প্রথম হওয়ার অনুভূতি আসলে কেমন?
তানজিম মুনতাকা: যেহেতু সব সময়ই ডাক্তার হতে চেয়েছি, এ রকম একটা ফলের অপেক্ষাতেই ছিলাম। ফল জানার পর যে অনুভূতি হয়েছিল, তা কয়েকটা শব্দে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। মুহূর্তটা আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
এ ধরনের সাফল্য পেতে কী করণীয়?
তানজিম মুনতাকা: আমরা যখন কলেজজীবন শুরু করি, তখনই কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার বীজ রোপণ শুরু হয়। আমি প্রথম বর্ষ থেকেই মৌলিক বিষয়ে ভালো ধারণা রাখার চেষ্টা করতাম। এ কারণেই উচ্চমাধ্যমিকের পর অনেক বেশি রিভিশন দিতে পেরেছি। সব সময় লক্ষ্য ঠিক করে পড়াশোনা করতাম—এই সময়ের মধ্যে এতটুকু আমাকে পড়তে হবে। আমি ওই পড়াটুকু শেষ না করে উঠতাম না। পড়ার মাঝখানে বিরতি দিয়ে দিয়ে পড়তাম। এতে শরীরে শক্তি সঞ্চিত থাকত। বিরক্তি আসত না।
আগামীর ভর্তি পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কী পরামর্শ থাকবে?
তানজিম মুনতাকা: পড়াশোনায় ধারাবাহিক থাকতে হবে। একটানা পড়াশোনা না করে আমার মনে হয় পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ৫-১০ মিনিটের বিরতি নেওয়া যেতেই পারে। এইটুকু সময়ে যেকোনো ভালো লাগার কাজ করতে পারেন, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন। প্রথম বর্ষ থেকে যতটা সম্ভব পড়াশোনা এগিয়ে রাখতে হবে। উচ্চমাধ্যমিকের জন্য ভালো প্রস্তুতি নিতে হবে। মৌলিক বিষয়ে ঘাটতি রাখা যাবে না। অনেক বেশি রিভিশন দিতে হবে। আর বেশি বেশি পরীক্ষা দিতে হবে।
পড়াশোনার বাইরে আপনার আর কিসে আগ্রহ?
তানজিম মুনতাকা: আমি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক দিয়েছি। স্কুলে পড়তাম যখন, আমার পক্ষে যত ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেওয়া সম্ভব, প্রায় সবই করেছি। স্কুলে গানের দলে ছিলাম, স্কুল-লিডার ছিলাম। হেডগার্ল হওয়ার সুবাদে অসংখ্য প্রোগ্রাম আয়োজন করেছি। বিভিন্ন ফেস্টে অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করেছি। অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছি। তবে কলেজে উঠে সহশিক্ষা কার্যক্রমে আর থাকা হয়নি। বাসা থেকে কলেজের দূরত্ব অনেক বেশি ছিল। সবকিছুর সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে এসব করা হয়নি।
কঠিন সময়ে আপনি কীভাবে নিজেকে সামলেছেন?
তানজিম মুনতাকা: কোচিংয়ের পরীক্ষাতে অনেক সময় আশানুরূপ ফল আসত না। অনেক খারাপ লাগত তখন। নিজেকে প্রশ্ন করতাম, চেষ্টা করছি অথচ আশানুরূপ ফল আসছে না কেন? আবার মনের মধ্যে একটা ভয়ও কাজ করত—কী হবে? এ সময়টাতে মা-বাবাই উৎসাহ-প্রেরণা দিয়ে পাশে ছিলেন। উৎসাহ হারিয়ে ফেললে আমি কখনো ইউটিউবে গিয়ে মোটিভেশনাল ভিডিও দেখিনি। আমার মনে হতো যে মোটিভেশন দরকার, সেটা একমাত্র আব্বু-আম্মুর কাছ থেকে পেতে পারি। তারা সব সময় মোটিভেশন দিয়েছেন। তাঁদের মুখে হাসি দেখার জন্য ভালো ফল করতে চেয়েছি।
প্রস্তুতি পর্ব কেমন ছিল?
তানজিম মুনতাকা: কলেজের টেস্ট পরীক্ষার পরই সিরিয়াসভাবে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। টেস্ট পরীক্ষা দেওয়ার পর মোটামুটি আত্মবিশ্বাস ছিল, উচ্চমাধ্যমিকে ভালো করব। আসলে উচ্চমাধ্যমিকের প্রস্তুতি টেস্টের মধ্যেই শেষ করে ফেলেছিলাম। টেস্টের পর ভর্তি পরীক্ষার একটা অ্যাডভান্সড প্রস্তুতি নিয়ে রাখি। মেডিকেলের জন্য আলাদাভাবে পড়তে হয়। চেষ্টা করেছিলাম, টেস্টের পরই যেন সেটা হয়ে যায়। আমাদের এইচএসসি পরীক্ষা শর্ট সিলেবাসে হয়েছিল। কিন্তু মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা ছিল ফুল সিলেবাসের ওপরে। অতিরিক্ত ১৯টা অধ্যায় নতুন করে পড়তে হয়েছে। জীববিজ্ঞানে যে অধ্যায়গুলো নতুন যুক্ত হয়েছিল, সেগুলো আগেভাগে পড়ে ফেলার চেষ্টা করেছি। যার কারণে ভর্তি পরীক্ষার সময় তেমন বেগ পেতে হয়নি। অনেকবার রিভিশন দিতে পেরেছি। এতবার রিভিশন দিয়েছি যে শেষদিকে একটা চ্যাপটার পড়তে ১৫-৩০ মিনিটের মতো সময় লাগত। অনেক বেশি পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করতাম। দৈনিক দেখা যেত, ১০০ নম্বরের ৬-১০টা পরীক্ষা দিচ্ছি।
পরীক্ষা কি শুধু মেডিকেলেই দিয়েছেন?
তানজিম মুনতাকা: মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার পর আর কোথাও অংশগ্রহণ করিনি। আমার কাছে মনেও হয়নি, অন্য পরীক্ষাগুলো দেওয়ার দরকার আছে। কারণ, শুরু থেকে মেডিকেলের জন্যই পড়াশোনা করেছি। মেডিকেলে না হলে তখন ব্যাকআপ হিসেবে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চেষ্টা করতাম।
ভবিষ্যতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
তানজিম মুনতাকা: একজন ভালো মানুষ, একজন ভালো চিকিৎসক হতে চাই। যে সেক্টরেই যাই না কেন, নিজের সেরাটা দিতে চাই। আমার গ্রামের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই; আমার আব্বু-আম্মু আর আমি সব সময়ই চেয়েছি সেটা।