শীতে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়াতে করতে পারেন এসব ব্যায়াম

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরের বায়ুদূষণের কথা প্রায়ই উঠে আসে গণমাধ্যমগুলোয়। দূষিত বাতাস স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষত শীতে বায়ুদূষণ বেড়ে যায় প্রতিবছর। যেকোনো সুস্থ মানুষের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে আসতে পারে বায়ুদূষণের প্রভাবে। দূষিত বায়ুর শহরে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা ঠিক রাখার প্রচেষ্টা তাই সবার জন্যই আবশ্যক। এ সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ইন্টারভেনশনাল পালমোনোলজি, ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যান্ড স্লিপ সোসাইটির (বিপস) সভাপতি ডা. মো. জাকির হোসেন সরকার। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানাচ্ছেন রাফিয়া আলম

দূষিত বায়ুর শহরে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা ঠিক রাখার প্রচেষ্টা সবার জন্যই আবশ্যক
ছবি: পেক্সেলস

বায়ুদূষণের কারণে বাড়তে পারে ফুসফুসের নানান রোগের ঝুঁকি। আর যাঁরা আগে থেকেই ফুসফুসের কোনো রোগে ভুগছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও উপসর্গের তীব্রতা বাড়তে দেখা যায় বায়ুদূষণের কারণে। ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়াতে শ্বাসের ব্যায়ামের চর্চা করা যেতে পারে বাড়িতে।

বিভিন্ন ধরনের ব‍্যায়ামের মাধ্যমে ফুসফুসকে শক্তিশালী করে তোলা সম্ভব। এসব ব্যায়ামে ফুসফুসের বায়ুধারণ ক্ষমতা বাড়ে। ফুসফুসে ঢোকা বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেওয়ার ক্ষমতাও বাড়ে এ ধরনের ব্যায়ামের চর্চায়। তবে বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি থাকলে মাস্ক ব্যবহার করা আবশ্যক।

পার্সড লিপ ব্রিদিং

পার্সড লিপ ব্রিদিংয়ে নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে হবে প্রথমে, এরপর নিশ্বাস ছাড়ার সময় ঠোঁট গোল করতে হবে
ছবি: পেক্সেলস

নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে হবে প্রথমে। এরপর নিশ্বাস ছাড়ার সময় ঠোঁট গোল করতে হবে। অর্থাৎ মোমবাতি নেভানোর সময় ফুঁ দিতে গেলে যেভাবে ঠোঁট গোল করা হয়, তেমন অবস্থায় রাখতে হবে ঠোঁট। নিশ্বাস ছাড়তে হবে খুব ধীরে ধীরে।

শ্বাস নিতে যত সময় লেগেছে, তার দ্বিগুণ সময় নিয়ে নিশ্বাস ছাড়ুন। নিশ্বাস ছাড়ার সময় বাতাসের শব্দ হবে মুখে। রোজ দু-তিন বেলায় মোট ১০ বার করে এই ব্যায়ামের চর্চা করতে পারেন।

আরও পড়ুন

ডায়াফ্র্যামাটিক ব্রিদিং

ডায়াফ্র্যামাটিক ব্রিদিংয়ে নাক দিয়ে শ্বাস নিতে হবে, যাতে পেট ফুলে ওঠে (বুক নয়); এরপর মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়তে হবে
ছবি: পেক্সেলস

প্রথমে এক হাত রাখতে হবে বুকের ওপর। অন্য হাত রাখতে হবে পেটের ওপর। নাক দিয়ে শ্বাস নিতে হবে, যাতে পেট ফুলে ওঠে (বুক নয়)। এরপর মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়তে হবে। এই ব্যায়ামও রোজ দু-তিন বেলায় মোট ১০ বার করে করতে পারেন।

আরও যেসব ব্যায়াম কাজে দেবে

কেবল শ্বাসের ব্যায়ামই নয়, অন‍্যান‍্য ব‍্যায়ামেও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ে। হাঁটাহাঁটি, জগিং, দৌড়, দড়িলাফ, সাইকেল চালানো কিংবা সাঁতার কাটার মতো ব্যায়ামের কথাই ধরা যাক। যে ব্যায়ামেই আপনার শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি বাড়বে, সেটিই আপনার ফুসফুসের জন্য ভালো।

অর্থাৎ কেবল ধীরগতিতে হাঁটলে বা ব্যায়াম করলেই উপকার মিলবে না, বরং এমনভাবে হাঁটতে হবে বা ব্যায়াম করতে হবে, যাতে শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি বাড়ে। এ ধরনের ব্যায়ামের চর্চা করুন নিয়মিত। সপ্তাহে কত মিনিট এমন ব্যায়াম করা উচিত, সেটিরও হিসাবনিকাশ জেনে রাখুন সার্বিক সুস্থতার জন্য।

মাঝারি ধাঁচের ব্যায়াম করলে তা করতে হবে সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট। এমন ব্যায়ামের সময় আপনার শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হয়ে আসবে এবং ব্যায়াম শুরুর মিনিট দশেকের মধ্যে আপনি ঘামতে শুরু করবেন। এই ব্যায়াম করার সময় আপনি কথা বলতে পারবেন, তবে সুরেলা কণ্ঠে নয়।

হাঁটাহাঁটি, জগিং, দৌড়, দড়িলাফ, সাইকেল চালানো কিংবা সাঁতার কাটা—যে ব্যায়ামেই আপনার শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি বাড়বে, সেটিই আপনার ফুসফুসের জন্য ভালো
ছবি: পেক্সেলস
আরও পড়ুন

তীব্র ধাঁচের ব্যায়াম করলে তাতে সপ্তাহে অন্তত ৭৫ মিনিট সময় দিতে হবে আপনাকে। তীব্র ধাঁচের ব্যায়ামের সময় আপনার শ্বাসপ্রশ্বাস কেবল দ্রুত হয়েই আসবে না, বরং তা গভীরও হবে। ব্যায়াম শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই আপনি ঘামতে শুরু করবেন। এ ধরনের ব্যায়ামের মাঝে না থেমে আপনি কথা বলতে পারবেন না।

কেউ চাইলে এই দুই ধরনের ব্যায়ামের সমন্বয়ও করতে পারেন প্রতি সপ্তাহে। সমন্বয় করতে চাইলে ব্যায়ামের মোট সময়টাও সেভাবে মিলিয়ে নিতে পারবেন।

আরও পড়ুন