আসছে ভর্তি পরীক্ষা; কীভাবে নেবেন বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানের প্রস্তুতি

গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের (খ ইউনিট) ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন সাইফা বিনতে ওয়ারীশ। এখন তিনি আইন বিভাগে পড়ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য তাঁর পরামর্শ।

ভর্তি পরীক্ষার জন্য কৌশলগত প্রস্তুতি খুব জরুরি
মডেল: আবরার ও শাহরিয়া। ছবি: অগ্নিলা আহমেদ

ভর্তি পরীক্ষা যত এগিয়ে আসে, ততই মনে ভর করতে থাকে অজানা এক উদ্বেগ। তাই শেষ সময়ে এসে অনেকেই ঘাবড়ে যান। পুরোনো পড়াগুলোই কীভাবে ঝালাই (রিভিশন) করবেন, বুঝে উঠতে পারেন না। কৌশলগত প্রস্তুতি তাই খুব জরুরি।

আসছে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা হবে। বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান—এই তিন বিষয় অধিকাংশ ভর্তি পরীক্ষাতেই থাকে। তাই আজ এই তিন বিষয়ের প্রস্তুতি সম্পর্কেই আলাপ করব।

শেষ সময়ে কী কী পড়ব

শেষ মুহূর্তের রিভিশনটা এমনভাবে করা উচিত, যেন একদম মৌলিক (বেসিক) বিষয়গুলো বাদ পড়ে না যায়। এ জন্য মূল বইগুলোকে সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলার ক্ষেত্রে যেমন পুরো সিলেবাসের সব গদ্য, পদ্য, নাটক-উপন্যাস মূল বই থেকেই আগে খুব ভালো করে রিভিশন করে নিতে হবে। এরপর যদি কোনো অংশে সমস্যা থাকে, সে ক্ষেত্রে সহায়ক বইয়ের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। বাংলা ব্যাকরণের যে বিষয়গুলো ভর্তি পরীক্ষায় বারবার আসে, সেগুলোর ওপরই জোর দিতে হবে।

আরও পড়ুন

ইংরেজি পড়ার সময় একটা বড় ভুল অনেক শিক্ষার্থীই করেন—মুখস্থ। এ কারণে প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তে এসেও বিষয়টা অনেক কঠিন মনে হয়। ইংরেজি রিভিশন করার ক্ষেত্রেও প্রথমেই ইংরেজির মূল বই, অর্থাৎ ইংলিশ ফর টুডে ভালো করে বুঝে আয়ত্তে আনতে হবে। মনে রাখা জরুরি যে ভর্তি পরীক্ষার ইংরেজি অংশের অনেক প্রশ্নই এই বইয়ের ওপর নির্ভরশীল। ইংরেজি ব্যাকরণ (গ্রামার) ঝালাই করার ক্ষেত্রে নিয়মকানুন মুখস্থের ওপর জোর না দিয়ে বরং এত দিন যে নিয়মগুলো পড়েছেন, সেগুলোই ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করুন। এরপর এ–সংক্রান্ত যেসব প্রশ্ন বিগত বছরের পরীক্ষাগুলোতে এসেছে, সেগুলোর ওপর চোখ বুলিয়ে নিন। গ্রামারের যেসব ব্যতিক্রমী নিয়ম আছে, সেগুলো শেষ মুহূর্তে অবশ্যই রিভিশন করতে হবে।

কোনো বিষয়ে যদি আপনার দুর্বলতা থাকে, সেগুলো বারবার রিভিশন করা খুব জরুরি। ইংরেজির যে বিষয়গুলো আদতেই খানিকটা মুখস্থনির্ভর (যেমন appropriate preposition, group verb, idioms and phrase), এগুলোও নতুন করে শিখতে না যাওয়াই ভালো। আগে যদি পড়া না থাকে, তাহলে শুধু বিগত বছরের প্রশ্নগুলোতে যা এসেছে, সেগুলোর ওপরই জোর দিন। আর আগে থেকে যদি মোটামুটি একটা দখল থাকে, তাহলে যেগুলো কম মনে থাকে বা বেশি কঠিন মনে হয়, সেগুলো বারবার পড়ুন।

