বাইরের পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশে সুযোগ বাড়ছে না

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার জর্জ মেসন ইউনিভার্সিটিতে রোবটিকসে পিএইচডি করছেন রিদওয়ান হোসেন তালুকদার। পড়ুন তাঁর লেখা।

রোবট নিয়েই গবেষণা করেন রিদওয়ান হোসেন তালুকদার
ছবি: রিদওয়ান হোসেন তালুকদারের সৌজন্যে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশলে পড়ে আমি যুক্তরাষ্ট্রে আসি। জর্জ মেসন ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স শেষ করে এখন রোবোটিকস নিয়ে পিএইচডি করছি। আমাদের ল‍্যাবটার নাম রেইল (রোবোটিক অ‍্যান্টিসিপেটরি ইন্টেলিজেন্স অ‍্যান্ড লার্নিং) গ্রুপ। তিনজন বাংলাদেশি, তিনজন নেপালি, একজন ভুটানি ও দুজন মার্কিনিসহ মোট ৯ জন আমরা এখানে পিএইচডি শিক্ষার্থী আছি। এ ছাড়া প্রায় ১০ জন কলেজ শিক্ষার্থীও আমাদের সঙ্গে আছেন। সেবাদানকারী রোবট কীভাবে কাণ্ডজ্ঞান (কমনসেন্স) কাজে লাগিয়ে আরও সাশ্রয়ী ও কার্যকর পরিকল্পনা করতে পারে, সেটা নিয়েই আমাদের কাজ।

আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, রোবোটিকসের দুনিয়া অনেক বড়। আমি যেমন কম্পিউটারবিজ্ঞান নিয়ে পড়ে রোবোটিকসে কাজ করতে এসেছি, চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়েও কিন্তু রোবোটিকস নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা বা কাজের সুযোগ আছে।

আরও পড়ুন

আধুনিক রোবট নিয়ে গবেষণা কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীতেই শুরু হয়ে গেছে। বিশ্ব অনেকটা এগিয়ে গেলেও আমি বলব বাংলাদেশে আমরা এখনো বেশ পিছিয়েই আছি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন স্বয়ংক্রিয় গাড়ি, বিভিন্ন শিল্প উৎপাদনে স্বয়ংক্রিয় রোবট ও কর্মক্ষেত্রে সেবামূলক রোবটের বহুল ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। অনেক সীমাবদ্ধতা নিয়ে ধীরগতিতে হলেও আমাদের দেশের কিছু শিক্ষক-শিক্ষার্থী রোবট নিয়ে কাজ করছেন।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রোবট গবেষণার বহু ক্ষেত্র আছে। আছে সমস্যা সমাধানের অসংখ্য সুযোগ। বিভিন্ন দুর্যোগে সহায়তার জন‍্য কীভাবে রোবটকে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে শিক্ষার্থীরা ভাবতে পারেন। রোবট কাজে লাগিয়ে আমাদের শিল্পকারখানাগুলোকে কীভাবে আরও আধুনিক করা যায়, সেটিও একটি বড় কাজের ক্ষেত্র।

যাঁরা রোবোটিকস নিয়ে পড়তে আগ্রহী, তাঁদের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন এই বিষয়ে আগ্রহ ও নিষ্ঠা। শুরু করা যেতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। রোবোটিকসের বিভিন্ন শাখা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা অর্জনের এটাই সময়। পড়তে হবে গবেষণাপত্র, রোবট নিয়ে লেখা বিভিন্ন বিজ্ঞানীর প্রবন্ধ, এবং থাকতে হবে নতুন প্রযুক্তিবিষয়ক সচেতনতা। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি, ছোট ছোট প্রকল্প তৈরি করা দিয়েও হাতেখড়ি হতে পারে। দেশি-বিদেশি গবেষকদের সঙ্গে যোগাযোগ, তাঁদের গবেষণা সম্পর্কে জানতে চাওয়াও বিদেশে উচ্চশিক্ষার পথে প্রথম ধাপ হিসেবে সহায়ক। আপনার যদি কোনো গবেষণাপত্র থাকে, তাহলে আবেদনপ্রক্রিয়া সহজ হবে।

বিশ্বজুড়ে এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) এক সুবর্ণ সময় চলছে। ‘মেশিন লার্নিং’–এর বদৌলতে প্রায় সব ক্ষেত্রেই দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তি। কয়েক বছর ধরে দেখছি, যুক্তরাষ্ট্রে রোবট নিয়ে গবেষণা ও এ–সংক্রান্ত চাকরির সুযোগ অনেক বেড়েছে। সম্প্রতি বোস্টন ডাইনামিকসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হিউম‍্যানয়েড (মানুষের মতো) রোবট তৈরি করছে। সেদিন আর দূরে নয়, যেদিন মানুষ ও রোবট একই পরিবেশে সহাবস্থান করবে, একসঙ্গে কাজ করবে। রোবট হয়তো মানুষের জীবনকে আরও সহজ করে তুলবে। এই যাত্রায় সহযাত্রী হওয়ার সম্ভাবনা বাংলাদেশেরও আছে। তবে সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্র এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও উদ‍্যোগী হতে হবে।

আরও পড়ুন