রোগ প্রতিরোধী যোগব্যায়াম

মডেল: শামাছবি: খালেদ সরকার

আমাদের চারপাশে রয়েছে অগণিত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাকের মতো অণুজীব। এর কোনোটি যেমন মানবশরীরের জন্য ভালো, কোনোটি আবার ক্ষতিকর। অণুজীবের সঙ্গে মানবশরীরের লড়াই করার যে ক্ষমতা, সেটাই রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। প্রধান যে তিনটি কারণে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে, সেগুলো হলো পরিমিত সুষম খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক সুস্থতা।

খাবারের ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সুষম খাদ্যের ছয়টি উপাদান শর্করা (কার্বোহাইড্রেট), আমিষ (প্রোটিন), চর্বি (ফ্যাট), ভিটামিন, খনিজ (মিনারেল) ও পানি পরিমাণমতো থাকছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে। এসব খাদ্য উপাদান শরীরে ঠিকমতো জমা হচ্ছে কি না, সেটার জন্য উপযুক্ত ব্যায়াম প্রয়োজন। যোগাব্যায়াম বা ইয়োগার মাধ্যমে একদিকে যেমন শরীরের প্রতিটি তন্ত্র, অঙ্গ, কোষ সুস্থ থাকে; তেমনি মনও হয়ে ওঠে প্রফুল্ল।

নিচে যোগব্যায়ামের কয়েকটি আসনের বর্ণনা দেওয়া হলো, যেগুলো নিয়মিত চর্চা করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ঠিক থাকে বা কম থাকলে বৃদ্ধি পায়।

রাজ কপোতাসন

রাজ কপোতাসন
ছবি: খালেদ সরকার

যেভাবে করবেন: ডান পা শরীরের পেছন দিকে এমনভাবে টান টান করে বসুন, যেন ডান ঊরুর ওপরের অংশ ভূমি (ম্যাট) স্পর্শ করে থাকে। বাঁ হাঁটু এমনভাবে ভাঁজ করুন, যেন হাঁটু বুকের মাঝ বরাবর থাকে। বাঁ পায়ের ঊরুর বাইরের অংশ ভূমিতে লেগে থাকবে। এবার ডান হাত দিয়ে ডান পায়ের পাতা টেনে ধরুন।

শ্বাস নিতে নিতে মেরুদণ্ড পেছনের দিকে বাঁকান এবং বাঁ হাতকে বা কাঁধের ওপর দিয়ে নিয়ে ডান পায়ের পাতা ধরুন। এ ধাপ ঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য অন্য কারও সহায়তা নিতে পারেন বা ভাঁজ করা পা দেয়ালে ঠেস দিতে পারেন।

এরপর ডান হাত ডান কাঁধের ওপর দিয়ে নিয়ে ডান পায়ের পাতা ধরুন। মাথা সোজা রাখতে পারেন বা ধীরে ধীরে পেছনে হেলিয়ে ডান পায়ের পাতার তলে লাগিয়ে দিতে পারেন। আসনে থাকা অবস্থায় শ্বাস–প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন। আসন ছাড়ার সময় আসনটিতে যে ধারাবাহিকতায় এসেছিলেন, ঠিক তার বিপরীতে ফিরে যান। ডান পায়ের পর বাঁ পায়েও একইভাবে আসনটি করুন।

সময়কাল: প্রতিটি পায়ে ১৫–৩০ সেকেন্ড করে মোট ৪–৫ সেট করুন।

সতর্কতা: ঘাড়ে ব্যথা থাকলে মাথঅবশ্যই সোজা রাখবেন, পেছনে ঝোঁকাবেন না। সকালে খালি পেটে করলে ভালো।

উপকারিতা: মানসিক চাপ দূর করে। মনোযোগ বৃদ্ধি করে। প্রজননতন্ত্রের শক্তি বৃদ্ধি করে। হজমশক্তি বাড়ায়। পিঠের ব্যথা (ব্যাকপেইন) প্রশমিত করে। সর্বোপরি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।

কন্ধরাসন

কন্ধরাসন
ছবি: খালেদ সরকার

যেভাবে করবেন: সোজা হয়ে শুয়ে দুই হাঁটু মুড়ে পা দুটোকে নিতম্বের কাছে রাখুন। হাত দিয়ে পায়ের গোড়ালির ওপরের অংশ ধরুন। শ্বাস টেনে কোমর এবং নিতম্বকে ওপরের দিকে ওঠান। কাঁধ, মাথা এবং গোড়ালি মাটির ওপরেই থাকবে। ফিরে আসার সময় শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে ধীরে ধীরে কোমরকে মাটির সঙ্গে ঠেকান।

সময়কাল: ৩০–৬০ সেকেন্ড থাকুন। এভাবে ৪–৬ বার করুন।

উপকারিতা: গর্ভাশয়ের জন্য এ আসন ভালো। বন্ধ্যত্ব, অনিয়মিত পিরিয়ড, শ্বেত প্রদর, রক্ত প্রদর এ আসন দূর করতে সহায়ক। পুরুষের বীর্যস্খলন দূর করে। কোমরযন্ত্রণার উপশম করে।

অশ্ব সঞ্চালনাসন

অশ্ব সঞ্চালনাসন
ছবি: খালেদ সরকার

যেভাবে করবেন: বাঁ পায়ের পাতা সামনে রেখে দুই হাতের তালু পায়ের পাতার দুই পাশে রাখুন। চেষ্টা করবেন বাঁ পায়ের গোড়ালি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশ যেন ভূমির সাপেক্ষে লম্ব থাকে। ডান পা পেছনে এমনভাবে টান টান করে দিন যেন ডান হাঁটু ভূমি স্পর্শ করে থাকে। ডান পায়ের পাতা ছবির মতো রাখতে পারেন বা পেছনে টান টান করেও রাখতে পারেন। শ্বাস নিতে নিতে আস্তে আস্তে মেরুদণ্ড পেছনের দিকে বাঁকান। ঘাড়ে ব্যথা থাকলে মাথা সোজা রাখবেন।

আসনে থাকা অবস্থায় শ্বাস–প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন। ঠিক একইভাবে ডান পা সামনে দিয়েও করুন।

সময়কাল: প্রতিটি পা সামনে দিয়ে ১৫–৩০ সেকেন্ড থাকুন। ৩–৫ সেট করুন।

উপকারিতা: পেটের মাংসপেশির মালিশ হয়। স্নায়ুতন্ত্রের ভারসাম্য ঠিক রাখে। ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত। কিডনি ও যকৃতের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।