হাতে-পায়ে মেদ জমে যে কারণে
একজন স্থূল ব্যক্তির দেহের নানা অংশেই জমা হয় বাড়তি মেদ। তবে এমনও অনেকে থাকেন, যাঁদের শরীরের ওপরের অংশের গড়ন ঠিকঠাক হলেও পায়ের দিকে অনেকটা বেশি মেদ জমে। কারও কারও হাতের বিভিন্ন অংশেও জমে অতিরিক্ত মেদ। দেহের ওজন স্বাভাবিক সীমার মধ্যে থাকলেও পায়ে ও হাতে মেদ জমতে পারে। অর্থাৎ কেউ স্থূল হলেই যে কেবল হাতে-পায়ে মেদ জমে, তা নয়। বরং এই মেদ জমা হতে পারে ভিন্ন এক কারণে। স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন জানালেন এ সম্পর্কে।
পা ও হাতের বিভিন্ন অংশে অস্বাভাবিক মেদ জমা হওয়ার এই সমস্যার নাম লাইপেডিমা। এটি হলে নিতম্ব আর ঊরুতেও জমা হয় মেদ। হাঁটুর ঠিক নিচেই পায়ের যে অংশ, তার পেছন দিকটাতেও মেদ জমে। কারও কারও বাহু এবং এর নিচের অংশেও মেদ জমতে পারে।
আরও যেসব সমস্যা দেখা দেয়
লাইপেডিমার প্রাথমিক অবস্থায় অল্প পরিমাণে মেদ জমা হয়, সেটিও কেবল দু-এক জায়গায়। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে মেদের পরিমাণ, যা ছড়িয়ে পড়তে পারে অন্যান্য অংশে। লাইপেডিমা হলে কেবল যে মেদই জমে, তা নয়। মেদ ছাড়াও জমা হয় ভিন্ন ধরনের কোষ। আক্রান্ত স্থানটি স্পর্শ করলে একটু অমসৃণ বা উঁচু-নিচু মনে হয়। ওই স্থানের ত্বকে টোল পড়ার মতো কিছু অংশও দেখা যেতে পারে। যে অংশে মেদ জমে, সেখানে ব্যথা হয় অনেকেরই। মূলত দেহের নিচের অংশে মেদ জমা হয়, তাই হাঁটার সময় এই অংশ ভারী মনে হতে পারে। ছোটখাটো আঘাতে খুব সহজে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে এসব অংশে। পা ও হাতের বিভিন্ন অংশের বেঢপ আকারের জন্য হীনম্মন্যতায় ভোগেন অনেকেই। পোশাক বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তে হয় ভুক্তভোগীদের।
কাদের হয়
পুরো পৃথিবীতে যত মানুষ লাইপেডিমায় ভোগেন, তাঁদের প্রায় সবাই নারী। পুরুষের মধ্যে এ সমস্যা বিরল। ধারণা করা হয়, নারীর হরমোনের সঙ্গে লাইপেডিমার সম্পর্ক আছে। কৈশোরে, গর্ভাবস্থায় কিংবা মেনোপজের সময় এ সমস্যা বাড়তে পারে। জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খেলেও সমস্যাটি বাড়তে দেখা যায়। কারও কারও পরিবারে লাইপেডিমার ইতিহাস থাকে। অর্থাৎ জিনগত কারণও দায়ী হতে পারে।
এমন মেদ জমলে কী করবেন
লাইপেডিমা এমন এক সমস্যা, যা আপনি খাদ্যাভ্যাস কিংবা যেকোনো ব্যায়ামের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। হাত ও পায়ের মেদ কমানোর নির্দিষ্ট ব্যায়াম করলে উপকার মিলবে। যোগব্যায়ামের চর্চা এই মেদ কমাতে দারুণ কাজে আসে। সাঁতারও বেশ কার্যকর। নিতম্ব ও পায়ের মেদ কমাতে সাইকেল চালাতে পারেন। আঁটসাঁট মোজা পরলে খানিকটা স্বস্তি মিলবে। লাইপোসাকশনের মাধ্যমে এ ধরনের মেদ কমাতে পারবেন অনেকটা। লাইপেডিমা বাড়তে দিলে অতিরিক্ত মেদ জমে একসময় কিছু রক্তনালির ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হতে পারে। বাড়তে পারে জটিলতা। তাই অন্তত ব্যায়ামের মাধ্যমে এই মেদ কমানোর চেষ্টা করা উচিত অবশ্যই। হাতে বা পায়ে বাড়তি মেদ জমলে প্রাথমিক অবস্থায়ই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ, লাইপেডিমা ছাড়া অন্যান্য কারণেও হাত-পা স্ফীত দেখাতে পারে।