‘আইইউবিএটি বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পথিকৃৎ’

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুর রব–এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. জান্নাতুল নাঈম

প্রথম আলো:

যে প্রত্যাশা নিয়ে আইইউবিএটি যাত্রা শুরু করেছিল, ৩৪ বছরে সেটা কতটুকু পূরণ হয়েছে বলে মনে করেন?

অধ্যাপক আব্দুর রব: ১৯৯১ সালে আইইউবিএটি প্রতিষ্ঠিত হয়। জন্মতারিখ হিসেবে এটিই দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রত্যাশা ছিল যে আইইউবিএটি কাজ করবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মডেল হিসেবে, যেটা দেখে অন্যরা অনুপ্রাণিত হবে। এগিয়ে আসবে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে। দেখুন, এখন ১১৪টা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। তাই আমরা বলি, আইইউবিএটি বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পথিকৃৎ। এর প্রতিষ্ঠাতা ড. এম আলিমউল্যা মিয়ানকে শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রদূত বলতে পারেন। কারণ, ওই সময় সার্কভুক্ত কোনো দেশেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। বিকল্প সুযোগ তৈরি করাই ছিল আমাদের মূল উদ্দেশ্য যেন গুণী, মেধাবী শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার সুযোগ পায়।

গবেষণামূলক উচ্চমানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হওয়ার প্রত্যাশাও অনেকটা পূরণ হয়েছে। কিউএস র‍্যাঙ্কিং ২০২৫ অনুযায়ী দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আমরা পঞ্চম। এটা মানসম্মত শিক্ষার স্বীকৃতি। ছাত্র, শিক্ষক, পরীক্ষাগার, গবেষণা ইনস্টিটিউট, আইইউবিএটি ইনোভেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ সেন্টার (আইআইইসি) এবং আরও বেশ কিছু সেন্টার এখানে রয়েছে।

তবে প্রত্যাশা কিন্তু বদলাচ্ছে। প্রতি পাঁচ বছরে আমরা একটা কৌশলগত পরিকল্পনা করি। ২০২১ থেকে ২০২৫, আবার ২০২৬ থেকে ২০৩০। অর্থাৎ প্রত্যাশাগুলো পুনঃস্থাপন করছি।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কৃষি নিয়ে পড়ার সুযোগ কম। আবার এ–সংক্রান্ত গবেষণা কিছুটা ব্যয়বহুলও। আপনারা কীভাবে সমন্বয় করছেন?

অধ্যাপক আব্দুর রব: বাংলাদেশের মেরুদণ্ড এখনো কৃষি। দেখবেন, কোভিডের সময় আমরা কিন্তু কোনো খাদ্যাভাবে পড়িনি। কৃষিই আমাদের বাঁচিয়েছে। তাই কৃষিকে অবশ্যই আরও এগিয়ে নিতে হবে। প্রযুক্তির অগ্রগতিও আমাদের থাকতে হবে। এ জন্যই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের মধ্যে তিনটি বিষয়ই আছে—বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি। ব্যয়বহুল বলেই হয়তো অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় কৃষিতে যায়নি। আমরা গবেষণার জন্য ক্যাম্পাসেই শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট প্লট বরাদ্দ দিই। রাজেন্দ্রপুরে ২০ একরের একটি বড় কৃষি খামার আছে। সেখানেও শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা গবেষণা করেন। ওখানে আমাদের একটা বিশেষ জাতের ধান চাষ হচ্ছে। পেরিনিয়াল রাইস (বহুবর্ষজীবী ধান) নামের এই ধান একবার লাগাবেন, পাঁচ-সাত-দশ বছর আর চাষ করতে হবে না। সার ও নিড়ানি দিলে আবার হতে থাকবে। খরচও খুব কম। আশা করছি, দুই বছরের মধ্যে হয়তো এটাকে আমরা কৃষকদের কাছে পৌঁছানোর পদক্ষেপ নিতে পারব। চীনের ইউনিয়ন ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যৌথভাবে আমরা এই কাজ শুরু করছিলাম। ওরা এখনো প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়। কৃষিতে সঠিক গবেষণার ক্ষেত্রে যা লাগে, সবই আমরা সরবরাহ করি। অরগানিক উপায়ে ফসল উৎপাদন, ক্ষতিকারক ফিড না দিয়ে গবাদি পশু পালনসহ বিভিন্ন গবেষণা চলছে। আমাদের এই কৃষি প্রোগ্রাম বেশ জনপ্রিয়। অনেক মেধাবী ছাত্র পড়তে আসছে, কারণ পাস করার আগেই অনেকে চাকরি পায়, ইন্টার্নশিপে যায়।

প্রথম আলো:

এটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) যুগ। এআই নিয়ে বা শিক্ষার্থীদের মধ্যে গবেষণা ও উদ্ভাবনধর্মী কাজ বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো উদ্যোগ আছে?

