যোগাসন না পিলাটিস, ফিটনেসের জন্য কোনটি ভালো
যোগাসন ও পিলাটিস এই সময়ের জনপ্রিয় দুই শরীরচর্চার পদ্ধতি। তারকা থেকে সাধারণ মানুষ নিজের ফিটনেস ধরে রাখতে অনেকেই এই দুটি পদ্ধতির যেকোনো একটির দিকে ঝুঁকছেন। অনেকে আবার দুটি পদ্ধতির চর্চা করছেন সমন্বয় করে। তবে অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে, পিলাটিস না যোগাসন, শরীরের জন্য কোনটি বেশি কার্যকর? বা কোনটিতে বেশি উপকার?
যোগাসন
নিয়মিত যোগাসন করলে শরীর নীরোগ থাকে। এটি এমন এক শরীরচর্চা, যার কোনো নেতিবাচক দিক নেই। প্রয়োজন হয় না কোনো যন্ত্রপাতিরও। যেকোনো বয়সে যে কেউ যোগাসন শুরু করতে পারেন। জিমে গিয়ে যাঁরা শরীরচর্চার সময় পান না, তাঁদের জন্য যোগাসন আদর্শ। শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে যোগাসন বেশ কার্যকর। এ ছাড়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চেহারায় যে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে, তা প্রতিরোধের জন্যও যোগাসনে রয়েছে বিভিন্ন আসন। ঋতু পরিবর্তনে যে রোগগুলো শরীরে হানা দেয়, নিয়মিত যোগচর্চায় সেসব থেকেও মিলবে মুক্তি।
পিলাটিস
অপর দিকে পিলাটিসকে বলা হয় কার্ডিও ব্যায়াম। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জোসেফ পিলাটিস আহত সৈনিকদের নানা ধরনের শারীরিক কসরতের মাধ্যমে আবার সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতেন। ধারণা করা হয়, সেখান থেকেই পিলাটিস নামের শরীরচর্চার জন্ম। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে যখন নানা ধরনের ব্যথার উৎপত্তি হয়, তখন পিলাটিস অনুশীলনে আরাম মেলে।
কোনটি বেশি কার্যকর
শরীরচর্চার জন্য এই দুটি পদ্ধতিই জনপ্রিয়। যোগ প্রসঙ্গে যোগব্যয়াম প্রশিক্ষক বাপ্পা শান্তুনু জানান, যোগাসনে সাধারণের রোগ বা শারীরিক সমস্যার প্রতিকার মিলবে। তবে যোগাসনের ক্ষেত্রে ব্রিদ্রিং এক্সারসাইজ বা শ্বাসপ্রশ্বাসের বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। শ্বাস ঠিক না থাকলে নিয়মিত যোগাসন করলেও কোনো উপকার মিলবে না। তবে শ্বাসপ্রশ্বাস ঠিক রেখে যাঁরা যোগাসন করেন, তাঁরা অনেক উপকার পান। যেহেতু শরীর ও মনের যোগকে বলে যোগাসন বা ইয়োগা, এই যোগ সম্পন্ন করে নিশ্বাস। মানুষ নিশ্বাস নিতে নিতে প্রাণায়ামের মধ্য দিয়েই নানা আসন করেন। যোগাসনে শরীরের প্রতিটি সমস্যা ধরে ধরে আলাদাভাবে আসন করা হয়। উচ্চতা বৃদ্ধি, মুখের গড়নে পরিবর্তন, পেটের মেদ কমানোর মতো আরও অনেক উপকারিতা মেলে যোগাসনে।
অপর দিকে যাঁরা অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে ওঠেন, তাঁদের জন্য পিলাটিস বেশ কার্যকর। পিলাটিস শরীরের কাঠামো ঠিক রাখতে সাহায্য করে। হাড়ের জটিল সব রোগ সারাতে সাহায্য করে। তবে শরীরের ধরন ও জীবনযাপন বুঝে পিলাটিস করা ভালো। অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া একসময় নিয়মিত যোগাসন করতেন। এখন পিলাটিসে ঝুঁকেছেন। তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত হলো, যোগাসনের চেয়ে পিলাটিসে দ্রুত ফল পাওয়া যায়। পিলাটিস বডি টোনিংয়ের জন্য খুব ভালো। শরীরের ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়ায়। লুকে একধরনের বোল্ডনেস আনে বলেও মনে করেন নুসরাত ফারিয়া।
মডেল জান্নাতুল পিয়াও একই কথা বললেন। কার্ডিও হওয়ায় পিলাটিসে দ্রুত শরীরের মেদ ঝরে যায়। যে কারণে নিজের ওজনে ভারসাম্য রাখতে সপ্তাহে পাঁচ দিন পিলাটিস করেন পিয়া। যদিও শুরুতে তিনি যোগাসনই করতেন। তবে এখন পিলাটিস করছেন। তবে পিয়া মনে করেন, অভিজ্ঞ ব্যক্তির তত্ত্বাবধান ছাড়া পিলাটিস শুরু করা ঠিক নয়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে পিলাটিস করেন এই তারকা।
পারসোনা হেলথের জ্যেষ্ঠ প্রশিক্ষক মেহেরুন্নেসা ঊর্মি বলেন, বডি টোনিং, মাসলের শক্তি বৃদ্ধি, মানসিক দৃঢ়তা বাড়ানো, দ্রুত ফ্যাট বার্নের জন্য অনেকেই এখন পিলাটিসকে শরীরচর্চার ক্ষেত্রে পছন্দের প্রথম তালিকায় রাখছেন। যোগাসনে ধীরগতিতে ফল মেলে। আর পিলাটিসে দ্রুতসময়ে ফল পাওয়া যায়। তাই পিলাটিস বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যোগাসন ইউটিউব দেখে শুরু করা গেলেও পিলাটিসে সেটা সম্ভব নয়। বরং দক্ষ প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে পিলাটিস করলে দ্রুত ফল মিলবে। সপ্তাহে ৫ দিন ৪০ থেকে ৪৫ মিনিটি করে টানা পিলাটিস করা যেতে পারে বলে জানালেন এই প্রশিক্ষক।
পিলাটিসে আছে নানা রকম যন্ত্রের ব্যবহার। এ ছাড়া কার্ডিও ব্যায়াম, ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়ামও করা যাবে। পাশাপাশি মেনে চলতে হবে সুষম ডায়েট। অপর দিকে যোগব্যায়াম খালি হাতেই করতে পারেন। শুধু প্রয়োজন ইয়োগা ম্যাট। খালি পেটে যোগাসন শুরু করতে হয়। যোগাসন শেষে একধরনের মানসিক প্রশান্তি মেলে। যোগাসন বা পিলাটিস—যেকোনো ব্যায়ামের জন্যই আঁটসাঁট পোশাক পরা ভালো। দেহের সঙ্গে লেগে থাকে এমন টাইটস বা প্যান্ট পরতে পারেন। সঙ্গে ট্যাংক টপ বা টি-শার্ট পরুন। ব্যায়ামের সময় চুল বেঁধে রাখাটা জরুরি। হাতে ঘড়ি থাকলে বা বড় কানের দুল পরে থাকলে সেগুলো খুলে রাখা ভালো।