অভিনেতা থেকে যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক হয়ে ওঠার গল্প শোনালেন বাপ্পা শান্তনু

২১ জুন বিশ্ব যোগ দিবসে প্রথম আলোর ফিচার বিভাগে এসেছিলেন ‘এভারগ্রিন ইয়োগা’র প্রতিষ্ঠাতা বাপা শান্তনু
ছবি : সাবিনা ইয়াসমিন

মডেলিং দিয়ে শুরু, তারপর অভিনয়, মাঝখানে শিক্ষকতাও করেছেন কিছুদিন আর এখন পুরোদস্তুর যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক। ২১ জুন বিশ্ব যোগ দিবসে প্রথম আলোর ফিচার বিভাগে এসেছিলেন ‘এভারগ্রিন ইয়োগা’র প্রতিষ্ঠাতা বাপা শান্তনু। উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে ৪৫ মিনিটের আড্ডায় নিজের জীবনের গল্প শোনানোর পাশাপাশি শিখিয়েছেন অফিসে করার উপযোগী সহজ কিন্তু উপকারী কয়েকটি যোগব্যায়াম। দিয়েছেন নানা প্রশ্নের উত্তর।

যোগব্যায়ামের প্রতি কীভাবে আকৃষ্ট হলেন, সেই গল্প দিয়ে আড্ডা শুরু করেন শান্তনু। ২০০৮ সালের কথা। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের ছাত্র। সে সময় প্রায় প্রতিদিন খেতেন রাস্তায় তৈরি আখের রস। এক মাস না যেতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। ধরা পড়ে জন্ডিস। আড়াই মাস পর সুস্থ হলেও হজমের নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। ঢেকুরের সঙ্গে বাজে গন্ধ, রাতে বুকব্যথা, ত্বকে ব্রণ, গ্যাস্ট্রিক ছাড়াও আরও অনেক সমস্যা দেখা দিতে লাগল।

আরও পড়ুন
শান্তনুর সঙ্গে উপস্থিত সাংবাদিকেরাও যোগ দেন যোগব্যায়ামে
ছবি : সাবিনা ইয়াসমিন

একের পর এক ট্যাবলেট খেয়েও শরীর ঠিক হচ্ছিল না। সে সময় ভারতফেরত এক মামার কাছ থেকে যোগব্যায়াম সম্পর্কিত একটি বই উপহার পান। সেটি পড়েই প্রথম যোগব্যায়াম সম্পর্কে জানতে পারেন শান্তনু, ‘সে বইটিতে লেখা ছিল যে শরীরের বেশির ভাগ সমস্যা হয় ভুল নিয়মে পানি খাওয়ার কারণে; এবং কিছু শরীরচর্চার অভাবে।’

বইটির নির্দেশনা অনুযায়ী যোগব্যায়াম করে মাত্র দেড়-দুই মাসেই উপকার পেতে শুরু করেন শান্তনু। একেবারেই গায়েব হয়ে যায় গ্যাসের সমস্যা; দূর হয়ে যায় ব্রণ। শান্তনু বলতে থাকেন, ‘তখনই বুঝতে পারি এর মধ্যে আসলেও কিছু আছে। এ বিষয়ে আরও বেশি পড়াশোনা করতে শুরু করি, পাশাপাশি নিজে নিজে চর্চা চালিয়ে যেতে থাকি। ২০০৮ থেকে এখন পর্যন্ত এক দিনের জন্যও চর্চা বাদ দিইনি।’

অফিসে করার উপযোগী বেশ কয়েকটি যোগব্যায়াম উপস্থাপন করেন শান্তনু
ছবি : সাবিনা ইয়াসমিন

২০২০ সালে করোনাকালে ফেসবুক লাইভে এসে যোগব্যায়াম নিয়ে কথা বলতেন শান্তনু। হঠাৎ একদিন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি ডিভিশন থেকে ডাক পড়ল। প্রায় তিন হাজার পুলিশ সদস্যকে যোগব্যায়াম শেখাতে হবে। মহামারি চলাকালীন প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে পুলিশদের যোগব্যায়ামের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টি বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশেই প্রথম করা হয়েছিল। ঘটনাটির খবর প্রায় বিশ্বের ১ হাজার ১০০টি পত্রিকা এবং ৫০০টি খবরের চ্যানেলে এসেছিল।

অনেকে মনে করে যোগব্যায়াম শুধু মেয়েরাই করে; ব্যাপারটি মোটেও এমন না। যোগব্যায়াম সবার জন্যই। এই চর্চা যে কারও শরীর ও মন দুটোই ভালো রাখতে পারে। শান্তনু বলে চলেন, ‘আমি যখন মাস্টার্সের ছাত্র ছিলাম কথা বলতে ভয় পেতাম। স্যারদের সামনে দাঁড়ালে হাত–পা কাঁপত। সেখান থেকে আমি আজ আপনাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলছি। শারীরিক সুস্থতার দিকে আমরা সবাই মনোযোগ দিই; কিন্তু মানসিক সুস্থতারও তো প্রয়োজন আছে।’

দীর্ঘ সময় অফিসে বসে কাজ করা মানুষদের উদ্দেশে শান্তনু বলেন, ‘কোমরের সমস্যা হলেই দেখবেন, শরীরে একের পর এক রোগ আসবেই। এ ছাড়া বসে থাকতে থাকতে পেট বেড়ে যায়। এটাও বিরাট সমস্যা। সঙ্গে মানসিক অবসাদ তো আছেই। এসব থেকে বাঁচতে ১ ঘণ্টা পরপর চেষ্টা করবেন ৫ মিনিট একটু নড়াচড়া করতে। সুস্থ থাকতে হলে এমনটি করতে হবে।’ পরে অফিসে করার উপযোগী বেশ কয়েকটি যোগব্যায়াম উপস্থাপন করেন শান্তনু। তাঁর সঙ্গে উপস্থিত সাংবাদিকেরাও যোগ দেন।