জিমের উপকরণে কি সত্যিই টয়লেট সিটের চেয়ে বেশি জীবাণু থাকে
সুঠাম শরীর কিংবা সার্বিক সুস্থতার জন্যই জিমে গিয়ে ব্যায়াম করি আমরা। কিন্তু শরীরের ভালো করতে গিয়ে উল্টো অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছেন না তো? কারণ, বলা হচ্ছে জিমের চকচকে ডাম্বেল বা ট্রেডমিলে লুকিয়ে থাকতে পারে অসংখ্য অদৃশ্য শত্রু বা ব্যাকটেরিয়া।
সম্প্রতি নতুন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে এমন তথ্য, যেখানে বলা হচ্ছে জিমের কিছু কিছু উপকরণে জীবাণু থাকে টয়লেট সিটের তুলনায় ৩৬২ গুণ!
২০২৪ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই তথ্য ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। যা নিয়ে তৈরি হয় কৌতুক ও বিতর্ক, পাশাপাশি উদ্বেগ।
এমনকি সিবিসি নিউজ, বিজনেস ইনসাইডার, শিকাগো ট্রিবিউনের মতো মূলধারার সংবাদমাধ্যমেও এই আলোচিত দাবির খবর প্রকাশিত হয়েছে।
ভাইরাল সংখ্যার পেছনের গল্প
২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফিটরেটেড’ নামের ফিটনেস উপকরণ রিভিউ করার ওয়েবসাইট একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, জিমের উপকরণে টয়লেট সিটের তুলনায় ৩৬২ গুণ বেশি ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। তবে মনে রাখতে হবে, এটি কোনো পূর্ণাঙ্গ বৈজ্ঞানিক গবেষণা ছিল না।
প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছিল মাত্র তিনটি জিমের ২৭টি যন্ত্রপাতি থেকে সংগৃহীত নমুনার ওপর। তুলনার জন্য তারা টয়লেট সিটের তথ্য নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিচালিত একটি ভিন্ন গবেষণা থেকে। অর্থাৎ দুটি ভিন্ন জায়গা ও পরিস্থিতির আলাদা তথ্যকে পাশাপাশি রেখে এই আলোচিত তথ্য–উপাত্ত পরিবেশন করা হয়েছিল।
কীভাবে পরীক্ষা হয়েছিল
ফিটরেটেড জানিয়েছে, তাদের হয়ে পরীক্ষা করেছে ইএমল্যাব পিঅ্যান্ডকে নামের একটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান। পরীক্ষায় মূলত জীবিত ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা মাপা হয়। আর পরিমাণের একক কলোনি-ফর্মিং ইউনিট (সিএফইউ)।
পরীক্ষায় প্রতিটি জিম থেকে তিনটি ট্রেডমিল, তিনটি এক্সারসাইজ বাইক এবং তিনটি ফ্রি-ওয়েটের নমুনা নেওয়া হয়েছিল। ফলাফলে দেখা যায়, ফ্রি-ওয়েটে জীবিত ব্যাকটেরিয়া ছিল ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৩৮১ সিএফইউ, অন্যদিকে টয়লেট সিটে ছিল মাত্র ৩ হাজার ২০০ সিএফইউ।
কিন্তু সমস্যাটা হলো, টয়লেট সিটের সংখ্যাটি এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্যানিটেশন ফাউন্ডেশন (এনএসএফ) পরিচালিত একটি স্কুলে করা গবেষণা থেকে, যার উদ্দেশ্য ছিল শিশুদের বেশি স্পর্শ করা জায়গাগুলো চিহ্নিত করা। এনএসএফ-ও পরিষ্কার জানিয়েছিল, এটি ছিল কেবল নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্কুলের অবস্থা, সব জায়গার নয়।
প্রতিবেদনের কিছু সীমাবদ্ধতা
নমুনা কীভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে, তার স্পষ্ট নথি নেই।
প্রুফ রিডিং বা মান নিয়ন্ত্রণের কোনো প্রমাণ নেই।
একই পদ্ধতি সব জিমে ব্যবহার করা হয়েছে কি না, সেটিও অজানা।
সচেতনতা ও করণীয়
আলোচিত এই তথ্য–উপাত্ত অনুযায়ী, জিমের উপকরণে টয়লেট সিটের তুলনায় বহুগুণ জীবাণু থাকতে পারে। যদিও এ তথ্য পূর্ণাঙ্গ বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফল নয়, তবু এটি আমাদের সতর্ক করে দেয়। কারণ, ডাম্বেল, ট্রেডমিল বা এক্সারসাইজ বাইকের মতো যন্ত্র প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ব্যবহার করে, স্পর্শের মাধ্যমেই সহজে ছড়ায় ব্যাকটেরিয়া।
ফলে সুস্থ হতে গিয়ে উল্টো অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি অস্বীকার করা যায় না।
ঝুঁকি কমাতে দরকার কিছু সহজ অভ্যাস। যেমন—
ব্যায়ামের আগে-পরে হাত জীবাণুমুক্ত করা।
নিজের তোয়ালে ব্যবহার করা।
ব্যায়ামের উপকরণ জীবাণুমুক্ত করে নেওয়া।
অন্যের পানির বোতল ব্যবহার না করা।
প্রতিদিন পরিষ্কার পোশাক পরা।
শরীরের উন্মুক্ত স্থানে ক্ষত থাকলে বাড়তি সতর্কতা মেনে চলতে হবে।
সূত্র: স্নোপ্স