টেকসই ফ্যাশন ভাবনা ছড়িয়ে দিতে চান আফসানা ফেরদৌসী

কিছু নকশা দেখলেই বোঝা যায়, এটা কোন ব্র্যান্ড বা ডিজাইনারের কাজ। কিছু নকশা সরবে ঘোষণা করে ডিজাইনারের নাম। হতে পারে সেটা পোশাকের কোনো কাট, উপকরণ কিংবা পোশাকের ওপর করা কোনো কাজ। এমনই একজন ডিজাইনার আফসানা ফেরদৌসী। তিনি প্রশংসিত টেকশই ফ্যাশন নিয়ে কাজ করার জন্য।

আফসানা ফেরদৌসী, টেকসই ফ্যাশন ডিজাইনার

আফসানা ফেরদৌসীর কাছে পোশাক শুধু পরিধেয়ই নয়, প্রতিবাদের ভাষা
ছবি: সুমন ইউসুফ

আফসানা ফেরদৌসীর কাছে স্টাইল হলো একটি ক্যানভাস, যেখানে নিজেকে বিভিন্নভাবে তুলে ধরা যায়। তাঁর স্টাইল স্টেটমেন্ট নীরব অথচ শক্তিশালী। এটা এমন এক ভাষা, উচ্চারণ না করেও যা অনেক কিছু প্রকাশ করে। তিনি এমন পোশাক ডিজাইন করতে ভালোবাসেন, যা পরিধানকারীকে আত্মবিশ্বাস জোগাবে, স্বাচ্ছন্দ্য দেবে, তুলে ধরবে নিজস্বতা। আফসানা ফেরদৌসী বলেন, ‘আমার কাছে পোশাক শুধু পরিধেয়ই নয়, প্রতিবাদের ভাষা, ভালোবাসার ভাষা বা আনন্দের ভাষা। আমি সব সময় চাই, পোশাকটি যেন হয় মেড ইন বাংলাদেশ এবং ডিজাইনড ইন বাংলাদেশ। প্রতিটি সুতায় যেন থাকে আমাদের দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ইতিহাসের ছাপ।’

আরও পড়ুন
টেকসই উপকরণ নিয়ে আফসানা কাজ করতে ভালোবাসেন
ছবি: সুমন ইউসুফ

ডিজাইন করার সময় প্রথমেই ভাবেন, পোশাকটি কার জন্য বানাবেন, কোন পরিবেশে এটি পরা হবে এবং কীভাবে মানুষটির সঙ্গে এটি সম্পর্ক তৈরি করবে। আফসানা বলেন, ‘সব সময় সচেতন থাকি যেন আমার কাজ পরিবেশের ওপর কম প্রভাব ফেলে। তাই টেকসই উপকরণ, পুনর্ব্যবহৃত ফেব্রিক এবং বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কারিগরি বেছে নিই। প্রকৃতি আমার ভাবনার অমূল্য অংশ। নদী, অরণ্য, পশুপাখি, মানুষ, মহাকাশ, কল্পনা ও মানবিক অনুভূতি। এসব আমি প্রকাশ করি নকশিকাঁথা, হ্যান্ড পেইন্ট, হাতের কাজ, ফেব্রিক ম্যানিপুলেশন, প্যাচওয়ার্ক ও প্রাকৃতিক রঙের মাধ্যমে। আমি এমন ডিজাইন তৈরি করি, যা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মানুষ পরতে পারবে। বিশ্বমঞ্চে যেন গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হয়, এই লাইন-ডিজাইনড ইন বাংলাদেশ।’

আফসানা নিজে অনাড়ম্বর অথচ গভীর জীবনধারা পছন্দ করেন, তাঁর ডিজাইনেও দেখা যায় সেই সারল্য আর চিন্তার গভীরতা
ছবি: সুমন ইউসুফ

আফসানা নিজে যেমন ধীরস্থির, অনাড়ম্বর অথচ গভীর জীবনধারা পছন্দ করেন, তাঁর ডিজাইনেও দেখা যায় সেই সারল্য আর চিন্তার গভীরতা। নিজের পছন্দের বিষয়ে এই ডিজাইনার বলেন, ‘আমি নিজে ইউনিক কিন্তু সাদামাটা কিছু পরতে ভালোবাসি, যা পরিধানে দেয় স্বাচ্ছন্দ্য, কিন্তু যার নিজস্ব ভাষা আছে। সাধারণত পোশাকে ঢিলেঢালা ও প্রাকৃতিক সিলুয়েট পছন্দ করি। আমার নকশা করা পোশাকের কাটগুলো শরীরের সঙ্গে যুদ্ধ করে না বরং শরীরকে সম্মান করে। আমার পোশাকের কাটগুলো সময়নিরপেক্ষ এবং চলাফেরায় দেয় স্বাচ্ছন্দ্য। আমাদের কিছু নির্দিষ্ট প্যাটার্ন এমনভাবে ডিজাইন করা, যাতে ছোট থেকে বড় সাইজ পর্যন্ত মানিয়ে যায়। অনেক ডিজাইন বয়সনিরপেক্ষ; যেকোনো বয়সের মানুষ পরতে পারে।’

পুনর্ব্যবহৃত ফেব্রিক তাঁর ডিজাইনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ
ছবি: সুমন ইউসুফ

উপকরণে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী হ্যান্ডলুম কটন, জামদানি, খাদি, লিনেন, তেন্সেলসহ প্রাকৃতিক কাপড়কে প্রাধান্য দেন আফসানা। পাশাপাশি পুনর্ব্যবহৃত ফেব্রিকও তাঁর ডিজাইনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কাজের প্রতিটি স্তরে নকশিকাঁথা, হাতের কাজ, অ্যাপ্লিক, প্রাকৃতিক রং, হ্যান্ড প্রিন্টসহ সবকিছুতেই বাংলাদেশের কারিগরদের স্পর্শ থাকে। ডিজাইনে থাকে বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি, কিন্তু নির্মাণ ও উপকরণে বাংলাদেশের মাটির গন্ধ।

আফসানার চাওয়া, হাতের কাজের ডিজাইনগুলো এমন হবে, যাতে একটি প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে পৌঁছাতে পারে। তবে ফাস্ট ফ্যাশনের যুগে এই ঐতিহ্য ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। সেটাকে ধরে রাখারই একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস নিজের নামে তৈরি ব্র্যান্ড আফসানা ফেরদৌসী।

আরও পড়ুন