সাধারণ জ্ঞান রিভিশন করার সময় শিক্ষার্থীরা সব চেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন। এ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রথমেই রিভিশন করতে হবে সেসব বিষয়, যেগুলো বেশি কঠিন মনে হয়। এরপর দেখতে হবে, কোন বিষয়গুলো থেকে প্রায় প্রতিবছরই প্রশ্ন আসে। বাংলাদেশ বিষয়াবলির মধ্যে যেমন আছে—প্রাচীন বাংলার ইতিহাস, সুলতানি আমল, বাংলাদেশের সংবিধান, সাংবিধানিক সংস্থা, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের পরিচিতি, পাহাড়–পর্বত, নদী–নালা, বাংলাদেশের শিক্ষা, বাংলাদেশের অর্থনীতি, ইত্যাদি। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির মধ্যে আছে জাতিসংঘ, বিভিন্ন মহাদেশ, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা (আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক, অর্থনৈতিক, সামরিক, স্বেচ্ছাসেবী), বিশ্বযুদ্ধ, সংবাদমাধ্যম, গেরিলা ও রাজনৈতিক দল, পৃথিবীর বিখ্যাত হ্রদ-নদী–নালা, পাহাড়–পর্বত, পুরস্কার, সম্মাননা, মুদ্রা-রাজধানী, ইত্যাদি। এ–সংক্রান্ত বিষয়গুলো শেষ সময়ে এসে বেশি গুরুত্বের সঙ্গে রিভিশন দিতে হবে।

সাধারণ জ্ঞানের একটা বড় অংশ আসে সাম্প্রতিক বিষয়াবলি থেকে। এ জন্য বিগত ছয় মাসে (এক বছর হলে আরও ভালো) দেশ-বিদেশে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলির ওপর আরেকবার চোখ বোলাতে হবে। তথ্যগুলো শুধু মুখস্থ করলে দিন শেষে মনে না-ও থাকতে পারে। তাই গল্পের মতো করে কিংবা নিজের সুবিধামতো বিভিন্ন ছন্দে সাজিয়ে মনে রাখলে হয়তো সহজ হবে।

কীভাবে পড়া মনে থাকবে

পড়া মনে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায় বুঝে বুঝে পড়া। না বুঝে মুখস্থ করা পড়া মস্তিষ্কে স্থায়ী হয় না। তাই যে বিষয়ই পড়ুন না কেন, শতভাগ বুঝে পড়লে ভালো মনে থাকবে।

আরও পড়ুন

শেষ সময়ের কিছু অভ্যাস

আসন্ন পরীক্ষার এই সময়ে নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি অনেক বেশি যত্নশীল হতে হবে। অসুস্থতার কারণে পরীক্ষায় অনেকে আশানুরূপ ফল করতে পারেন না। অনেকে আবার স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল না রাখার কারণে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এ সমস্যাগুলো এড়াতে এখন থেকেই দৈনিক ছয় থেকে আট ঘণ্টার ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। সম্ভব হলে প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করতে হবে। দৈনিক ৫ থেকে ১০ মিনিট হাঁটলেও সেটি পড়ালেখায় মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।

পরীক্ষার হলে করণীয়

১. মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।

২. যে প্রশ্নগুলো একদমই ‘চেনা’, সেগুলো সবার আগে উত্তর করে ফেলতে হবে।

৩. এমসিকিউ দাগানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই নেগেটিভ মার্কিংয়ের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। আন্দাজে খুব বেশি দাগানো যাবে না।

৪. কিছু প্রশ্ন একটু দ্বিধায় ফেলবে। সে ক্ষেত্রে উত্তর কোনটা হতে পারে না ভেবে কোনগুলোর উত্তর হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই—সেই অপশনগুলো বাদ দেওয়া যেতে পারে। তাহলে চারটি অপশনের মধ্যে বাছাই করা সহজ হবে।

৫. লিখিত অংশে কোনো একটা লেখা শেষ করতে বেশি সময় নেওয়া যাবে না। সময়মতো গুছিয়ে লেখা শেষ করতে হবে।

ভর্তি পরীক্ষা অনেকটাই মাথা ঠান্ডা রাখার খেলা। এই খেলায় যে পরিকল্পনামাফিক পড়াশোনা করে পরীক্ষার হলে মাথা ঠান্ডা রেখে পরীক্ষা দিতে পারবেন, সে-ই বিজয়ী হবেন।

এ বছর যাঁরা পরীক্ষা দিচ্ছেন, সবার জন্য শুভ কামনা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের (খ ইউনিট) ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন সাইফা বিনতে ওয়ারীশ
ছবি: সাইফার সৌজন্যে
আরও পড়ুন