চার মুক্তিযোদ্ধার অসমসাহসিকতা

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বেশ কবছর ধরে বই আকারে প্রকাশ করছে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সংগৃহীত ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী–ভাষ্য’। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতেই তাদের এই উদ্যোগ। জাদুঘরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে শিক্ষার্থীরা পরিচিতজনদের সঙ্গে আলাপ করে একাত্তরের স্মৃতি লিখিতভাবে পাঠায়। ফলে এই কর্মসূচি এক অর্থে বিনিময়। যেখানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বয়ে নিয়ে যাচ্ছে ইতিহাস এবং শিক্ষার্থীরা জোগান দিচ্ছে ইতিহাসের নতুন উপাদান। শিক্ষার্থীদের পাঠানো এসব ভাষ্য থেকে বাছাই ৩১টি কাহিনি বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে প্রকাশ করছে প্রথম আলো

সংগ্রহকারী: মো. আসাদুজ্জামান, দশম শ্রেণি (স্মৃতিকথা সংগ্রহের সময়), চুয়াডাঙ্গা একাডেমি, চুয়াডাঙ্গা

বর্ণনাকারী: মো. আব্দুল মতিন, বাগানপাড়া, চুয়াডাঙ্গা

সংগ্রহকারী ও বর্ণনাকারীর সম্পর্ক: প্রতিবেশী

আমরা চারজন চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলাধীন রেললাইনের ধারে একটি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিই
অলংকরণ: কাইয়ুম চৌধুরী

১৯৭১ সালের ১৯ আগস্ট, আমরা চারজন চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলাধীন রেললাইনের ধারে একটি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিই। প্রথমে আমরা রেললাইন ধরে হাঁটতে থাকি।

আমার কাছে তৎকালীন ইপিআর বাহিনীর একটি দুরবিন ছিল। সেই দুরবিন দিয়ে দেখলাম, রেললাইনের একটু দূরে কিছু সৈন্য। ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না, তারা কারা।

আরও পড়ুন

প্রথমে ভাবলাম, সৈন্যরা হয়তো ইপিআর বাহিনীর। কিন্তু ভালো করে খেয়াল করে বুঝলাম, তারা পাকিস্তানি সেনা। তাদের সংখ্যা ১০-১৫ জনের মতো হবে।

সঙ্গীদের নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাই। আমাদের চারজনের কাছে ছিল চারটি অস্ত্র। দুজন করে রেললাইনের দুই পাশে নেমে গেলাম। ধীরে ধীরে পাকিস্তানি সেনাদের প্রায় কাছে চলে যাই।

পাকিস্তানি সেনারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই গুলি চালাই। আমাদের চারজনের গুলিতে কিছু সেনা মারা যায়। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই পাকিস্তানি সেনারা আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে লাগল।

আরও পড়ুন

অনেকক্ষণ দুই পক্ষ থেকে গোলাগুলি চলার পরে সঙ্গীদের নিয়ে পিছু হটতে বাধ্য হই। কারণ, আমাদের গুলি ফুরিয়ে যাচ্ছিল আর পাকিস্তানি সেনাদের গুলিবর্ষণ কমছিল না।

এই অপারেশনে রেললাইনের লোহায় আমার পায়ের অনেকখানি কেটে যায়। সে অবস্থায়ও অপারেশন পরিচালনা করি এবং শেষমেশ ৮-৯ জন পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করি।

আরও পড়ুন