ব্যায়াম করার সময় ফিট প্রিন্সিপাল মানলে যে উপকারগুলো পাবেন

ব্যায়ামের তীব্রতা, সময় ও ধরন নির্ধারণ করার প্রক্রিয়া হলো ফিট প্রিন্সিপাল
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ।

মানুষের বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক গঠন ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে ব্যায়ামের তীব্রতা, সময় ও ধরন নির্ধারণ করার প্রক্রিয়া হলো ফিট প্রিন্সিপাল। ফিট মানে এফ আই টি টি। এখানে এফ হলো ফ্রিকোয়েন্সি অর্থাৎ কতবার, আই বলতে বোঝায় ইন্টেনসিটি অর্থাৎ তীব্রতা, প্রথম টি মানে টাইম অর্থাৎ সময়, পরের টি বলতে বোঝায় টাইপ অর্থাৎ কী ধরনের। একজন মানুষ কতবার, কত তীব্র মাত্রায়, কত সময় ধরে, কী ধরনের ব্যায়াম করবেন, তা নির্ধারণ করে দেয় ফিট প্রিন্সিপাল।

ব্যায়ামের সময় নির্দিষ্ট হৃৎস্পন্দন রক্ষা করে ব্যায়াম করলে টিস্যুর ভেতর অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ে। যদি কোনো ব্যক্তি সকালবেলা সর্বোচ্চ হৃৎস্পন্দন হার (মেক্সিমাম হার্ট রেট), সুনির্দিষ্ট হৃৎস্পন্দন হার (টার্গেট হার্ট রেট) ও ফিট প্রিন্সিপাল মেনে নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাহলে তাঁর বিশ্রামে থাকা অবস্থায় হৃৎস্পন্দন হার (রেস্টিং হার্ট রেট) কমে আসে। যাঁদের রেস্টিং হার্টরেট কম, তাঁদের শারীরিক সক্ষমতা (ফিটনেস) ভালো।

প্রতি মিনিটে হৃৎপিণ্ড যতবার স্পন্দন দেয়, সেটাকে বলে হৃৎস্পন্দনের হার (হার্ট রেট)। এ জন্য প্রথমে দেহের হৃৎস্পন্দন মেপে নিতে হবে। দেহের স্বাভাবিক হৃৎপিণ্ড প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ৯০ বার স্পন্দন দেয়।

২২০ থেকে বয়স বিয়োগ করলে যেটা পাওয়া যায় সেটাই হলো সর্বোচ্চ হৃৎস্পন্দন হার। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, একজন মানুষের বয়স যদি ৬০ বছর হয়, তাহলে তাঁর সর্বোচ্চ হৃৎস্পন্দন হার হবে মিনিটে ১৬০ বিট (অর্থাৎ ২২০-৬০= ১৬০)।

নির্দিষ্ট হৃৎস্পন্দন হলো সর্বোচ্চ হৃৎস্পন্দন হারের ৬০ থেকে ৮৫ শতাংশ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন মানুষের সর্বোচ্চ হৃৎস্পন্দন যদি হয় ১৬০, তাহলে তাঁর নির্দিষ্ট হৃৎস্পন্দন হার হবে মিনিটে ৯৬ থেকে ১৩৬ বিট, যা সর্বোচ্চ হৃৎস্পন্দন (অর্থাৎ ১৬০–এর) ৬০ থেকে ৮৫ শতাংশ।

বিশ্রামে থাকায় অবস্থায় প্রতি মিনিটে হৃৎপিণ্ড যতবার হৃৎস্পন্দন দেয়, তাকে বলে রেস্টিং হার্ট রেট। যাঁদের রেস্টিং হার্ট রেট কম, তাঁদের দেহের ফিটনেস ভালো। তাই দেহের ফিটনেস বৃদ্ধিতে অথবা ফিটনেস ধরে রাখতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে ফিট প্রিন্সিপাল মেনে চলে কার্ডিও রেসপিরেটরি ব্যায়াম করুন। ফিট প্রিন্সিপাল মেনে চলে কার্ডিও রেসপিরেটরি ব্যায়ামের মাধ্যমে দেহের ফিটনেস ধরে রাখা অথবা বৃদ্ধি করা যায়। এই নিয়মের মাধ্যমে কার্ডিও রেসপিরেটরি ব্যায়াম হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেহের গ্রোথ হরমোন নিঃসরণের পরিমাণ কমে যায়। এ ধরনের ব্যায়াম দেহের গ্রোথ হরমোনের নিঃসরণে সাহায্য করে। যাঁদের গ্রোথ হরমোন নিঃসরণ ভালো হয়, তাঁদের দেহের বাদামি চর্বি (ব্রাউন এডিপোজ) টিস্যু বেশি সক্রিয় হয়, যা দেহের জমানো খারাপ চর্বি ভাঙতে সাহায্য করে। ফলে দেহের ফিটনেস বৃদ্ধি পায়। ফিট প্রিন্সিপালের মাধ্যমে এই ধরনের ব্যায়ামের বিভিন্ন ধাপ আছে। একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করে যা নির্ধারণ করে থাকেন।

ফিট প্রিন্সিপালের মাধ্যমে কার্ডিও রেসপিরেটরি ব্যায়ামের উপকারিতা:

  • দেহে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে।

  • হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

  • রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সাহায্য করে।

  • হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশির শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

  • হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

  • ওজন কমাতে সাহায্য করে।

  • রেস্টিং হার্ট রেট কমাতে সাহায্য করে।

  • হতাশা ও দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য করে।

দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী, ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, চৌধুরী ফিজিওথেরাপি সেন্টার, মিরপুর ১০, ঢাকা