স্ট্রেঞ্জার থিংসের ‘ইলেভেন’ কেন আবার চুল ফেলে দিতে চান
মিলি ববি ব্রাউন নামে পরিচিত হওয়ার আগেই বোধ হয় ‘ইলেভেন’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। নেটফ্লিক্সের বিখ্যাত সিরিজ স্ট্রেঞ্জার থিংস–এর পঞ্চম সিজন নিয়ে আবার পর্দায় এই তারকা। ‘কল হার ড্যাডি’ পডকাস্টে নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। পড়ুন তাঁর নির্বাচিত কথামালা।
স্ট্রেঞ্জার থিংস–এ কাজ করতে করতেই আমরা বড় হয়েছি। যখন ছোট ছিলাম, তখন শুটিংয়ে অনেক মজা করতাম। যত ব্যস্ত শিডিউলই থাকুক, আমরা বাচ্চারা সব জোট বেঁধে থাকতাম। সব সময় হাসতাম। পেছনে তাকালে মনে হয়, সত্যিই দারুণ সময় ছিল।
প্রথম সিজনে আমাকে মাথা কামিয়ে ফেলতে হয়েছিল। এটা নিয়ে আমি মোটেও চিন্তিত ছিলাম না—সত্যি বলছি। চুল কাটার সময় দুঃখ পাইনি, উদ্বিগ্নও হইনি; বরং ভেবেছি, ‘দারুণ, তার মানে আমি ভালো করছি।’
কিন্তু কয়েক মাস পর ঝামেলাটা টের পেলাম। আমার তখন ১১ বছর বয়স। তিন দিন পরপর মাথা ‘শেভ’ করতে হতো, যেন চুল বড় না হয়। চুল একটু বড় হলেই আবার কেটে ফেলতাম। তখন একসময় মনে হলো, ‘সমবয়সী মেয়েদের অনেকে পছন্দ করা শুরু করেছে। আমাকে কেউ পছন্দ করছে না কেন?’ অনিশ্চয়তায় ভুগতে শুরু করেছিলাম।
তাই পরচুলা পরা শুরু করলাম। রাস্তায় অনেকেই বাজে মন্তব্য করত, বুলিং করত। তবু মাথা কামিয়ে ফেলার সেই অভিজ্ঞতা আমার খুব প্রিয়। আবার যদি সুযোগ পাই, আবার চুল ফেলে দেব। আমি আমার স্বামী জেক (বনজোভি)কে প্রায়ই বলি, ‘প্রথম সন্তানের জন্ম হলে আমি মাথা কামিয়ে ফেলব।’ আমার মতে, এটা একধরনের মুক্তির অনুভূতি দেয়।
প্রত্যেক মেয়েরই এটা একবার চেষ্টা করা উচিত। সন্তান জন্ম দেওয়ার সময়ের আগে করলেও ভালো। কারণ, চুল তো একটা বাড়তি ঝামেলা। না থাকলেই বরং ভালো! মেয়েদের জন্য এটা একটা মুক্তির অভিজ্ঞতা। ছোটবেলায় পেয়েছি, এবার নারী হিসেবে পেতে চাই।
নিজের বাড়ি
কাজের পারিশ্রমিক পাওয়ার পর একবার শ্যানেলের একটা সানগ্লাস কিনতে খুব ইচ্ছা হলো। মা–বাবা বললেন, ‘ভালো লেগেছে যখন, কিনে ফেলো!’ আমি আকাশ থেকে পড়লাম, ‘মানে!’
