তলপেটের মেদ থেকে রেহাই পেতে হলে

খাবারের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। মডেল: সুরোছবি: প্রথম আলো

চান বা না চান, তলপেটের মেদ ঠেকানো বড় কঠিন। তবে মেদ হওয়ার পুরোটা আবার নিজের নিয়ন্ত্রণেও থাকে না। হরেক রকম জিন থেকে শুরু করে দুশ্চিন্তার (স্ট্রেস) কারণেও তলপেটে মেদ জমে। তাই মেদের হাত থেকে রেহাই পাওয়াটাও এত সোজা নয়।

তলপেটে মেদ মানে কী? কেবল মধ্যপ্রদেশে মেদ নয়, এই মেদের অবস্থান আরও গভীরে। ত্বক পেরিয়ে নিচে একেবারে অন্ত্রগুলোর চারপাশে পেঁচিয়ে থাকে চর্বির ঘন স্তর। অন্য জায়গার মেদের তুলনায় তলপেটের মেদের চরিত্রও আলাদা, এরা খুব সক্রিয় ও বেজায় চটপটে। রক্তের ভেতর প্রবেশ করে। রক্তের গ্লুকোজ আর কোলেস্টেরলের ওপর পড়ে এই মেদের কুপ্রভাব। তাই আপনার পেটের ঘের কমাতে হবে। পেটের ঘের পুরুষের জন্য ৪০ ইঞ্চি আর নারীদের ৩৫ ইঞ্চির কম হলে ভালো।

বয়স বাড়লে পেটে মেদ জমে বেশি। তখন দেহের বিপাকের হার কমে। কমে ক্যালরির চাহিদাও। নারীর ঋতু বন্ধ হলে পেটে মেদ জমে। ইস্ট্রোজেন আর প্রজেস্টেরন হরমোন কমতে থাকে এদের প্রভাবে, যার কারণে তলপেটে জমে মেদ।

তলপেটে মেদ জমতে দিতে না চাইলে প্রতিদিন জোরে জোরে হাঁটুন
ছবি: সুমন ইউসুফ

বয়সের ফেরে এই মেদ জমলে আর কী করা! তবে অন্য কিছু করতে পারেন, ওজন কমিয়ে রাখতে চেষ্টা করুন। ওজন কমাতে স্বাস্থ্যকর আহার ও ব্যায়ামের বিকল্প নেই। প্রতিদিন জোরে জোরে হাঁটুন, দৌড়ান। অবশ্য শুধু কার্ডিও ব্যায়াম দিয়ে তলপেটের মেদকে দমিয়ে রাখা যাবে না। সে সঙ্গে ভার উত্তোলন করতে হবে। পেশি গঠনের ব্যায়ামও চাই।

আর খাদ্যতালিকায় বেশি করে রাখতে হবে ফল, সবজি, হোল গ্রেইন সালাদ; সাদা চালের পরিবর্তে লাল চাল আর ময়দার পরিবর্তে লাল আটা। চিনি খাবেন খুব কম, পারলে এড়িয়ে চলুন। মিষ্টি, মিষ্টিজাতীয় পানির ক্ষেত্রেও একই কথা। প্রক্রিয়াজাত করা খাবার, ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলুন। প্রাকৃতিক খাবার, ঘরে রান্না—এসব হবে আহারের ধরন। তাহলে প্রদাহ থমকে যাবে আর ক্ষতি হবে কম। যে চর্বি দেহের তাপে ঘন হয়, তাকে বলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট। তাই ঘি ও মাখনের মতো প্রাণিজ চর্বি না খাওয়াই ভালো।

চর্বি কমাতে ঘি না খাওয়া ভালো
ছবি: প্রথম আলো

পরিশ্রমটা হতে হবে ব্যায়ামের মাধ্যমে। ক্রাঞ্চ, ওঠা-বসা আর দড়ি লাফ দিন। মূল কথা হলো, পেশিকে খেলাতে হবে। আর অবশ্যই চাপ কমাবেন, দুশ্চিন্তা রাখা যাবে না। এটা বলা সহজ, কিন্তু দিনযাপনের টানাপোড়েন, বাচ্চাদের স্কুল, রান্না, অফিস, অর্থের সংকট, প্রিয়জনের অসুখ, মৃত্যু—এত সব তো চাইলেই অগ্রাহ্য করা যায় না। আর চাপও তাই আসবেই, তবু একে মোকাবিলা করতে হবে। স্ট্রেস হরমোন করটিসলকে দাবিয়ে রাখতে হবে। আর সেটা দমিয়ে দিতে পারে প্রাণায়াম ও ধ্যানচর্চার মতো অভ্যাস।

আর চাই সুনিদ্রা। রাতে ৮-৯ ঘণ্টা ঘুম হলে ভালো। যাঁরা ৫ ঘণ্টার কম ঘুমান, তাঁদের ওজন বাড়ে, মেদ জমে। আর জিনগত বিষয়টি তো আছেই। যাঁদের ঊরু বা নিতম্বে নয়, মেদ জমে পেটে, তাঁদের বলে আপেল আকৃতি। এমন জিন প্রবণতা যাঁদের, তাঁদের মেদ সরানো সহজ কম্ম নয়। তাই হরমোনের পরীক্ষা করা ভালো। হয়তো টেস্টোস্টেরনের মান বেশি এবং পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম থাকলে মেদ সরানো কঠিন।

পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে
ছবি: প্রথম আলো

তাই স্বাস্থ্যকর আহার আর ব্যায়াম—দুটো একত্রে চালিয়ে যেতে হবে। কম ক্যালরি, কম শর্করা ও কম চিনিযুক্ত খাবার খেতে হবে। খাবারে থাকতে হবে প্রচুর আঁশ।

আর কোমরের ঘের কমলে নিজেই বুঝবেন বুড়ো বয়সেও কেমন ফুরফুরে ভাব। আর তরুণ হলে তো কথাই নেই, মেদহীন শরীর নিয়ে উড়বেন।