বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাল, ধূমপান ছাড়লে প্রথম দিন থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত শরীরে কী কী ঘটে
ধূমপানের অভ্যাস মানবদেহে নীরব ক্ষতি ডেকে আনে, এটা অজানা নয়। অনেক ধূমপায়ী ভাবেন, এত বছর ধূমপান করার পর আর কীই-বা হবে! কিন্তু আশ্চর্যজনক সত্যি হলো, ধূমপান সম্পূর্ণ বন্ধ করলে শরীর অবিশ্বাস্য দ্রুততায় নিজেকে মেরামত করতে পারে। ধূমপান ছাড়ার পর প্রতিটি মুহূর্তেই আপনার দেহে ইতিবাচক পরিবর্তন শুরু হয় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও দৃঢ় ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। চলুন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী সেসব পরিবর্তন সম্পর্কে জেনে নিই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ধূমপান ছাড়ার পর দেহের সেরে ওঠার ধাপগুলো—
২০ মিনিটের মধ্যে হৃৎস্পন্দন ও রক্তচাপ কমতে শুরু করে, যা শরীরকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার দ্রুততম ও প্রথম ইতিবাচক পরিবর্তনগুলোর একটি।
১২ ঘণ্টার মধ্যে রক্তে কার্বন মনোক্সাইডের মাত্রা স্বাভাবিক হয়। কার্বন মনোক্সাইড বেড়ে গেলে তা মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
২ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে রক্তসঞ্চালন উন্নত হয় এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ফলে দৈনন্দিন কাজে শক্তি বাড়ে এবং শ্বাস নেওয়া আরও স্বচ্ছন্দ হয়।
ধূমপান ছাড়ার ১ থেকে ৯ মাসের মধ্যে কাশি ও শ্বাসকষ্ট কমে যায়।
এক বছর পর করোনারি বা হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিসংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি ধূমপায়ীদের তুলনায় অর্ধেক হয়ে যায়।
পাঁচ বছর ধূমপান না করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি আরও কমে গিয়ে একজন অধূমপায়ীর সমপর্যায়ে পৌঁছায়।
১০ বছর পর, ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি ধূমপায়ীদের তুলনায় অর্ধেকে নেমে আসে। পাশাপাশি মুখ, গলা, খাদ্যনালি, মূত্রাশয়, জরায়ুমুখ ও অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকিও কমে।
আর ১৫ বছর পরে করোনারি রোগের ঝুঁকি অধূমপায়ীর সমপর্যায়ে নেমে আসে।
তাই আর দেরি না করে আজই ধূমপান ছেড়ে দিন আর সুস্থ হয়ে ওঠার সিঁড়িতে পা দিন।
প্রশ্ন হলো, সব বয়সেই কি ধূমপান ছাড়লে উপকার মেলে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, অবশ্যই সব বয়সেই উপকার পাওয়া যায়। ধাপগুলো দেখে নিতে পারেন—
৩০ বছর বয়সে ধূমপান ছেড়ে দিলে আয়ুষ্কাল প্রায় ১০ বছর বাড়তে পারে।
৪০ বছর বয়সে আয়ুষ্কাল বাড়তে পারে ৯ বছর।
৫০ বছর বয়সে আয়ুষ্কাল বাড়তে পারে ৬ বছর।
৬০ বছর বয়সে ৩ বছর জীবন বাড়তে পারে।
সবশেষে
এমনকি প্রাণঘাতী ও গুরুতর রোগ দেখা দেওয়ার পর ধূমপান ছাড়লেও দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, হৃদ্রোগের আক্রমণের পর ধূমপান ছাড়লে আরেকটি হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ কমে।
শুধু তা-ই নয়, ধূমপান ছেড়ে দিলে পরোক্ষ ধূমপানের কারণে শিশুদের যে বাড়তি রোগের ঝুঁকি সৃষ্টি হয় (যেমন হাঁপানি, কানের সংক্রমণসহ বিভিন্ন শ্বাসযন্ত্রের রোগ), তা-ও কমে যায়।
পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যায় নপুংসকতা ও প্রজননজনিত জটিলতা, অকালপ্রসব, শিশুর কম ওজন নিয়ে জন্মানো এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি।
সূত্র: দ্য ইকোনমিক টাইমস