কেমন ছিল হাল্ক হোগানের জীবন

২৪ জুলাই মারা গেছেন রেসলিং–জগতের বড় তারকা হাল্ক হোগান। আশির দশকের অন্যতম এই রেসলার জনপ্রিয় ছিলেন রিংয়ে, নানা কারণে হয়েছেন আলোচিত–সমালোচিত। পেশাদার রেসলিংকে সারা বিশ্বে জনপ্রিয় করে তোলার অন্যতম কারিগরদের একজন এই হাল্ক হোগানের ব্যক্তিগত জীবনটা কেমন ছিল?

২৪ জুলাই মারা গেছেন রেসলিং–জগতের বড় তারকা হাল্ক হোগানছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

টেরি থেকে হাল্ক

হাল্ক হোগানের আসল নাম টেরি জিন বোলিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ায় জন্ম হলেও বেড়ে উঠেছেন ফ্লোরিডায়। ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিল গিটার বাজাবেন। একটি ব্যান্ডের সঙ্গে গিটারও বাজাতেন।

হাল্ক হোগানের সুঠাম দেহ দেখে কুস্তি লড়তে উৎসাহ দেন অনেকে। ফ্লোরিডার কুস্তিগিরদের দেখে তাঁর মনেও আগ্রহ জন্মায়। সেখান থেকে ধীরে ধীরে রেসলিং–জগতে পা রাখেন ৬ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার টেরি।

১৯৮২ সালে এক ম্যাচে হাল্ক হোগান (ডানে)
ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

কয়েক দিনের মধ্যেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে যান টেরি বোলিয়া। শুরুতে তাঁর ‘রিং নেম’ ছিল দ্য সুপার ডেস্ট্রয়ার। দুই বছরের মধ্যে ফ্লোরিডা চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে নাম লেখান ওয়ার্ল্ড রেসলিং ফেডারেশনে। ডব্লিউডব্লিউএফে যোগ দেওয়ার পরই বদলে ফেলেন নাম।

মার্ভেল কমিকসের অন্যতম জনপ্রিয় চরিত্র ‘হাল্ক’ থেকে নিজের রিং নেম রাখেন হাল্ক। সে সময় ডব্লিউডব্লিউএফের প্রধান ভিন্স ম্যাকমোহন তাঁর হাল্ক নামের পেছনে জুড়ে দেন ‘হোগান’ অংশটি। দুইয়ে মিলে টেরি হয়ে যান হাল্ক হোগান।

হাল্ক ও বিতর্ক

প্রায় দুই দশকের বেশি সময় হাল্ক হোগান ছিলেন রেসলিংয়ের অন্যতম বড় তারকা। রিংয়ে তেমন সফলতার দেখা না পেলেও তাঁর বিশাল শরীর আর অঙ্গভঙ্গিতে মাতিয়ে রাখতেন দর্শককে। ভক্তদের চাওয়াপাওয়ার দিকে তাঁর মনোযোগ ছিল সব সময়।
হাল্ক হোগানের চওড়া সাদা গোঁফ আর পেশিবহুল শরীর একটা ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি করে দিয়েছিল। ম্যাচ শেষে পরনের গেঞ্জি ছিঁড়ে নিজের নামকরণের সার্থকতার প্রমাণ দিতেন যেন।

ছয়বারের ডব্লিউডব্লিউই চ্যাম্পিয়ন হোগান জনপ্রিয় ছিলেন তাঁর বাচনভঙ্গির জন্যও
ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

ছয়বারের ডব্লিউডব্লিউই চ্যাম্পিয়ন হোগান জনপ্রিয় ছিলেন তাঁর বাচনভঙ্গির জন্যও। তাঁর বিখ্যাত সংলাপ—‘সে ইয়োর প্রেয়ারস অ্যান্ড ইট ইয়োর ভিটামিনস’। নিজের বাহু দেখিয়ে বলতেন, ‘২৪ ইঞ্চি পাইথন’। এ সবই তাঁকে সাধারণ দর্শকের কাছে করে তুলেছিল জনপ্রিয়। তবে হাল্ক হোগানের অমন বাচনভঙ্গি ও কথাবার্তা নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। বিশেষ করে বর্ণবাদী মন্তব্য, রেসলারদের শরীর নিয়ে বাজে মন্তব্য করে সব সময় শিরোনামে উঠে আসতেন তিনি।

আরও পড়ুন

হলিউডে হাল্ক হোগান

১৯৮২ সালের ‘রকি ৩’ সিনেমায় হলিউড তারকা সিলভেস্টার স্ট্যালোনের সঙ্গে হাল্ক হোগান (ডানে)
ছবি: ভিডিও থেকে

পেশাদার রেসলিংয়ের পাশাপাশি হলিউডেও অভিষেক হয় হাল্ক হোগানের। রক, জন সিনা, ডেভ বাতিস্তাদের যেমন রিং আর হলিউড একসঙ্গে সামলাতে দেখা যায়, এর সূচনা করেছিলেন আদতে হাল্ক হোগান। তাঁকে যাতে শুধু রেসলার মনে না হয়, তাই নিজের নামের আগে ‘হলিউড’ শব্দটাও জুড়ে দেন একসময়। সে সময় তাঁকে ডাকা হতো ‘হলিউড হাল্ক হোগান’ নামে।

হলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি ‘রকি’ সিরিজের তৃতীয় সিনেমা ‘রকি থ্রি’তে দেখা গেছে হাল্ক হোগানকে।

আরও পড়ুন

কেলেঙ্কারি

রিংয়ের বাইরে হাল্কের জীবন নিয়ে ছিল অনেক আলোচনা-সমালোচনা। বিয়ে করেছেন তিনবার। এক ছেলে আর এক মেয়ের বাবা। অভিযোগ আছে, একাধিকবার জড়িয়েছেন বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে।

২০১৫ সালে বর্ণবাদী মন্তব্যসংবলিত একটি ভিডিও ফাঁস হলে হাল্ক হোগানের ভাবমূর্তি বড় ধাক্কা খায়। যদিও ব্যক্তিগত ভিডিও ফাঁস করার কারণে মামলা করে ১৪ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ পান হাল্ক। আর ওই জরিমানা গুনে দেউলিয়া হয়ে যায় মার্কিন ইন্টারনেট মিডিয়া কোম্পানি ‘গকার মিডিয়া’।

রিংয়ের বাইরে হাল্কের জীবন নিয়ে ছিল অনেক আলোচনা-সমালোচনা
ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

কয়েক বছর ধরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে দেখা গেছে হাল্ক হোগানকে। সারা জীবন বিতর্ক ছিল তাঁর সঙ্গী। তবে যতই বিতর্ক থাকুক, পেশাদার রেসলিংয়ের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন অন্যতম প্রভাবশালী তারকা হিসেবে।

সূত্র: সিএনএন, ন্যাশনাল পোস্ট

আরও পড়ুন