সত্যি বলতে সম্পদের মধ্যে বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতা তো আমার নেই। আমাদের কখনো টাকাপয়সা ছিল না। কখনো নিজের বাড়ির মালিকও ছিলাম না। তাই টাকার ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকি। এটা আমার একটা প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মা–বাবা বলেন, এটা ভালো—টাকার মূল্য বুঝে চলা, অযথা অপচয় না করা জরুরি।
প্রথমবার যখন মা–বাবার সঙ্গে আমাদের নিজস্ব একটা বাড়ি কিনলাম, ভীষণ ভালো লাগছিল। ভাড়া বাড়ি, বাড়িওয়ালা কী বলবে, কুকুর কার্পেটে পটি করলে লুকিয়ে রাখতে হবে—এসব নিয়ে ভাবতে হচ্ছিল না। সত্যি বলতে, আমাদের পরিবারটা একটু খ্যাপাটে। ভাড়া বাড়িতে থাকলে কখনোই জামানত ফিরে পেতাম না। তাই যখন নিজের বাড়ি কিনলাম; মনে হলো, ‘চলো, দেয়াল রং করি!’ অর্থাৎ নিজের মতো করে সাজাই। সেটা সত্যিই দারুণ অনুভূতি ছিল।
অন্য রকম দুনিয়া
আমি মনে করি, ‘পুরুষ নায়ক’ আমরা অনেক দেখেছি। কিন্তু এখন এমন ‘নায়ক’ দরকার, যাঁদের দেখে কিশোরীরা বুঝতে পারবে, তারাও দুনিয়া বাঁচানোর অভিযানে নামতে পারে। অবশ্যই আমি বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে চাই। কিন্তু আমার কাছে একটা জিনিস খুব গুরুত্বপূর্ণ—যদি কোনো ছোট মেয়ে আমার কাজটা দেখে, সে কেমন অনুভব করবে? সে কি নিজেকে শক্তিশালী মনে করবে? সে কি অনুপ্রেরণা পাবে? এখন পর্যন্ত যত কাজ করেছি, সবই সেই অনুভূতি দিয়েছে।
গণমাধ্যম কখনো কখনো যেন ইচ্ছা করেই আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মানুষ প্রায়ই বলে যে আমি নাকি দেখতে বয়স্ক। খুব শুনতে পাই, ‘ওহ খোদা, ওকে তো দেখলে মনে হয় বয়স ৪০ হয়ে গেছে।’ তখন ভাবি, ‘হ্যাঁ, তোমরা আমাকে ১০ বছর বয়সে দেখেছিলে, এখন আমি ২১। ১০ বছর কেটে গেছে। মানুষ বড় হয়। আমার মুখটাও বড় হয়েছে। এ ব্যাপারে আমি কীই–বা করতে পারি?’
আমার উচ্চারণ নিয়েও কত রকম কথা। ছোটখাটো বিষয় নিয়েও লোকে কথা বলে। আমি চাই, এই ইন্ডাস্ট্রিতে বেড়ে ওঠা আর কাউকে যেন এসব সহ্য করতে না হয়।
তবে সত্যি বলতে, এখন আর এসব আমাকে বিরক্ত করে না। আমি চাইলে বলতে পারতাম যে, ‘হ্যাঁ, আমি কষ্ট পাই।’ আগে পেতাম, সত্যিই পেতাম। ছোটবেলায় এসব খুব ছুঁয়ে যেত। নিজেকে বদলানোর চেষ্টা করতাম, যেন সবাইকে খুশি করতে পারি। কিন্তু এখন আমি এমন জায়গায় আছি, যেখানে বুঝি—হ্যাঁ, আমার কথা বলার ধরন বদলায়, আমার মুখ বড় হয়, আমি অনেক মেকআপ করি। এটাই আমি। এতে আমার মজা লাগে। তুমি আমাকে বলে দিতে পারবে না, আমি কীভাবে মেয়ে হব, কীভাবে নারী হব। তোমার দুনিয়ায় আমি থাকি না। তুমি থাকতে পারো, কিন্তু আমি আমার জন্য অন্য রকম দুনিয়া বানিয়েছি।
আমি সব সময় বলি, কোনো দৈত্য একটা ইচ্ছা পূরণ করার সুযোগ যদি আমাকে দিত, তাহলে আমার ইচ্ছা হতো—এমন পর্যবেক্ষণ, এমন সমালোচনার মধ্য দিয়ে কেউ যেন কখনো না যায়। কারণ, এসব একজন মানুষকে বদলে দেয়। তখন আমরা দুনিয়াকে অন্যভাবে দেখা শুরু করি, সবার মধ্যে খারাপটাই আগে চোখে পড়ে।
আমার মনে হয়, সংবাদকর্মীদের আবার আদবকায়দা শেখা দরকার। তাঁদের স্কুলে ফিরে গিয়ে শেখা উচিত কীভাবে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হয়, কীভাবে সদয় হতে হয়, কীভাবে বুঝতে হয় যে আমরা সবাই বড় হচ্ছি, ভুল করছি। আর শেষ পর্যন্ত যে মানদণ্ড আর কলঙ্ক মেয়েদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়—এটা ভীষণ হাস্যকর, বিশেষ করে হলিউডে। দুনিয়ার নানা জায়গায় দেখেছি, কিন্তু হলিউডে খুব কাছ থেকে দেখেছি তরুণ অভিনেত্রীরা কীভাবে এসবের ভেতর দিয়ে যায়। এটা মানুষকে ক্লান্ত করে, বদলে দেয়। এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেন আর কাউকে যেতে না হয়। (সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত)