হাঁটার চেয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওঠা কতটা ভালো ব্যায়াম, জানেন?
হাঁটার চেয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামায় ক্যালরি খরচ হয় অনেক বেশি। আর যেকোনো জায়গায়ই এটা করা যায়। চিকিৎসকেরাও সিঁড়ি ভাঙাকে ‘দারুণ কার্ডিও ব্যায়াম’-এর স্বীকৃতি দিয়েছেন।
সিঁড়ি ভাঙা কি আসলেই ভালো?
হ্যাঁ। যাঁরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলায় অংশ নেন, তাঁরাও নিয়মিত সিঁড়ি ভাঙার ব্যায়াম করেন।
পারসোনা হেলথের ফিটনেস ট্রেইনার শাহিনূর চৌধুরী বলেন, ‘নগরবাসীর জন্য এটি হতে পারে হাঁটার ভালো বিকল্প। লিফট বা এস্কেলেটর বাদ দিয়ে সিঁড়ি ভাঙলে হৃৎপিণ্ড দ্রুত কাজ করা শুরু করে। তাই লো-ইমপ্যাক্ট ব্যায়াম হিসেবে এটি দারুণ।’
হাঁটার চেয়ে সহজেই এটি করা যায়, কারণ অফিস হোক বা বাসা—শহরের প্রায় সবখানেই সিঁড়ি ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। অন্যদিকে শহরে হাঁটার পরিবেশ পাওয়া কঠিন। কিন্তু সিঁড়ি দিয়ে উঠলে হাঁটার চেয়ে ক্যালরি খরচ হয় অনেক বেশি।
কেউ যদি অল্প সময়ের জন্যও সিঁড়ি ভাঙেন, তা থেকেও উপকার মিলবে। বিশেষ করে হৃৎপিণ্ডের সুরক্ষা, ওজন কমানো ও দীর্ঘায়ুর মতো স্বাস্থ্যকর নানা সুবিধা পাওয়া যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের স্পোর্টস মেডিসিনের চিকিৎসক ক্যারি জাওরস্কি জানাচ্ছেন, প্রতিদিন যাঁদের সিঁড়ি বাইতে হয়, তাঁদের কাছে এটা সহজ মনে হলেও এতে শরীরের অনেকগুলো অংশ একই সঙ্গে কাজ করে। কারণ, সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় আপনাকে বারবার শরীরটা মাধ্যাকর্ষণের বিপরীতে ওপরে তুলতে হয়।
ক্যারি বলেন, ‘হৃৎপিণ্ড শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আর সিঁড়ি দিয়ে উঠলে সেই হৃৎপিণ্ডের ব্যায়াম হয়। পাশাপাশি সিঁড়ি দিয়ে ওঠার অভ্যাস পায়ের পেশি গড়তে সাহায্য করে।’
ক্যারির কথাকে সমর্থন করে নিউইয়র্কভিত্তিক আরেক স্পোর্টস মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ড. স্টুয়ার্ট চার্নি বলেন, ‘সিঁড়ি ভাঙা সত্যিই অসাধারণ এক কার্ডিও। এতে অনেকগুলো মাংসপেশি একসঙ্গে কাজ করে, ফলে শরীরকে বেশি পরিশ্রম করতে হয় আর ক্যালরিও বেশি খরচ হয়।’
সিঁড়ি ভাঙার সময় মূলত ঊরুর সামনের পেশি, পেছনের পেশি, পা ও নিতম্বের পেশি একসঙ্গে কাজ করে।
কত ক্যালরি খরচ হয়
সিঁড়ি বাইলে কার কতটা ক্যালরি পুড়বে, সেটা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। কেননা আপনি কত দ্রুত সিঁড়ি ভাঙছেন, সেটার ওপর নির্ভর করে কত ক্যালরি পুড়বে। তবে হাঁটার চেয়ে অনেক বেশি ক্যালরি খরচ হয় সিঁড়ি বেয়ে উঠলে। চিকিৎসকেরা ধারণা করেন, হাঁটার চেয়ে অন্তত চার গুণ বেশি ক্যালরি পোড়ে সিঁড়িতে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের এক নিবন্ধ থেকে জানা যায়, সিঁড়ি ভাঙা এমন একটি সহজ কার্যকলাপ, যা জিমে না গিয়েও প্রচুর ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে।
দেশটির উইসকনসিন ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ সার্ভিসের হিসাবে, একজন প্রায় ৭০ কেজি ওজনের ব্যক্তি যদি এক ঘণ্টা দৌড়ে সিঁড়ি ভাঙেন, তবে ১ হাজার ৫০ ক্যালরির বেশি খরচ হবে। আর যদি হাঁটার মতো করে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠেন, তবে প্রায় ৫৬০ ক্যালরি খরচ হবে।
সেই তুলনায় সমতলে মাঝারি গতিতে এক ঘণ্টা হাঁটলে মাত্র ২৪৬ ক্যালরি খরচ হয়। অনভ্যাসে বেশির ভাগ মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে সিঁড়ি ভাঙতে পারেন না। তবে যেহেতু এতে অনেক বেশি শক্তি খরচ হয়, তাই অল্প সময় করলেও এটি খুব কার্যকর ব্যায়াম।
সতর্কতা
যেকোনো ব্যায়াম শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
যাঁদের ভারসাম্যে সমস্যা বা হাঁটুর ব্যথা আছে, তাঁদের বিকল্প ব্যায়াম বেছে নেওয়াই ভালো।
সিঁড়ি বেয়ে ওঠার ব্যায়াম করলে হার্ট রেটে সব সময় খেয়াল করতে হয়। কারণ, সিঁড়ি ভাঙলে হঠাৎ করে পালস অনেক বেড়ে যেতে পারে, যেটা ঝুঁকিপূর্ণ।
সূত্র: টুডে ডটকম