অধ্যাপক আব্দুর রব: শিক্ষা ও গবেষণা প্রক্রিয়ায় আমরা এআইয়ের বহুল ব্যবহার করি। এ  বিষয়ে ছাত্র-শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিশেষ সুবিধা আছে। এইআই ভিত্তিক শিক্ষা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। আমদের অভিজ্ঞ শিক্ষকেরা এআই নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন।

শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতেই গড়ে তোলা হয়েছে মিয়ান রিসার্চ ইনস্টিটিউট। এখানে গবেষণার জন্য শিক্ষকদের অর্থসহায়তা দেওয়া হয়। গবেষণাপত্র প্রকাশিত হলে, থাকে পুরস্কারের ব্যবস্থা। ইনস্টিটিউট থেকেই আমরা আন্তর্জাতিক সেমিনার, কর্মশালা, প্রশিক্ষণের আয়োজন করি। আইআইইসিতেও গবেষণা হয়।

আরও পড়ুন
শিক্ষার্থীদের গবেষণায় আগ্রহী করতে নানা কার্যক্রম আছে আইইউবিএটিতে
ছবি: কবির হোসেন
প্রথম আলো:

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে তুলনা করলে আপনার মূল্যায়ন কী হবে?

অধ্যাপক আব্দুর রব: প্রায় প্রতিবছরই পাঠ্যসূচিতে আমরা ছোট কিছু পরিবর্তন আনি। যেমন যুগের সঙ্গে মিলিয়ে সম্ভাবনাময় কোনো কোর্স এলে সেটা যোগ করি। আবার কোনো কোর্সের প্রাসঙ্গিকতা না থাকলে বাদ দিই। প্রতি তিন-চার বছরে বড় পুনর্মূল্যায়ন করি। আমাদের পাঠ্যসূচির সঙ্গে আন্তর্জাতিক পাঠ্যসূচির তুলনা করি। কোথায় পিছিয়ে আছি, সেটা পূরণ করার চেষ্টা করি। তবে তাদের পুরোটা হুবহু অনুসরণ করতে পারি না। কারণ আমাদের আর্থসামাজিক ও প্রযুক্তিগত পরিবেশ একটু আলাদা। এসবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই পরিবর্তন-পরিমার্জন করি। যেমন মাস্টার অব পাবলিক হেলথের একটা কারিকুলাম দাঁড় করাতে আমাদের সাত–আট মাস লেগেছে। এতে কানাডার তিনজন অধ্যাপক, দেশের স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদেরা জড়িত ছিলেন। আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে মিলিয়ে চেষ্টা করছি এগিয়ে যাওয়ার।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম সম্পর্কে জানতে চাই।

অধ্যাপক আব্দুর রব: বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিরি), আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইরি) সঙ্গে আমাদের সমন্বয় রয়েছে। বেশ কয়েকটা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আছে সহযোগিতা চুক্তি। এ ছাড়া দেশের বাইরে আমরা ডজনখানেক সংস্থার সদস্য। অ্যাসোসিয়েশন কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটিজ, অ্যাসোসিয়েশন অব ম্যানেজমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটশনস ইন সাউথ এশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের বোর্ড অব সার্টিফায়েড সেফটি প্রফেশনালস (বিসিএসপি), জিম্যাট ইত্যাদি। বিদেশি প্রায় ১১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক আছে, বর্তমানে চলমান আছে ৩৫টি।

প্রথম আলো:

আইইউবিএটির ওয়েবসাইট খুললে প্রথমেই চোখে পড়ে ‘অ্যান এনভায়রনমেন্ট ডিজাইনড ফর লার্নিং’। একটু ব্যাখ্যা করবেন?

অধ্যাপক আব্দুর রব: শেখার জন্য লাগে অনুকূল পরিবেশ। এর তিনটি দিক আছে—একাডেমিক দিক, আচরণগত শৃঙ্খলা ও পরিবেশ। একজন শিক্ষার্থী যদি প্রয়োজনীয় সুবিধাসহ শান্ত পরিবেশে থাকে, তার জন্য লেখাপড়ায় মনোযোগ দেওয়া সহজ হয়। এটা একাডেমিক দিকটা। কোনো রকম সেশন জট নেই, র‍্যাগিং নেই, উত্ত্যক্ত করা হয় না; এটা হলো শৃঙ্খলার দিক। আরেকটা হচ্ছে পরিবেশ। আপনি ক্যাম্পাসে ঢুকলে ডানদিকে দেখেন সবুজ গাছপালা। সুন্দর একটা পরিবেশ। পাশেই বয়ে চলা নদীর বাতাসও ক্যাম্পাসে আসে।

প্রথম আলো:

আগামী ৫-১০ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান লক্ষ্য কী?

অধ্যাপক আব্দুর রব: ২০৩০ সালের মধ্যে কিউএস র‍্যাঙ্কিংয়ে ৫০০–এর মধ্যে ঢোকা অন্যতম বড় লক্ষ্য। টাইমস হায়ার এডুকেশনের র‍্যাঙ্কিংয়ে থাকার আশাও রাখছি। এটা অর্জনে যে ধরনের গবেষণা প্রয়োজন, শিক্ষার মান বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমরা জোর দিচ্ছি। আমাদের অনেক বিভাগে শতভাগ শিক্ষকের পিএইচডি আছে। কোনোটায় আশি ভাগ, কোনোটায় পঞ্চাশ। এই শিক্ষকদের গড়ে তোলার জন্যও প্রচেষ্টা থাকবে।