ লিখেছেন দুরন্ত প্রেমের গল্প, কেউবা শুনিয়েছেন দূর থেকে ভালোবেসে যাওয়ার অনুভূতি। এখানে পড়ুন বাছাই একটি লেখা।

মডেল: রিচি ও স্বাধীন
ছবি: ছুটির দিনে

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অদ্ভুত একটা নিয়ম চালু আছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের কোনো দোকানে গিয়ে কিছু খেতে পারবেন না। ক্যাম্পাসের সিনিয়রদের প্রদত্ত আরও কিছু নিষেধাজ্ঞার মধ্যে এটাও ছিল, প্রথম বর্ষের কেউ প্রেমিক বা প্রেমিকাকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে হাঁটাহাঁটি করতে পারবেন না। র‌্যাগ নামের অদৃশ্য শিকলে যখন পা বাঁধা, তখনকার এক ফেব্রুয়ারির সকালে ক্যাফেটেরিয়ার বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে পায়চারি করছি। সাতসকালে ক্লাস। কেউ নাশতা করে আসতে পারেনি। এ দিকে আমরা ক্যাফেতেও ঢুকতে পারব না। তাহলে ক্যাফের কোনো ওয়েটারকে দিয়ে খাবার আনিয়ে মাঠে বসে খাই?

‘রূপা, বেশি পাকামো করিস না, বিপদে পড়বি। তোর জন্য সবাই র‌্যাগ খাব’, মন্তব্যটা করেই হেঁটে ক্লাসে চলে গেল অন্তিক। ওর পিছু পিছু আরও কয়েকজন। বাকিরা ক্যাফের সামনেই দাঁড়িয়ে রইলাম।

আরও পড়ুন

তখনই ক্যাফের ভেতর থেকে বাংলা টিস্যুতে (পুরোনো পত্রিকা টুকরা) হাত মুছতে মুছতে আমাদের দিকে এগিয়ে এল নিষাদ। আমি একটু চমকে উঠেও নিজেকে সামলে নিলাম। কারণ, ছেলেটি আর কেউ নয়, স্বয়ং সে; আমার যাকে সঙ্গে নিয়ে প্রথম বর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে হাঁটাহাঁটি নিষেধ! নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্যাম্পাসে আসতে ওকে বারণ করেছিলাম, তাই আমার নতুন বন্ধুদের সঙ্গেও ওর পরিচয় হয়নি।

‘কিছু লাগবে আপু?’ আমার দিকে সকৌতুকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল নিষাদ।

কিছু বলার আগেই সঙ্গে থাকা অভুক্ত বন্ধুরা ক্যাফের বয় ভেবে অর্ডার দেওয়া শুরু করল, ‘চা, চিকেন চপ, নুডলস, স্যান্ডউইচ...’

আরও পড়ুন

নিষাদ এই ক্যাম্পাসের ছাত্র নয়। তাই অনায়াসে ক্যাফেতে আয়েশ করে সকালের নাশতা করে বেরিয়েছে। ওই পরিস্থিতিতে আমি কিছু বলতেও পারছি না, কোনোরকমে হাসি চেপে ওদের কাণ্ড দেখছি। আনাড়ি ওয়েটারের নাজেহাল দশা দেখে যে কারোরই হাসি পাবে। ওর অবস্থা আরও করুণ হলো, যখন আমার বন্ধুরা খেয়েদেয়ে ওকে সত্যিকারের বয় ভেবে টিপস দিতে চাইল!

ওই দিনের কথা মনে পড়লে আজও আমার হাসি পায়। নিষাদের পায় কি না, তা জানি না। কারণ, জীবনানন্দ দাশের কবিতার মতো, আজ আমরা এক নক্ষত্রের নিচে, একই আলো–পৃথিবীর পাড়ে আছি, তবু কেউ কাউকে খুঁজি না বহুদিন। হয়তো সত্যিই ‘প্রেম ধীরে মুছে যায়’।