রোজা রেখে কি ব্যায়াম করা যাবে?

রোজা রেখে শরীরচর্চা করার সময় সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে
ছবি: প্রথম আলো

সুস্থ জীবনের জন্য শরীরচর্চার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগসহ অসংখ্য রোগাক্রান্ত ব্যক্তি নিয়মিত শরীরচর্চা করছেন। কিন্তু অনেকেরই মনে প্রশ্ন, রোজা রেখে কি শরিরচর্চা করা যাবে? দুর্বল হয়ে পড়ব না তো? গোটা মাস কি শরীরচর্চা না করে কাটাতে হবে?

আমরা যখন না খেয়ে থাকি, তখন শুরুতে আমাদের শরীরে সঞ্চিত শর্করা ভেঙে প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান দেয়। এই শর্করা আসে মূলত যকৃতে আগে থেকে সঞ্চিত শর্করা গ্লাইকোজেন থেকে। সঞ্চিত শর্করার জোগান যখন শেষ হয়ে যায়, তখন জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে সঞ্চিত চর্বি। এ কারণে রোজা রাখা অবস্থায় শরীরের জন্য শক্তির জোগান দিতে গিয়ে চর্বির মজুত কমতে থাকে। খানিকটা শরীরচর্চা করলে এই চর্বি ক্ষয় আরও ভালোভাবে হতে পারে। যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁদের জন্য সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। রমজান মাসে চাইলে তাঁরা বেশ খানিকটা ওজন কমাতেও পারবেন।

রোজা রেখে শরীরচর্চা করার সময় সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। হালকা শরীরচর্চার ফলে মস্তিষ্ক, স্নায়ুকোষ ও পেশি কোষগুলো সতেজ থাকে। এ কারণে রোজা রেখে শরীরচর্চা করলে শরীরে বাড়তি কিছু ইতিবাচক সুফল পাওয়া যায়। তবে রোজা রেখে শরীরচর্চা করতে গেলে কিছু বিষয়ের প্রতি অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে।

রোজা রেখে ইফতারের আগে কারা শরীরচর্চা করতে পারবেন সেটা জানা জরুরি। মডেল: অভি
ছবি: কবির হোসেন

১. গরমের সময় শরীরচর্চা করলে শরীর ঘেমে গিয়ে যথেষ্ট পরিমাণ পানি ও লবণের ঘাটতি হতে পারে। পানিশূন্যতা হতে পারে। পানিশূন্যতা যাতে সৃষ্টি না হয়, সেদিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে। পানির ঘাটতি পূরণের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করতে হবে। পানির উৎস শুধু সাদা পানিতে নয়, ফলমূলও পানির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। কমলা, আঙুর, মাল্টা, টমেটো, শসা ইত্যাদি পানির অন্যতম উৎস। খাদ্যতালিকায় এসব ফলমূল অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ইফতারের পর থেকে সাহ্‌রির আগপর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি খেয়ে শরীরে সেটা যথেষ্ট পরিমাণে ধরে রাখতে পারবেন।

২. দিনব্যাপী শক্তির জোগান পেতে হলে মিহি শর্করাজাতীয় খাদ্যের তুলনায় তন্তুজাতীয় শর্করা খাদ্য গ্রহণ করার দিকে বেশি নজর দিতে হবে। আর খাদ্যতালিকায় অবশ্যই আমিষের জোগান থাকতে হবে। এতে করে সারা দিন ঠিকমতো শক্তি পাওয়া যাবে।

কখন শরীরচর্চা করবেন

রোজা রেখে শরীরচর্চার জন্য যথাযথ সময় নির্বাচন করা জরুরি। তারাবিহর নামাজের পর শরীরচর্চা করা সর্বোত্তম। এ সময় ইচ্ছেমতো পানি পান করা যায় এবং শারীরিক কোনো অসুবিধা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। ইফতারের পর থেকে তারাবিহর আগপর্যন্ত শরীরচর্চা করা যায়। তবে যাঁরা সুস্থ ও সুঠাম দেহের অধিকারী এবং শরীরে কোনো রোগবালাই নেই, তাঁরা পানিশূন্যতার আশঙ্কা না থাকলে ইফতারের আগে হালকা শরীরচর্চা করতে পারেন। মনে রাখবেন, রোজা রেখে সকালে শরীরচর্চা করলে পানিশূন্যতার আশঙ্কা থেকে যায়। সে জন্য এই সময়টি পরিহার করা উচিত।

আরও পড়ুন

রোজা রেখে কেমন শরীরচর্চা করবেন

রোজা রেখে হালকা ও মাঝারি মাত্রার শরীরচর্চা করা যেতে পারে। হাঁটা, ধীরগতিতে জগিং করা, ওজন উত্তোলন করা, সাঁতার কাটা, সাইক্লিং, গলফ খেলার মতো মৃদু মাত্রার ব্যায়াম করতে কোনো বাধা নেই। যেসব শরীরচর্চায় হৃৎস্পন্দনের গতি মিনিটে ১৫০-এর বেশি হয়, সে ধরনের শরীরচর্চা রোজা রেখে করা ঠিক নয়। পেশিশক্তিবর্ধক ব্যায়াম রোজার সময় বেশি উপযোগী। রিচআপ, পুশআপ, ওজন উত্তোলন, জায়গায় দাঁড়িয়ে ওঠবস করার মতো ব্যায়াম পেশিশক্তিবর্ধকের মধ্যে পড়ে।

ডায়াবেটিসের রোগীরা দিনের বেলা শরীরচর্চা করলে পানিশূন্যতার পাশাপাশি রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। তাই তাঁরা দিনের বেলা রোজা রেখে ব্যায়াম করবেন না। চাইলে তারাবিহর পর হালকা হাঁটাহাঁটি করতে পারেন।

লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সিএমএইচ, বরিশাল