দিনে কতবার প্রস্রাব হওয়া স্বাভাবিক
৩৫ বছর বয়সী এক চাকরিজীবী নারীর কথা ভাবা যাক। ধরা যাক, কর্মক্ষেত্রের ওয়াশরুম নিয়ে কিছুটা খুঁতখুঁতে স্বভাব তাঁর। সেদিন ২৪ ঘণ্টায় মাত্র একবার প্রস্রাব করেছিলেন। সারা দিনে পানিও খুব কম খেয়েছিলেন। এরপরই বাধল বিপত্তি। তলপেটে ব্যথা শুরু হলো আর অস্বস্তিকর একটা অনুভূতি। প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া হচ্ছিল খুব। কাঁপুনি দিয়ে জ্বরও এল। প্রস্রাবে সংক্রমণ হওয়ায় সেই সময় বেশ ভুগেছিলেন তিনি। ২৪ ঘণ্টায় মাত্র একবার প্রস্রাব হওয়া যে অস্বাভাবিক, তা অনেকেরই জানা। তবে এক দিন বা ২৪ ঘণ্টায় অন্তত কতবার প্রস্রাব হওয়া স্বাভাবিক, তা জানেন কি?
আমাদের দেহে নানান ক্রিয়া–বিক্রিয়া চলতে থাকে। সেসবের জন্য পানি প্রয়োজন। এমনকি দেহের কোষের গড়ন ঠিক রাখতেও পরিমাণমতো পানি প্রয়োজন। দেহের নানাবিধ ক্রিয়া–বিক্রিয়া শেষে যে ক্ষতিকর বর্জ্য তৈরি হয়, তা দেহ থেকে বেরিয়ে যায় প্রস্রাবের মাধ্যমে। প্রস্রাব কম পরিমাণে তৈরি হলে এই বর্জ্য জমা হতে থাকে আমাদের দেহে। আর এই বিষাক্ত বর্জ্যের প্রভাব বেশ মারাত্মক। আবার প্রস্রাব তৈরি হওয়ার পর যদি তা চেপে রাখা হয়, তাহলে জীবাণু সংক্রমণসহ অন্যান্য সমস্যার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। এ সম্পর্কে জানালেন ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মতলেবুর রহমান।
কতটা পানি চাই
একজন সুস্থ ব্যক্তিকে রোজ অন্তত দুই লিটার পানি পান করতেই হবে। তবে অনেকের এর বেশি পানিও প্রয়োজন হয়। যেমন কায়িক শ্রম বেশি হলে কিংবা খুব ঘাম হলে পানির চাহিদা বাড়ে। অর্থাৎ পানি পান করতে হবে দেহের প্রয়োজন বুঝে। তৃষ্ণা পেলে তো অবশ্যই পানি পান করতে হবে। প্রস্রাব করার সময় এর রং ও পরিমাণও খেয়াল করতে হবে। প্রস্রাব গাঢ় রঙের হলে বা পরিমাণে কম হলে পানির পরিমাণ বাড়াতে হবে। প্রস্রাবের স্বাভাবিক রং হলো খড়ের মতো, তবে তা বেশ হালকা একটি রং।
ন্যূনতম কতবার প্রস্রাব হওয়া প্রয়োজন
২৪ ঘণ্টায় অন্তত চারবার প্রস্রাব হওয়া প্রয়োজন। এর কম হলে পানির পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। পানিশূন্যতা, কিডনির কিছু রোগ, মূত্রনালির পাথর কিংবা রক্তচাপ খুব বেশি কমে যাওয়ার মতো কিছু কারণে প্রস্রাব কমে যায়। তা ছাড়া কিছু ওষুধ সেবনের কারণেও প্রস্রাব কমতে পারে। পানি ও অন্যান্য তরল খাবার খেয়ে বিষয়টির সমাধান না হলে কিংবা এর সঙ্গে অন্য কোনো উপসর্গ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মনে রাখবেন, পাতলা পায়খানার মতো সাদামাটা সমস্যায়ও রক্তচাপ কমে গিয়ে প্রস্রাবের পরিমাণ খুব কমে যেতে পারে। এমনকি এ সমস্যার কারণে কারও মৃত্যুও হতে পারে। বুঝতেই পারছেন, প্রস্রাব কমে যাওয়াকে অবহেলা করতে নেই।
কতটা বেশি হলে অস্বাভাবিক
২৪ ঘণ্টায় আটবারের বেশি প্রস্রাব হলে বিষয়টাকে গুরুত্ব দিতে হবে। চা, কফি, চকলেট, মিষ্টি পানীয় প্রভৃতির পরিমাণ কমিয়ে দিন। এসব খাবার ও পানীয়ের কারণে প্রস্রাব বেশি হতে পারে। তবে বারবার অল্প পরিমাণ প্রস্রাব হওয়া সংক্রমণের লক্ষণও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য কতবার প্রস্রাব হচ্ছে, তার চেয়ে জরুরি বিষয় হলো সংক্রমণের আনুষঙ্গিক উপসর্গ থাকা। বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষের ক্ষেত্রে প্রোস্টেটের আকার বেড়ে যাওয়ার কারণেও বারবার প্রস্রাব হতে পারে। গর্ভাবস্থায় একজন নারীরও বারবার প্রস্রাব হতে পারে। কারণ, জরায়ুর আকার বড় হলে তা মূত্রথলিতে চাপ দেয়। ফলে বারবার প্রস্রাব পায়। এর সঙ্গে যদি অন্য কোনো উপসর্গ না থাকে, তাহলে এটি স্বাভাবিক।
যে কারও প্রস্রাবের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণ হতে পারে ডায়াবেটিস। কিডনির কিছু সমস্যায়ও প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ে। রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বাড়লেও এমনটা হতে পারে। তাই কেবল খাবার ও পানীয় গ্রহণের অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করে যদি বিষয়টার সমাধান না হয় কিংবা এর সঙ্গে থাকে অন্য কোনো উপসর্গ, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।