রাতের আলো যে কারণে হৃদ্রোগের নীরব ঝুঁকি
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের প্রকাশিত এক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে অতিরিক্ত আলোয় থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে হৃদ্রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে বেশি। এই গবেষণায় প্রায় ৮৯ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। অংশগ্রহণকারীরা এক সপ্তাহ হাতে একটি সেন্সরযুক্ত ডিভাইস পরে ছিলেন, যা রাতে তাঁরা কতটা আলোয় থাকছেন, তা রেকর্ড করেছিল। পরবর্তী ৯-১০ বছর এসব ব্যক্তির স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করা হয়। ফল ছিল চোখ খুলে দেওয়ার মতো।
আমরা অনেকেই রাতে ঘুমানোর সময় ঘরের আলো জ্বালিয়ে রাখি, টিভি চালিয়ে রাখি, কিংবা মুঠোফোন হাতে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। আধুনিক জীবনে এসবই যেন স্বাভাবিক। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এসব নিরীহ অভ্যাসই ভবিষ্যতে হৃদ্রোগের বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
যাঁরা রাতে বেশি আলোতে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে ঝুঁকি বেড়েছে—
• করোনারি হার্ট ডিজিজ
• স্ট্রোক
• অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন
• হার্ট অ্যাটাক
• হার্ট বিকল
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা ঘুমের সময়কাল হিসাবের বাইরে রাখার পরও এই ঝুঁকি থেকে গেছে।
আলো ও শরীরের জৈব ঘড়ি
আমাদের শরীরের ভেতরে একটি স্বাভাবিক জৈব ঘড়ি আছে, যা ঠিক করে—
• কখন ঘুমাবেন
• কখন জাগবেন
• রক্তচাপ, হৃৎস্পন্দন ও হরমোনের ওঠানামা
রাতে আলো এই ঘড়ির ছন্দে বিঘ্ন ঘটায়। বিশেষ করে আলো মেলাটোনিন নামের ঘুমের হরমোন কমিয়ে দেয়। মেলাটোনিন শুধু ঘুমের জন্যই নয়, হৃদ্যন্ত্র ও রক্তনালির সুরক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ফলে দীর্ঘদিন ধরে রাতের আলোয় থাকার অভ্যাস—
• রক্তচাপ বাড়াতে পারে
• শরীরে প্রদাহ বাড়ায়
• হৃদ্যন্ত্রের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে
শহুরে জীবনে ঝুঁকি আরও বেশি
গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা শহরের উজ্জ্বল আলোকিত এলাকায় থাকেন, তাঁদের হৃদ্রোগের ঝুঁকি ৩৫-৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি হতে পারে। জানালা গলে আসা রাস্তার আলো, বিলবোর্ড, গাড়ির হেডলাইট—সব মিলিয়ে শহুরে রাত দিনের মতোই উজ্জ্বল থাকে।
কীভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন
এই ঝুঁকি অনেকটাই আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
ঘুমানোর সময় ঘর যতটা সম্ভব অন্ধকার রাখুন।
টিভি বা মুঠোফোন চালু রেখে ঘুমাবেন না।
প্রয়োজনে হালকা লাল বা উষ্ণ আলো ব্যবহার করুন।
মুঠোফোন ব্যবহারের পর অন্তত ৩০ মিনিট অন্ধকারে থাকুন।
জানালায় মোটা পর্দা বা ব্ল্যাকআউট পর্দা ব্যবহার করুন।
রাতের আলো শুধু ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় না, এটি নীরবে হৃদ্যন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করতে পারে। আধুনিক জীবনে আলো থেকে পুরোপুরি দূরে থাকা সম্ভব নয়, কিন্তু সচেতন হলে ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়।
ডা. সাইফ হোসেন খান, সহকারী অধ্যাপক, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধানমন্ডি, ঢাকা